একে ঘন কুয়াশায় গাছ ঠিক মতো বাড়ছে না, তার উপরে ধসা রোগ দেখা দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে আলু চাষে। এমনই অভিযোগ তুলেছেন বর্ধমানের নানা এলাকার চাষিরা। চাষিদের এমন অভিযোগ পেয়ে জেলার ‘আলু এলাকা’ হিসেবে পরিচিত মেমারিতে গিয়ে সম্প্রতি খেত পরিদর্শন করেছেন জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা শ্যামল দত্ত। তিনি বলেন, “কুয়াশার কারণেই বিক্ষিপ্ত ভাবে আলু গাছে ধসা রোগ দেখা দিয়েছে। চাষিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর বর্ধমান জেলায় ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। শীতের শুরুতেই ঘন কুয়াশার কারণে আলু গাছে ধসা রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকার চাষিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। চাষিরা জানিয়েছেন, আলু গাছের পাতার কোণের দিকে জলে ভেজার মতো কালো রঙের ছোপ দাগ দেখা যাচ্ছে। তার কিছু পরেই দেখা যাচ্ছে, গোটা গাছে একই রকম দাগ ছড়িয়ে পড়েছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে গাছে কালি ছেটানো হয়েছে। পরবর্তী কালে গাছের কাণ্ড ও পাতা পচে ঝুলে পড়ছে। কাটোয়া মহকুমা কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে এই ধরনের রোগের প্রকোপ বাড়ে। তাঁদের দাবি, এই রোগ সংক্রামক। কোনও খেতে একটি গাছে এই রোগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চাষিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে পুরো খেত আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। |
খেতের পরিচর্যা। কাটোয়ায় অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
কাটোয়ার তারাশঙ্কর সাঁতরা, মঙ্গলকোটের গণেশ ঘোষেরা বলেন, “কুয়াশার জন্য আলু গাছে রোগ দেখা দিচ্ছে। দুপুরের দিকে আবার রোদের তেজ থাকছে, যা গাছের বৃদ্ধির পক্ষে ক্ষতিকারক।” এলাকার চাষি মঞ্জুর মল্লিক, আসরফ শেখ, কৃষ্ণকুমার মুখোপাধ্যায়েরা জানান, বছর দুয়েক আগে এই রকম আবহাওয়ার জন্য আলু চাষের শুরুর দিকে ও আলু তোলার সময়ে দু’বার ধসা রোগ হয়েছিল। সে বার মাঠের পর মাঠ আলু গাছ শুকিয়ে গিয়েছিল। আলুর পুষ্টিও হয়নি। কৃষি দফতর জানায়, সে বার শুরুর সময়ে নাবি ধসা এবং আলু তোলার মুখে জলদি ধসা রোগের আক্রমণ হয়েছিল। জলদি ধসা রোগে আক্রান্ত হলে আলু গাছের পাতায় বাদামি রঙের চাকা চাকা দাগ হয়। তার পরে পুরো পাতায় সে দাগ ছড়িয়ে পড়ে। শেষে পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে।
মঙ্গলকোটের একটি কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালন সমিতির সদস্য পরেশ ঘোষের দাবি, অনেক চাষি আলু চাষের জন্য তাঁদের কাছে ঋণ নিয়েছেন। আবহাওয়ার জন্য তাঁরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ঋণশোধ না করতে পারার ব্যাপারে আশঙ্কার কথা জানিয়ে এখন থেকেই জানাতে শুরু করেছেন তাঁরা। ওই এলাকারই অন্য একটি কৃষি উন্নয়ন সমিতির সদস্য তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “আবহাওয়া এ রকম থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কৃষি দফতরের উচিত এখনই মাঠে নেমে চাষিদের গাছ বাঁচানোর ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া।” কৃষি দফতরের পরামর্শ, আলু গাছের বয়স চার থেকে ছয় সপ্তাহ হলে রোগ প্রতিষেধক হিসেবে প্রথমে প্রতি লিটার জলে চার গ্রাম কপার অক্সি-ক্লোরাইড দিয়ে স্প্রে করতে হবে। তার পরে প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম কপার হাইড্রো-অক্সাইড অথবা আড়াই গ্রাম ম্যাঙ্কোজেব মিশিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও কার্বেন্ডাজিম ও ম্যাঙ্কোজেব দু’গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। বিঘা প্রতি আশি থেকে একশো কুড়ি লিটার মিশ্রণ ব্যবহার করতে হবে। গাছের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভাল করে ওষুধ দিতে হবে। পাতার তলার দিকে এবং মাটি সংলগ্ন জায়গায় যাতে ওষুধ পৌঁছয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বিকেলের দিকে স্প্রে করা বাঞ্ছনীয় বলে জানিয়েছেন কৃষি-কর্তারা। |