|
|
|
|
টালি আড্ডা
কোথায় আড্ডা মারেন টালিগঞ্জের তারকারা? কী নিয়ে চলে তর্ক-বিতর্ক?
কার চাই ব্ল্যাক কফি, কার শিঙাড়া? আড্ডা মারতে মারতে জানালেন ইন্দ্রনীল রায় |
ফোনের এক প্রান্তে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, “মৈনাক, কোথায় তুই? একটু স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা ছিল।”
মৈনাক তখন হিন্দুস্থান রোড-এর ‘বারিস্তা’তে তাঁর পরের ছবির কস্টিউম নিয়ে মিটিং করছেন। তার মধ্যেই মৈনাক কল রিসিভ করে বললেন, “ওকে ড্যুড, আমি এই মিটিং-টা সেরেই তাহলে লেক রোড ‘সিসিডি’তে চলে আসছি। কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়) আর অনুপম (রায়) কেও ডেকে নে।”
“ওকে বস,” বলেন সৃজিত। “কিন্তু ওরা দু’জনে এখন ‘বারিস্তা’তে টোনিদার সঙ্গে। দেখছি আসতে পারবে কি না।”
পুরো কথোপকথনটাই একশো ভাগ খাঁটি। টলিউডে কান পাতলেই প্রায় প্রত্যেক দিন এরকম অসংখ্য বাক্যালাপ শুনতে পাবেন। আড্ডাবাজ বলে এমনিতেই বদনাম বাঙালির। কিন্তু টলিউড যেন আরও এক কাঠি ওপরে।
তারা কারণে-অকারণে, দিনে-রাতে, বর্ষা-শীতে আড্ডা মারতে যে বড্ড ভালবাসেন। তাই সৃজিত আর মৈনাকের ওপরের কথোপকথনের নামগুলো শুধু বদলে যায়।
তা কোথায় আড্ডা মারে টালিগঞ্জ?
খুব বেশি জায়গায় কিন্তু বিস্তৃত নয় টালিগঞ্জের আড্ডা।
প্রায় প্রত্যেক দিনই এদের দেখতে পাবেন লেক রোডের ‘সিসিডি’ বা হিন্দুস্থান রোডের ‘বারিস্তা’তে। এ ছাড়াও আড্ডা হয় পূর্ণদাস রোডের ‘ওয়াইজ আউল’য়ে, পার্ক স্ট্রিটের ‘ফ্লুরিজ’য়ে বা ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের লেক গার্ডেন্সের অফিসে। এ ছাড়াও প্রায় রোজই আড্ডা বসে প্রিয়া সিনেমা হলের মালিক অরিজিৎ দত্তর একতলার ঘরে।
“হিন্দুস্থান রোডের ‘বারিস্তা’ তো প্রায় আমার নিজের বাড়ির এক্সটেনশন”, বলছিলেন ‘মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর’য়ের পরিচালক মৈনাক যাঁকে প্রায় প্রত্যেক সন্ধেবেলায় দেখতে পাবেন ওখানে। বিরাট আড্ডা বসে লেক রোড ‘সিসিডি’তে। ‘কহানি’র পরিচালক সুজয় ঘোষ কলকাতায় এলে আড্ডা মারেন এখানে।
একই রকম আড্ডাবাজ সৃজিত, রুদ্রনীলরাও। সৃজিত, স্বস্তিকা, আবিরদের আড্ডা মারার জায়গা ‘ওয়াইজ আউল’।
“যেদিন কাজ থাকে না আমরা তো এখানেই আসি। এমনকী দু’টো কাজের ফাঁকের সময়ও এখানে এসে আড্ডা মেরে যাই,” বলছিলেন স্বস্তিকা।
সৃজিত ও তাঁর টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে যাবতীয় মিটিং করেন এখানে বসে। আর আড্ডা মারার সময় সৃজিতের প্রিয় ‘বেকন স্যান্ডউইচ’।
অঞ্জন দত্ত অবশ্য তাঁর যাবতীয় মিটিং করেন পার্ক স্ট্রিটের ‘ফ্লুরিজ’য়ে।
তাঁর ‘সেই’ সাক্ষাৎকারের পর যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল সেগুলো ‘ফ্লুরিজ’য়ে আড্ডা মেরেই ঠিক করলেন অঞ্জন দত্ত।
“হ্যাঁ, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু ‘ফ্লুরিজ’য়ের ‘হ্যাম স্যান্ডউইচ’ খেয়েই আমরা তা মিটিয়ে নিলাম,” বলছিলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।
|
গল্ফ গ্রিন সিসিডি: এখানে নিয়মিত হাজিরা
ইন্দ্রদীপ
দাশগুপ্ত, রুদ্রনীল, অরুণাভ, পদ্মনাভ দাশগুপ্তর |
ওয়াইজ আউল: সৃজিত, স্বস্তিকা,
আবির-দের
আড্ডা হয় এখানেই |
ফ্লুরিজ: এখানে আড্ডা জমে পরমব্রত,
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত-দের |
হিন্দুস্থান রোড বারিস্তা: পার্নো,
মৈনাকদের
প্রিয় হ্যাং আউট |
|
রুদ্রনীলের আবার আড্ডার সঙ্গে অম্ল-মধুর সম্পর্ক। গল্ফ গ্রিনের যে কাফেতে রুদ্র আজও আড্ডা মারেন, সেখান থেকে আড্ডা মেরে বেরোনোর সময়ই ওঁর সেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
এ ছাড়াও একটা বড় আড্ডা বসে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের লেক গার্ডেন্স-এর অফিসে। “আমাদের অফিসে শুধু সিনেমা নিয়ে আলোচনা হয়। এখানে কোনও পরনিন্দা পরচর্চা নেই,” সে দিন আড্ডা মারতে মারতেই বলছিলেন শ্রীকান্ত মোহতা। এখানে অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারে নাম দেখতে পাবেন মণি, শ্রীকান্ত, নিসপাল, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, বীরসা, রবিরঞ্জন মৈত্র, রাজ, রাজা চন্দ, দেব, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী-র।
শুধু তাই নয়, এ ছাড়াও কিছু অন্য জায়গায় আড্ডা বসে টলিউডের।
রানা সরকার যেমন আড্ডা মারেন লেক ক্লাবে, তেমনি প্রযোজক কৌস্তুভ রায়ের আড্ডা মারার প্রিয় জায়গা ‘ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাব’। |
এই মুহূর্তে আড্ডার হট টপিক |
• কোয়েল মল্লিক বিয়েতে কাদের নেমন্তন্ন করছেন না
• প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় হঠাৎ এত লো-প্রোফাইল থাকছেন কেন
• রাজ চক্রবর্তী কি মিমির সঙ্গে প্রেম করছেন
• পরমব্রত আর রুদ্রনীলের কি কোনও মনোমালিন্য হয়েছে
• এ বছর জিৎ কি ‘রিলায়্যান্স’ ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে ছবি করবেন না
• হঠাৎ বাংলা ছবির বাজারে মন্দা কেন
• প্রযোজক জয় গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর সব ছবির আগে উধাও হয়ে যান কেন
• পার্নো মিত্র হঠাৎ কেন এত অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছেন তাঁর প্রযোজকদের
• লাহাবাড়ির এক বারান্দায় আর কত সিনেমার শ্যুটিং করবেন অঞ্জন দত্ত
• দেব আর শুভশ্রী কি আবার একসঙ্গে
• টোনি তাঁর পরের ছবিতে মুম্বইয়ের কোন হিরোইনকে কাস্ট করবেন
• ‘ভেঙ্কটেশ ফিল্মস’য়ের অফিসে তাঁর ছবির সম্পাদনার কাজ না থাকলেও কেন এত সময় কাটান বীরসা দাশগুপ্ত
• রানা সরকার হঠাৎ ছবি করা বন্ধ করে দিলেন কেন |
|
এই আড্ডায় পাবেন কাঞ্চন মল্লিক, যিশু সেনগুপ্তদের।
তা আড্ডা তো হল। সঙ্গে খাওয়াদাওয়া কী হয়?
খাওয়াদাওয়া নিয়ে অবশ্য নায়িকা ছাড়া কেউ খুব যে ক্যালোরি
সচেতন তা কিন্তু নয়। যদিও দেব, জিৎ আড্ডা মারলে ভাজা একেবারেই খান না। ওঁদের জন্য কাবাব কিংবা ঝালমুড়ি।
এ ছাড়া বাকিদের জন্য রোল, ফিশ ফ্রাই, চিকেন স্যান্ডউইচ, প্যাটিস, ক্রিম রোল, মোমো, ফ্রেশ লাইম আর কফি দিয়েই চলে আড্ডা। এ ছাড়াও প্রায় প্রত্যেক দিন সন্ধেবেলা আড্ডা বসে টালিগঞ্জের বিভিন্ন স্টুডিওয়। সেখানে চা-মুড়ি, আলুর চপ নিয়ে কলাকুশলীদের পাশে বসেই আড্ডা মারেন প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণারা।
হয়তো স্টুডিওর সেই আড্ডায় গালভরা স্যান্ডউইচ আর ‘টাবাস্কো সস’ নেই, কিন্তু আন্তরিকতায় সেই আড্ডা কোনও অংশে কম নয় কফি শপের আড্ডার থেকে। |
আড্ডায় যা চাই |
• প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়: শুকনো মুড়ি, কালো চা
• অঞ্জন দত্ত: ব্ল্যাক কফি, চিজ অমলেট
• সুজয় ঘোষ: আইস টি
• শ্রাবন্তী: ফুচকা, আলু-কাবলি
• অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী: মহারানির কচুরি আর জিলিপি
• স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়: চিলি চিজ টোস্ট, হ্যাম স্যান্ডউইচ
• রাইমা সেন: চা, শিঙাড়া |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল ও কৌশিক সরকার |
|
|
|
|
|