কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী • কলকাতা |
নিয়োগপত্রের ফাইল তৈরি। যে কোনও দিন সফল পরীক্ষার্থীদের কাছে তা পাঠানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু দফতরে নতুন মন্ত্রী এসেছেন। তিনি সব ফাইল দেখতে চান। তাই নিয়োগের পুরনো ফাইলও তাঁর কাছে পাঠাতে হবে। অতএব আরও অপেক্ষা। রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের এমন ব্যাখ্যায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে সফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে।
নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বাম আমলে। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, বাম জমানায় রাজ্যের বিভিন্ন মাদ্রাসায় গ্রন্থাগারিক, করণিক এবং চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নিয়েছিল মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। ফল বেরোলে দেখা যায়, গ্রুপ ডি পদে মূল্যায়নে বিভ্রান্তি রয়েছে। কমিশনের সভাপতি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মূল্যায়ন নিয়ে তাঁর সন্দেহের কথা জানিয়ে দফতরের মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লেখেন। তাঁর কথায়, “চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের পরীক্ষায় কিছু গরমিল ধরা পড়েছে।
ওই পদের জন্য ২০১০ সালের মার্চে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আবেদন করেন এক লক্ষ ৮৭ হাজার ৯১ প্রার্থী। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর আবেদনপত্র স্ক্রুটিনি করে পরীক্ষায় বসার জন্য ২৬ হাজারের কিছু বেশি প্রার্থীকে মনোনীত করা হয়। পরীক্ষা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই সময় কমিশনের সভাপতি বদল হয়। গঠিত হয় নতুন কমিশন। তারা মতামত দেয়, আবেদনপত্র স্ক্রুটিনিতেই গলদ ছিল। অন্তত ৭৬ হাজার ৬৭৪ জনকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া উচিত ছিল। ফের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে নতুন কমিশন।
করণিক ও গ্রন্থাগারিক পদে উত্তীর্ণদের নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্যও সুপারিশ করেছিল কমিশন। ওই দুই পদে সফল প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়ার ফাইল তৈরি হয়। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের নতুন প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লার কাছে নিয়োগের যাবতীয় ফাইল পাঠাতে শুরু করেছে কমিশন। মন্ত্রীর ফাইল দেখা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত ওই দুই পদে নিয়োগপত্র দেওয়ার কাজ শুরুই করা যাবে না। একই ভাবে মন্ত্রীর নির্দেশের পরেই ঠিক হবে চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে নিয়োগের ভাগ্য। কমিশনের সভাপতি সাফাই দিয়েছেন, “নানা কারণে কিছু দেরি হয়েছে। আশা করি, শীঘ্রই করণিক ও গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগপত্র দেওয়া শুরু করা যাবে।”
গ্রন্থাগারিক পদে পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগের জন্য মনোনীত প্রার্থীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের অফিসে গিয়েও ঠিক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসের কর্মীরা বলছেন, এ ব্যাপারে তাঁদের কাছে কোনও নির্দেশ নেই। তাই কবে কী হবে, সেটা তাঁরা বলতে পারবেন না। দফতর সূত্রের খবর, নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া বাম আমলে শুরু হয়েছিল। তাই নতুন সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়েই প্রথম দিকে সংশয় ছিল। পরে ঠিক হয়, যাঁরা পরীক্ষায় যোগ্যতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ করা হবে। তার মধ্যেই আবার দফতরের মন্ত্রী বদল হয়েছে। ফলে ওই সব পদে নিয়োগের ফাইল এখন নতুন করে কমিশন, দফতর ও মন্ত্রীর কাছে যাবে। সেই কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। সব হাত ঘুরে ওই ফাইল ছাড়পত্র না-পাওয়া পর্যন্ত নিয়োগপত্র দেওয়ার কাজ শুরুই করা যাবে না। তাই উত্তীর্ণদের নিয়োগপত্র পেতে আরও কত দিন লাগবে, কেউ জানে না। |