রাজ্যের কোষাগার শূন্য। তাই চেয়েও পর্যাপ্ত উন্নয়ন করতে পারছেন না তিনি। শনিবার যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই মঞ্চ থেকেই তিনি ঘোষণা করলেন প্রশাসনিক ব্যয়ে আন্তর্জাতিক ছাত্র-যুব উৎসবে সামিল করতে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে জঙ্গলমহলের প্রায় ২৫ হাজার (আসল সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার) যুবক-যুবতীকে। প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, শুধু এ জন্য রাজকোষ থেকে ব্যয় হবে প্রায় সওয়া কোটি টাকা।
এ ভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আসলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় প্রচার চলছে বলে অভিযোগ করছে সিপিএম। এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “চার দিকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিবেক উৎসব চলছে। বিবেকানন্দের পাশে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। এ সব কি ঠিক হচ্ছে?”
গত বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে শুরু হয়েছিল ‘জঙ্গলমহল বিবেক ছাত্র-যুব উৎসব’। শনিবার তারই সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন, “প্রশাসনিক খরচে ২৫ হাজার জনকে সল্টলেক স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ছাত্র-যুব উৎসবে নিয়ে যাওয়া হবে।”
আগামী ১২ জানুয়ারি বিবেকানন্দের জন্মদিনে ওই উৎসব হওয়ার কথা। পুলিশ সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলের চারটি জেলা (মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলা, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া) থেকে যে সব যুবক-যুবতী পুলিশ আয়োজিত ফুটবল এবং তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে কলকাতার উৎসবে আনা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে যাবেন ৪,১৮৮ জন, ঝাড়গ্রাম থেকে ৭,৭০০ জন, বাঁকুড়া থেকে ৫,৯০০ জন এবং পুরুলিয়া থেকে যাবেন ৯,১১৯ জন যুবক-যুবতী। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ২৬,৯০৭। জঙ্গলমহলের এই যুবক-যুবতীদের ১১ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট জেলা সদরে নিয়ে আসা হবে। রাতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, পর দিন কলকাতায় নিয়ে যাওয়া, অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে বাড়িতে ফেরানো যাবতীয় দায়িত্ব পুলিশের। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার দাবি, এ সব করতে জেলাপিছু খরচ হবে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ। অর্থাৎ, মোট খরচ প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ। জেলাওয়াড়ি সম্ভাব্য খরচের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠানো হয়ে গিয়েছে।
পুলিশ আয়োজিত ফুটবল প্রতিযোগিতায় পুরুষ ও মহিলা বিভাগে জঙ্গলমহলের যে ১,৫৩১টি দল যোগ দিয়েছে, এ দিনই তাদের দলপিছু ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট খরচ ৩ কোটি ৮২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায় যোগদানকারী ৪,২৩০ জনের প্রত্যেককেও এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। মোট খরচ, ৪২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
তা ছাড়া, সব প্রতিযোগীকে খেলার পোশাক, চ্যাম্পিয়নকে মোটর সাইকেলও দেওয়া হয়েছে। তার আলাদা খরচ। এবং তারও বাইরে রয়েছে জঙ্গলমহল ছাত্র-যুব উৎসবের অন্য আয়োজনের ব্যয়। যার মধ্যে মণ্ডপ, প্রচার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদানকারী শিল্পীদের সাম্মানিক ও যাতায়াতের খরচ। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই সব ব্যয় ধরা হয়েছে সাধারণ খাতের মধ্যে। ব্যয় হয়েছে দেড় কোটি টাকা।
জঙ্গলমহলের ছাত্র-যুবদের কলকাতায় আনার খরচ কোন খাত থেকে করা হবে, সে প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “টাকাটা সমস্যা হবে না। সরকার জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরাতে এই সব পদক্ষেপ করছে। জেলা পুলিশ আমাদের প্রস্তাবিত খরচ জানালে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।”
প্রশাসনের একাধিক কর্তার বক্তব্য, ফুটবল দল এবং তিরন্দাজি প্রতিযোগিতায় যোগদানকারীদের অর্থসাহায্য করে জঙ্গলমহলের ছাত্র-যুবদের কল্যাণের জন্য ইতিমধ্যেই সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাজকোষের যখন হাঁড়ির হাল, তখন ২৭ হাজার জনকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কোটি টাকার উপরে খরচ করা কতটা যুক্তিসঙ্গত, সে প্রশ্নও রেখেছেন তাঁরা।
এক ধাপ এগিয়ে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেছেন, “সরকারি অর্থের ভয়ঙ্কর অপচয় হচ্ছে। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) স্বেচ্ছাচার চালাচ্ছেন।
যেটুকু উন্নয়ন হচ্ছিল, তা-ও সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে।” পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার জবাব, “সরকারি অর্থ অপচয়ের অভিযোগ সিপিএমের মুখে মানায় না। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এত বড় একটা উৎসব হচ্ছে! এটা জঙ্গলমহলে সামাজিক উন্নয়নের অঙ্গ। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেই কুৎসা করছে সিপিএম।” |