|
|
|
|
ছাত্র-যুব উৎসব |
পুলিশের দখলে ক্লাসঘর, তিন দিন ছুটি চার স্কুলে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
এক সময়ে জঙ্গলমহলে একের পর এক স্কুল দখল করে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প করা নিয়ে তুমুল আলোড়ন হয়েছিল। শিকেয় উঠেছিল পড়াশোনা। সেই পশ্চিম মেদিনীপুরেই পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পের জন্য চার স্কুলে টানা তিন দিন পঠনপাঠন বন্ধ রইল। উপলক্ষ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ‘জঙ্গলমহল বিবেক ছাত্র-যুব উৎসব’।
গত বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে এই উৎসবের সূচনা হয়। শনিবার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকী পাশের জেলা থেকেও নিয়ে আসা হয়েছিল পুলিশদের। রাখা হয়েছিল মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল (বালক ও বালিকা), বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ (বালক), নারায়ণ বিদ্যাভবন (বালক) এই চার স্কুলে। পুলিশকর্মীরা ক্লাসঘরের দখল নেওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকেই সেগুলিতে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। গত বুধবার থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। ফলে, চার স্কুলে প্রথম দিন ক্লাসের পরই তিন দিন ছুটি হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীদের হাতে বুকলিস্ট ধরিয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, সোমবার থেকে ফের ক্লাস হবে। |
|
বন্ধ মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল। কিন্তু দরজা খুলে ছাত্র-যুব
উৎসবে
আসা জনতাকে জলের পাউচ বিলি করা হল শনিবার। |
প্রশাসন অবশ্য স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেয়নি। শুধু জানানো হয়েছিল, ক্লাসঘর দরকার। নারায়ণ বিদ্যাভবনের (বালক) প্রধান শিক্ষক চঞ্চল মাসান্ত বলেন, “পুলিশের জন্য যদি ক্লাসঘর ছাড়তে হয়, তা হলে আর পঠনপাঠন হবে কোথায়? তাই এই ক’দিন স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) প্রধান শিক্ষক দিলীপ দাসেরও বক্তব্য, “বৃহস্পতিবার থেকে স্কুল বন্ধ রাখা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।” বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের (বালক) পরিচালন সমিতির সম্পাদক মৃণাল চৌধুরী জানান, প্রশাসন এই ক’দিনের জন্য ক্লাসঘর ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করেছিল। তাই স্কুল বন্ধ। এর পরেও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় অবশ্য দাবি করেন, স্কুল বন্ধ থাকার কথা তাঁরা জানা ছিল না। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীও বলেন, “পুলিশদের থাকার জন্য কোনও স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ রয়েছে বলে জানা নেই।” শনিবার অবশ্য দেখা যায়, ছাত্রদের জন্য বন্ধ মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান ফটক খুলে পুলিশের গাড়ি থেকে ছাত্র-যুব উৎসবে সামিল
হওয়া জনতাকে জলের পাউচ বিলি করা হচ্ছে। |
|
‘পরিবর্তনের পর’। ছাত্র যুব উৎসবের মঞ্চে এই নামেই এক যাত্রাপালা। শনিবার মেদিনীপুরে। |
ছাত্র-যুব উৎসবের জন্য স্কুল দখল করে পুলিশকর্মীদের রাখার প্রতিবাদে সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অশোক ঘোষের মতে, “অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প তো অন্যত্রও করা যেত। তা হলে এ ভাবে স্কুল বন্ধ রাখতে হত না।” অন্যত্র ব্যবস্থা করা হলে ভাল হত বলে মানছে
তৃণমূল প্রভাবিত ‘স্যাগেশাস টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’ও। সংগঠনের জেলা সম্পাদক মধুসূদন গাঁতাইত নিজে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালিকা) পরিচালন সমিতির সম্পাদক। তাঁর বক্তব্য, “অন্যত্র
অস্থায়ী ক্যাম্পের ব্যবস্থা করলে ভাল হত। পুলিশ লাইনেও ব্যবস্থা করা যেতে পারত। তা হলে পঠনপাঠন ব্যাহত হত না।”
|
—নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|