শাপমুক্তি স্পেশ্যালিস্টের সাইনবোর্ডটা এ বার নির্দ্বিধায় তাঁর নামের পাশে ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আপত্তি তোলার কোনও জায়গা বোধহয় আর নেই!
তেত্রিশ বছর পরে মোহনবাগানের পাঁচের শাপমুক্তি ঘটেছিল এডে চিডির হ্যাটট্রিক-সহ চার গোলে। শনিবার গোয়ায় সালগাওকরকে বিধ্বস্ত করে আই লিগে বারো বছর পরে শাপমুক্তি ঘটল ইস্টবেঙ্গলের। সৌজন্যে ফের সেই শান্ত স্বভাবের নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের হ্যাটট্রিক। তবু চিডি বরাবরের মতোই নির্বিকার। মারগাও থেকে থেকে ফোনে বললেন, “গোল করা স্ট্রাইকারের কাজ। জানি না কী রেকর্ড হল, কী ভাঙল। আমি শুধু আমার কাজ করেছি। আমার কাছে তিন পয়েন্টই সবচেয়ে মূল্যবান। বিশেষ করে যখন চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে রয়েছি।” সালগাওকরকে হারিয়ে আই লিগে ডেম্পোকে টপকে তিনে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল (১৩ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট)। শীর্ষে চার্চিল (১২ ম্যাচে ২৮) এবং দুইয়ে পুণে (১২ ম্যাচে ২৮)। |
সালগাওকরকে বধ করেই অবশ্য থেমে যেতে চাইছেন না চিডি। বরং তাঁর লক্ষ্য এখন আরও বিস্ফোরক। বিধ্বংসী। “একটা গোল পাওয়ার জন্য খুব পরিশ্রম করছিলাম। এখন যখন একবার পেয়ে গিয়েছি, এটাকে অভ্যাসের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে চাই। যে মাপের ফুটবল এখন আমরা খেলছি, আশা করছি ওএনজিসি ম্যাচেও বড় ব্যবধানে জিতব।” বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হল না যে গোয়া সফর শেষ হতে না হতেই, ‘দিল্লি চলো’-র ভাবনায় বুদ চিডি।
আঁতে ঘা লাগলে যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে ইস্টবেঙ্গল, সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেল সালগাওকর। শনিবার মারগাওয়ে ডেভিড বুথের দলকে নিয়ে শুধু ছেলেখেলা নয়, একটা নজিরও গড়ে ফেলল লাল-হলুদ ব্রিগেড। আই লিগ ইতিহাসে প্রথমবার সালগাওকরকে চার গোলে হারালেন চিডি-পেনরা। চমকপ্রদ ব্যাপার, ইস্টবেঙ্গল জিতল তাদের দুই ‘ইউটিলিটি’ ফুটবলার হরমনজিৎ সিংহ খাবরা এবং সঞ্জু প্রধানকে ছাড়াই। ট্রেভর জেমস মর্গ্যান নিজেও এই জয়কে মরসুমের অন্যতম সেরা ম্যাচ বলে চিহ্নিত করলেন, “ফুটবলে গোল হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চোট-আঘাতের সমস্যা নিয়েও গোয়ার মাঠে বড় ব্যবধানে জেতা, সত্যিই অসাধারণ ব্যাপার।”
ওপরের স্কোরলাইন দেখলে নিশ্চয়ই পরিষ্কার হয়ে যাবে ম্যাচ সেরার নাম। তবে এ দিন শাপমুক্তি ঘটাতে চিডি ছাড়াও ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠ একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, পেন-মেহতাব জ্বললেই বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। ন্যূনতম তিন-চার গোলের নীচে তো থামছে না মর্গ্যান বাহিনী। শনিবারের দালের স্টেডিয়ামও ব্যতিক্রম হল না। ম্যাচ শুরুর আট মিনিটে মার্কাসের গোলে সালগাওকর এগিয়ে গেলেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। আধ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বুথের রক্ষণকে তছনছ করে দিলেন লাল-হলুদের দুই মিডিও। ইসফাকের লং বল থেকে চিডির ১-১। বিরতির পরে পেনের দুরন্ত ‘উইথ দ্য বল’ দৌড়, রবিনের ফটোফিনিশ। চিডির শেষ দু’টো গোল মেহতাবের বুদ্ধিদীপ্ত পাস থেকে। মর্গ্যান নিজেও বলছিলেন, “চিডি হ্যাটট্রিক করলেও, পেন-মেহতাবের অবদান মুছে ফেলা যাবে না।’’
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, রাজু, ওপারা, অর্ণব, রবার্ট, ইসফাক মেহতাব, পেন, লালরিন্দিকা, চিডি, রবিন। |