• মার্লবরো • কেউ বলছে, সকলের হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নাও। কেউ বলছে, সকলের হাতে বন্দুক তুলে দাও। নিউটাউনের স্কুল-ট্র্যাজেডির ধাক্কায় আমেরিকা এখনও বেসামাল। উঠে আসছে নানা মত। যাঁরা বন্দুকের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত, তাঁরা বলছেন, আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে সমাজের হিংসাভাবকে রোধ করা যাবে না। আবার যাঁদের মতে বন্দুকের বদলা কেবলমাত্র বন্দুকই, তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, অস্ত্র তো নিমিত্তমাত্র, সমাজের হিংসাভাব তো বন্দুকের জন্যই তৈরি হয়নি, অন্যান্য কারণে বেড়েছে, সেই ‘অন্যান্য’ কারণের দিকেই মনঃসংযোগ করা হোক, বেচারা বন্দুক কী দোষ করল, বরং হিংসাভাব যতক্ষণ না দূর হচ্ছে, বন্দুক দিয়েই তো আত্মরক্ষা করতে হবে, সেটাই বাস্তববুদ্ধি। এই যুক্তিতর্কের ঘূর্ণির মধ্যেই ডিসেম্বরে রেকর্ড-সংখ্যক বন্দুক-লাইসেন্স পাশ হয়েছে সে দেশে। ও দিকে, নিউ জার্সির মার্লবরো-য় প্রতিটি স্কুলে বাধ্যতামূলক সশস্ত্র পুলিশ-পোস্টিং-এর ব্যবস্থা হয়েছে। কচিকাঁচাদেরও প্রত্যেককে প্রত্যহ আগাপাশতলা সার্চ।
মার্লবরো ভাবিয়ে তুলল। এক দিক থেকে, যুক্তি অকাট্য। নাগরিকের, বিশেষত নাবালক নাগরিকের নিরাপত্তার একটুও ত্রুটি রাখা চলবে না। কিন্তু তা-ই বলে এই সশস্ত্র জীবনযাপনেই ক্রমে দীক্ষিত হবে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র?
আরও একটা প্রশ্ন। সশস্ত্র প্রহরাই যদি একমাত্র বাঁচার পথ, তবে যেখানে সশস্ত্র প্রহরা থাকে না, অর্থাৎ বাড়িতে, অফিসে, দোকানে, রাস্তাঘাটে সেখানে তো নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই দেখে নিতে হবে? নিজের সশস্ত্র প্রহরার আয়োজন নিজেকেই করতে হবে? অর্থাৎ, প্রেসিডেন্ট ওবামা যদিও উঠেপড়ে লেগেছেন চলতি মাসেই বন্দুক-নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করতে, ঠারেঠোরে এই অতি-অস্ত্রনির্ভরতা থেকে বন্দুকব্যবস্থাই জিতে যাবে না তো?
এত জটিলতার মধ্যেও ফিকফিক করে হাসি অবধারিত মধ্য আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায়! সেখানে শপিং মল-এ বুলেট-প্রুফ কোট, জ্যাকেট, শার্টের মহা-ফ্যাশনমেলা চলছে, যার যেটা পছন্দ! মরতে হয় তো মরব, কিন্তু ফ্যাশন করে মরব! |
• ব্যাঙ্কক • তাইল্যান্ড দেশটা প্রতিবেশী দেশগুলির চেয়ে অনেকটা বেশি সম্পন্ন। ফলে লাওস, কাম্বোডিয়া এবং বিশেষত মায়ানমার থেকে বহু মানুষ কাজের খোঁজে আসেন সে দেশে। কুড়ি-পঁচিশ লাখ অভিবাসী শ্রমিকের মধ্যে আশি শতাংশই বর্মী। এর একটা বিরাট অংশই বেআইনি। এই মুহূর্তে তাঁরা গভীর সঙ্কটে। তাইল্যান্ড সরকারের হুকুম, কাগজপত্র ঠিক না থাকলে নিজের দেশে ফিরে যেতে হবে, নতুন করে পারমিট নিয়ে আসতে হবে। বলা বাহুল্য, অনেকেই লুকিয়ে-চুরিয়ে, ঘুষ দিয়ে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাঁরা চলে গেলে কর্মীও মিলবে না, ফলে নিয়োগকর্তারাও সরকারি কড়াকড়ির সমর্থক নন। শেষ পর্যন্ত কত জনকে ফেরত যেতে হবে, অজানা। সব মিলিয়ে, তীব্র উদ্বেগের মধ্যে দশ লক্ষ মানুষ।
|
ঠিক এই দিনটিতেই ১৮০ বছর আগে, ৩ জানুয়ারি উনিশ শতকীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগরের বুকের এই দ্বীপটি আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়, যদিও লন্ডন থেকে এর দূরত্ব ১৪০০০ কিলোমিটার!
চিঠির একটি লাইন। চিঠিটি লিখেছেন আর্জেন্তিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ দ্য কার্চনার (ছবি), ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের উদ্দেশে। সঙ্গে কপি রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের জন্যও। পৃথিবীকে জানাতে চান তিনি, উনিশ থেকে বিশ হয়ে একুশ শতকে আসা গেলেও আজও ব্রিটেন নির্লজ্জ সাম্রাজ্যবাদী ট্র্যাডিশন চালিয়েই যাচ্ছে, আজও বিশ্বের দক্ষিণতম প্রান্তের ‘ফকল্যান্ড আইল্যান্ডস’ আর্জেম্তিনার সন্নিকটে থেকেও ব্রিটিশ রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ফকল্যান্ড-কামানটি দেগে কার্চনার দুনিয়াময় ব্রিটেনের বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করতে চান, যাতে আর্জেম্তিনার সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় তারা।
এখনও অবধি অবশ্য সেই ইঙ্গিত নেই। ক্যামেরনের উত্তর, ফকল্যান্ড নিয়ে চাপ বোধ করার কারণই নেই, আর্জেম্তিনা যেন নাক না গলায়, কারও নাক যদি সত্যিই এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়, সেটা ফকল্যান্ড-নিবাসীরা; তাঁরা যা বলবেন, তাই হবে। তা, তাঁদের মত কী? তাঁরা কিন্তু ব্রিটেনকেই বেছে নিচ্ছেন; আর্জেম্তিনা তাঁদের বিলকুল না-পসন্দ্। ব্রিটেন উনিশ শতকের সাম্রাজ্যবাদী হলে আর্জেম্তিনা নাকি একুশ শতকের চোরা সাম্রাজ্যবাদী!
সবই বোঝা গেল। তবু দুটি দরকারি প্রশ্ন কার্চনার-এর এই চিঠির সূত্রে। এক, ‘ফকল্যান্ড যা বলবে তা-ই হবে’: অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু ফকল্যান্ড বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে? সেখানকার সরকার তথা এলিট শ্রেণি? তাঁরা তো ব্রিটিশদেরই সন্তানসন্ততি। তাঁরা চাইবেনই ‘গড সেভ দ্য কুইন’কেই জাতীয় সংগীত রেখে দিতে। এবং দুই, একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বিশ্বের উত্তরপ্রান্ত থেকে দক্ষিণপ্রান্তে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের এই লম্বা হাত, একটু লজ্জা করে না?
|