|
|
|
|
|
মত আলোচনাসভার |
মেয়েরাও মেয়েদের নিয়ে উদাসীন
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষের মঞ্চেও উঠে এল ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ ইত্যাদি প্রসঙ্গ। সমালোচিত হল রাজনীতিকদের চলতি দৃষ্টিভঙ্গি। এমনকী ক্ষমতা পাওয়ার পরে কিছু মহিলা রাজনীতিকও নারী নির্যাতনের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে উঠছেন বলে অভিযোগ উঠল।
শনিবার সকালে মহিলা বিজ্ঞান কংগ্রেসে আলোচনার বিষয় ছিল, ‘জেন্ডার এম্পাওয়ারমেন্ট পলিসি ইস্যুজ’। অর্থাৎ মহিলাদের ক্ষমতায়নে নীতি নির্ধারণ ও প্রণয়নের ভূমিকা। এ দেশে নীতি নির্ধারকদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা হাতেগোনা। সেটা যে একটা বড় সমস্যা, এ দিন আলোচনার মঞ্চে থাকা মহিলা বিজ্ঞানী, আইনজীবী, সমাজকর্মী সকলেই এই ব্যাপারে একমত। তবে একই সঙ্গে তাঁদের প্রায় সকলেরই পর্যবেক্ষণ, এর মধ্যেও যে ক’জন মহিলা ক্ষমতায় আসছেন, তাঁদের অধিকাংশই কিন্তু তখন আর মহিলাদের অবস্থা নিয়ে ভাবছেন না।
এ দিনের অন্যতম বক্তা ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রুমা পাল। তিনি বলেন, “এখানে অনেক মহিলা রাজনীতিকই মেয়েদের বন্ধু নন। তাঁরা অনেকটা রানি মৌমাছির মতো। নিজেরা ক্ষমতার মই বেয়ে উঠে যাওয়ার পরে অন্য মেয়ের নাগাল থেকে তাঁরা মইটা কেড়ে নিতে চান।”
প্রাক্তন বিচারপতি রুমা পাল কারও নাম করেননি। তবে শ্রোতাদের মধ্যে অনেকেরই রুমার বক্তব্য থেকে পার্ক স্ট্রিট বা কাটোয়া ধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে নেত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্যের প্রসঙ্গ মনে পড়ে গিয়েছে। অথচ বিপরীত উদাহরণও কিন্তু আছে। গল্পের ঢঙে রুমাদেবীই বলছিলেন, সাতের দশকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার-এর কথা। রাজধানী তেল আভিভের কিছু অংশে মেয়েদের উপর একের পর এক অত্যাচারের ঘটনা ঘটছিল। কয়েক জন আমলা মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিলেন, ওই অঞ্চলে সন্ধে সাতটার পর মেয়েদের বাইরে বেরনোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হোক। মেয়ার বললেন, “যারা দোষ করল তারা রাস্তায় ঘুরতে পারবে, আর যারা নির্দোষ, অত্যাচারিত তাঁদের আটকে রাখব এটা হবে না।”
চেন্নাইয়ের বিজ্ঞানী সুধা নায়ার, কলকাতার আইএসআইয়ের বিজ্ঞানী সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা মুম্বইয়ের বিজ্ঞানী অর্চনা ভট্টাচার্য মনে করেন, নীতি নির্ধারণের জায়গায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে না পারলে সার্বিক ভাবে মহিলাদের অবস্থা কিছুতেই বদলাবে না। এ দিনের বক্তারাই জানালেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশও মেয়েদের জন্য যতটা ভাল ভাবে নীতি প্রণয়ন করতে পারে, আমাদের দেশে সেটা হয় না। বিজ্ঞানী অর্চনা ভট্টাচার্য যেমন বলেন, “দিল্লিতে আমি দেখেছি, যে সব মেয়েদের বাড়ি দূরে, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেলের দিকে স্পেশ্যাল ক্লাসগুলো করতে পারে না।” কী করে এঁদের ক্লাসে ফেরানো যাবে? সুধা বলেন, “বেঙ্গালুরুতে একটি ধর্ষণের ঘটনার পরে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি মহিলা-কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা উন্নত করে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে মহিলা কর্মীর সংখ্যা তার পরে অনেকে বেড়েছে।” অর্থাৎ সঠিক ব্যবস্থা নিলে ফল মেলে, কিন্তু ব্যবস্থাটা সচরাচর নেওয়া হয় না। রুমাদেবী মনে করিয়ে দিলেন, “আমাদের দেশে মেয়েরা থানায় যেতেও ভয় পান। কারণ সেখানেও তাঁরা অত্যাচারিত হন। কমিটি, কমিশন তৈরি করে কিছু হবে না।” সাবিক ভাবে নীতি নির্ধারণের জায়গায় মেয়েদের যোগদান না বাড়লে সুরাহা মেলার আশা কম, আবারও বললেন সকলে। যদি না সেখানেও সকলে মহিলা রাজনীতিকদের মতো উদাসীন হয়ে পড়েন! |
|
|
|
|
|