|
|
|
|
চ্যানেলের বিরুদ্ধে মামলা |
ধর্ষণ-কাণ্ডে মুখরক্ষায় পাল্টা জবাব পুলিশের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দামিনী-গণধর্ষণ নিয়ে এমনিতেই বেকায়দায় দিল্লি পুলিশ। তার মধ্যেই দামিনীর বন্ধুর সাক্ষাৎকার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তাদের আচরণ নিয়েও। সব মহলের তোপের মুখে আজ দ্রুত নিজেদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে নেমে পড়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, সে দিন পুলিশ মোটেই দেরি করেনি বা অমানবিক আচরণ করেনি। কিন্তু তাদের এই দাবি মানতে নারাজ দিল্লির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতাই।
শুক্রবারই প্রথম টিভি-র পর্দায় মুখ খুলে দামিনীর বন্ধু অভিযোগ করেন, সে দিন খবর পেয়েও দেরি করে অকুস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। পরে তিনটি টহলদারী ভ্যান সেখানে পৌঁছলেও তারা নিজেদের মধ্যে তর্কে ব্যস্ত হয়ে পড়ে! গুরুতর আহত দামিনী বা তাঁর বন্ধুকে কোনও সাহায্যই করেনি তারা। এই অভিযোগের পরে দামিনীর ভাইও আজ বলেন, “পুলিশ সময়ে পৌঁছলে হয়তো বাঁচানো যেত বোনকে।”
পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার বিবেক গোগিয়া দাবি করেন, সে রাতে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ঘটনার খবর পৌঁছয় ১০টা ২২ মিনিটে। তিন মিনিটের মধ্যে সেই খবর টহলদারি ভ্যানে পৌঁছয়। তার মিনিট খানেকের মধ্যে অকুস্থলে পৌঁছয় প্রথম টহলদারি ভ্যান। দ্বিতীয় ভ্যানটি পৌঁছয় পাঁচ মিনিট পর। এর পর আহত তরুণ-তরুণীকে ২৪ মিনিটের মধ্যেই নিয়ে যাওয়া হয় সফদরজঙ হাসপাতালে। গোগিয়া-র দাবি, জিপিএস ব্যবস্থায় কম্পিউটার লগ থেকে পাওয়া গিয়েছে এই তথ্য। একই সঙ্গে টহলদারি ভ্যানের পুলিশ তর্কে ব্যস্ত ছিল এই দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন বিবেক। তিনি জানান, টহলদারি ভ্যান সরাসরি পুলিশ কন্ট্রোলের অধীনে কাজ করে। কোনও থানার অধীনে নয়। তাই তাদের তর্ক করার কারণই নেই।
অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি আজ আরও একটা কাজ করেছে পুলিশ। গত কাল যে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দামিনীর বন্ধুর সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করা হয়েছিল, সেই চ্যানেলটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে তারা। গণধর্ষণের ঘটনায় প্রধান সাক্ষ্য ওই তরুণের পরিচয় প্রকাশ করার অভিযোগে চ্যানেলটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিন্তু দিল্লি পুলিশের এই সব দাবি বা যুক্তি, কোনওটাই মানতে নারাজ জনতা বা বিরোধী দলগুলি। উল্টে তরুণের কথা প্রচারিত হওয়ার পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে রে রে করে উঠেছে সব দল। সিপিএমের বৃন্দা কারাট থেকে বিজেপির বাণী ত্রিপাঠি সবাই সরব। সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব দিল্লির পুলিশ কমিশনারের ইস্তফা দাবি করেছেন। বস্তুত গত ১৬ ডিসেম্বর গণধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই প্রতিবাদ মুখর দিল্লি ঘটনার দায়ে পুলিশকেই প্রথমে কাঠগড়ায় তোলে। ৬ দুষ্কৃতী মিলে একজন তরুণীকে গণধর্ষণ করতে করতে একটা বাসে চেপে আড়াই ঘণ্টা ধরে দিল্লির রাস্তায় ঘুরল অথচ পুলিশ কেন তা টের পেল না, তা নিয়েই প্রশ্ন ছিল। তা ছাড়া ধর্ষণের ঘটনার আগে এক জন ছুতোর মিস্ত্রিকে ওই বাসে চাপিয়ে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছিল ওই ৬ জন। কিন্তু সেই অভিযোগের পরেও পুলিশ কর্ণপাত করেনি। ওই তরুণ এ-ও বলেন, জেরার পরে পুলিশের কিছু নিচুতলার কর্মী-অফিসার তাঁকে বলেন যে, যে ভাবে পুলিশ তদন্ত করেছে ও তাঁদের সাহায্য করেছে, বাইরে গিয়ে সে ব্যাপারে তিনি যেন প্রশংসাই করেন! সব মিলিয়ে যথেষ্টই বিপাকে দিল্লি পুলিশের কর্তারা। বিশেষ করে ঘটনার পর পুলিশি তৎপরতা নিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহ এবং দিল্লি পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমারের অনেক দাবিই প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে তরুণ মুখ খোলার পরে। এই অবস্থায় পুলিশ কর্তারা আজ যুক্তি দেন, নিয়ম-নীতি অনুযায়ী যা যা করণীয় ছিল, সবই সে রাতে তাঁরা করেছেন। এমনকী আহত ওই তরুণকে একটি অতিথিশালায় রাখার ব্যবস্থাও করা হয়। বিবেক গোগিয়ার বক্তব্য, পুলিশ তাঁর নিজের কর্তব্য পালন করেছে। কোনও প্রশংসা পাওয়ার আশায় তা করেনি। শুধু পুলিশ নয়, আক্রান্ত ওই তরুণ আঙুল তুলেছেন দিল্লির নাগরিক সমাজের দিকেও। তাঁর বক্তব্য, ঘটনার দু’দিন পর মোমবাতি হাতে নিয়ে প্রতিবাদে পথে নেমেছিল যে দিল্লি, সেই দিল্লিই কিন্তু ঘটনার পর চূড়ান্ত উদাসীনতা দেখিয়েছিল তাঁদের প্রতি। নগ্ন অবস্থায় রাস্তার ধারে তিনি ও তাঁর বান্ধবী প্রায় ২৫ মিনিট পড়ে ছিলেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। একই অভিযোগ করে দামিনীর ভাইও বলেন, মানুষের উচিত অপরের বিপদে আরও সংবেদনশীল হওয়া। কিন্তু পুলিশের মুণ্ডপাত আজ যতটা হয়েছে, সেই অনুপাতে তরুণের এই আক্ষেপ নিয়ে বেশি কথা বলেননি কেউই। কিছু বিক্ষিপ্ত স্বর অবশ্য শোনা গিয়েছে। যেমন দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন কর্তা কিরণ বেদী বলেন, “কেবল পুলিশ নয়, সবারই মানসিকতার বদল প্রয়োজন।” |
|
|
|
|
|