শুধু কোচবিহার জেলাই নয়, মালদহ ও দুই দিনাজপুরের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) ঠিকাদার নিযুক্ত অস্থায়ী পাম্প কর্মীদেরও কার্যত একই অবস্থা। তিন জেলার ওই কর্মীরা গত ১৪ মাস ধরে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। তিন জেলায় ২০০ ছোট পাম্প ও চারটি বড় পাম্পের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত ৪ শতাধিক কর্মী আছেন। ওই তিন জেলায় ৪২ জন ঠিকাদার সংস্থার পাম্প চালানোর কাজে নিযুক্ত আছেন। তাঁদের মাধ্যমেই অস্থায়ী পাম্প অপারেটরেরা কাজ করে থাকেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন পাম্প অপারেটরা।
সরকারি সূত্রের খবর, তিন জেলার পাম্প অপারেটরদের জন্য প্রতিমাসে ঠিকাদারদের প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা মেটায় পিএইচই। যা গত ১৪ মাস ধরে দেওয়া হয়নি। এতে তিন জেলায় বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। মালদহ ডিভিশনের পিএইচই ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবপ্রিয় সাহা বলেন, “গত ১৪ মাস ধরে আমরা কোনও টাকা পাচ্ছি না। পাম্প কর্মীদের বেতন দিতে পাচ্ছি না। আমাদের পিঠ একেবারে দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। এই ভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। আমরা পিএইচই-র অফিসারদের বলে দিয়েছি, খুব বেশি হলে এই মাসটা দেখব। নইলে আমরা কাজ করা বন্ধ করে দেব।”
তবে সমস্যা দ্রুত মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন মালদহ ও দুই দিনাজপুরের পিএইচইর দায়িত্বপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র মৃত্যুঞ্জয় সরকার। তিনি বলেন, “ঠিকাদার সংস্থা ও কর্মী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি জানেন। আশা করছি সাতদিনের মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে।” তবে আশ্বস্ত নন ঠিকাদার নিযুক্ত অস্থায়ী পাম্প কর্মীরা। রায়গঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঠিকাদার নিযুক্ত দুই পাম্পকর্মী সুবীর সরকার ও বিজয় দাস বলেন, “বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকাদার সংস্থা জানিয়েছে খুব শীঘ্রই আমাদের বকেয়া বেতন সহ নিয়মিত বেতন চালু হয়ে যাবে। কী হবে জানি না।” বালুরঘাটের এই রকম পাম্পকর্মী অমল বিশ্বাস বলেন, “নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় সংসার চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাস আগে ঠিকদার কিছু টাকা দিয়েছিল।” আর জেলার দায়িত্বে থাকা এক ঠিকাদার সজল ঘটক বলেন, “নিয়মিত টাকা না পাওয়ায় কাজ করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদেরকেই ওই অপারেটরদের অনেক সময় বেতন দিতে হচ্ছে।”
ওই পাম্প কর্মীরা দৈনিক ১৯৬ টাকা মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। ওই পাম্পকর্মীরা গত ৫ থেকে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন দফতরের মেকানিকাল ডিভিশনের কাজকর্ম পরিচালিত হয় মালদহ থেকে! উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর সহ মালদহ জেলা মিলিয়ে মালদহে পিএইচই-র সদর দফতর। বর্তমানে একাংশ ঠিকাদারেরা অনেক জায়গায় অল্প অল্প করে কিছু টাকা দিয়ে আপাতত কর্মীদের কাজ করাচ্ছেন। বাকিরা, দ্রুত টাকা পাবেন এই আশায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পিএইচই ওয়াটার সাপ্লাই এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক অনুপ দাস বলেন, “বেতনের জন্য ঠিকাদারদের বলা হলে তাঁরা টাকা না পেলে কী করে দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা জানুয়ারি মাস অবধি দেখব নইলে আন্দোলনে নামা হবে। কাজও বন্দ করে দেওয়া হবে।”
|
সমাধান মেলেনি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কোচবিহার মেকানিক্যাল সাব ডিভিসন অফিস খোলা নিয়ে সমাধান সূত্র মিলল না। শুক্রবার বিকেলে জেলাশাসকের দফতরে ওই অফিস খোলার পাশাপাশি পাম্প অপারেটর সংগঠনের আন্দোলন ঘিরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে পাম্প অপারেটরদের গত সেপ্টেম্বর থেকে বকেয়া থাকা বেতন মেটানোর দবি তোলেন আন্দোলনকারীরা। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে চার মাসের বকেয়ার জায়গায় দুই মাসের বেতন মেটানর আশ্বাস দেওয়া হলেও আন্দোলনকারীরা তা মানতে চাননি। এতে বৈঠক ভেস্তে যায়। আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতা গণেশ নন্দী বলেন, “চার মাস বেতন বকেয়া থাকায় অফিস অচল করে আন্দোলন চালাতে বাধ্য হচ্ছি। সংসার চালাতে পাম্প অপারেটরেরা হিমসিম খাচ্ছেন। এতদিন বাদে কর্তৃপক্ষ মাত্র দুই মাসের বকেয়া মেটানোর আশ্বাস দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তা মানা সম্ভব হয়নি।” পুরো বকেয়া না মিটিয়ে প্রশাসন পুলিশ দিয়ে ওই অফিস খোলার চেষ্টা করলে পাল্টা প্রতিরোধের হুমকিও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আগামী সোমাবার সাংগঠনিক বৈঠক করে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলেও আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “বৈঠকে সমাধান সূত্র মেলেনি। সোমবারের মধ্যে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” গত ১২ ডিসেম্বর থেকে বকেয়া মেটানোর দাবিতে কোচবিহারের ওই অফিসে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন ঠিকা-নিযুক্ত পাম্প অপারেটররা। |