রাজ্যের ১৮টি জেলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ শুভেচ্ছা-বার্তার প্রচারে কোষাগার থেকে খরচ হচ্ছে ৪২ লক্ষ টাকা। কলকাতার খরচ ধরলে সেই অঙ্ক অবশ্যই দাঁড়াবে কয়েকগুণ বেশি। সেখানে জন সচেতনতা, জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত প্রচার চলে যাচ্ছে পিছনের সারিতে। এমনকী নারীদের উপর নির্যাতনের প্রতিরোধে যে টেলিফোন নম্বরগুলি চালু করেছে পুলিশ ও প্রশাসনের নানা দফতর, সেগুলি প্রচারে কোনও উদ্যোগ হয়নি, স্বীকার করছেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কর্তারাই।
নারী নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করার জন্য সমাজকল্যাণ দফতরের পৃথক সেল আছে। তাতে জেলাভিত্তিক টোল-ফ্রি নম্বর আছে। যেখানে ফোন করলে পুলিশের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা। কলকাতা পুলিশেরও একটি টোল ফ্রি নম্বর রয়েছে। কিন্তু সমাজকল্যাণ দফতর, পুলিশ বা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর, কোনও তরফ থেকেই এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন বা হোর্ডিং দেওয়া হয়নি। “আমাদের কাছে এ বিষয়ে প্রচারের জন্য কোনও প্রস্তাব আসেনি,” বললেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের রাজ্যস্তরের এক অফিসার। |
দক্ষিণ কলকাতার রাস্তায় শুভেচ্ছা-বার্তা। —নিজস্ব চিত্র |
নারী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, “টোল-ফ্রি নম্বর যখন শুরু করা হয়েছে, তখন প্রচারও জরুরি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে মেয়েদের স্কুল-কলেজে কয়েকটি থানার নম্বর ও টোল-ফ্রি নম্বরটি কয়েকটি চিরকুটে দিলে উপকার হবে।”
কেবল নারী নিরাপত্তার বিষয়টিই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর ‘শুভেচ্ছাবার্তা’-র জোয়ারে জনচেতনা তৈরির প্রকল্পগুলি পিছিয়ে পড়ছে, বলছেন সরকারের নানা দফতরের কর্তারা। পোলিও দূরীকরণ, নিয়মিত টিকাকরণ, বাল্যবিবাহ বা নারী পাচারের প্রতিরোধ, এমন নানা বিষয়ে ‘সামাজিক সংযোগ অভিযান’-এর জন্য পরিকল্পনা খাতে টাকা বরাদ্দ থাকে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রে খবর, এ বছর ওই খাতে ৪০ শতাংশ টাকাও খরচ হয়নি। যেটুকু খরচ হয়েছে, তার অধিকাংশই নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। বিভিন্ন অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণেই প্রধানত খরচ হয়েছে। তথ্য প্রচার হয়েছে খুব কম। সমাজ কল্যাণ দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে মহিলা উন্নয়ন কেন্দ্রিক যে প্রচারগুলি চালানো হয়, গত দেড় বছরে গোটা রাজ্যেই তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। নিট ফল, অন্যান্য বার যেখানে এক একটি জেলায় বছরে আড়াই-তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রভৃতির প্রচারে, সেখানে এ বছর ৪০ হাজার টাকাও খরচ হয়নি বহু জেলায়।
কোন কোন বিষয়ে কী বার্তা প্রচার করতে হবে, সে বিষয়েও জেলাগুলিতে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ আসেনি রাজ্যস্তর থেকে। নানা জেলায় যেটুকু জনচেতনা-মূলক প্রচার হয়েছে, তা জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে জেলা পরিষদ কিংবা কোনও সরকারি দফতরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে করেছেন, জানালেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক কর্তা।
কেন জনচেতনা মূলক তথ্য প্রচারের এই দশা? একটি জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক কর্মী বললেন, ‘‘আমাদের অবস্থা হয়েছে মেজদার কাছে শ্রীকান্তের পড়াশোনা করার মতো। তথ্য দফতরে সচিব, অধিকর্তা তো রয়েইছেন, তার পর রয়েছেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। ফলে নাক ঝাড়ব কি না, থুতু ফেলব কি না, সেই অনুমতি চাইতে গিয়ে আসল কাজ আর করা হয়ে ওঠে না।”
মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্যের ১৮টি জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরকে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি-সহ ওই শুভেচ্ছা-বার্তা ঝোলানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাঠের কাঠামোর উপরে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিসহ ফ্লেক্স দিয়ে হোর্ডিং তৈরি করে নির্দেশিত জায়গায় লাগানোর জন্য জেলায় জেলায় নির্দেশ পাঠিয়েছেন রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উপ-সচিব সুমিত্রা হাজরা। আঠেরোটি জেলায় ফ্লেক্স-হোর্ডিংয়ের জন্য চটজলদি বরাদ্দ করা হয়েছে ৪২,১২,৭৬৪ টাকা। পাঁচ লক্ষেরও বেশি টাকা পাচ্ছে পুরুলিয়া, চার লক্ষের বেশি কোচবিহার ও মুর্শিদাবাদ। বীরভূমে শুভেচ্ছার প্রচার সব চাইতে কম, মাত্র ৫০ হাজার টাকা। মালদহ পাচ্ছে ৯৮ হাজার টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তাঁর ছবি পছন্দ করছেন। আগে একাধিক হোর্ডিংয়ে হাতে মোবাইল ও চশমা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কিছুটা ‘একঘেয়ে’ হয়ে গিয়েছিল। এ বার হাসিমুখের একটি ছবি নির্বাচন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। |