|
|
|
|
অভিযুক্ত নন্দীগ্রামের ক্লাব |
চাঁদা না পেয়ে শিক্ষকদের স্কুলে ঢুকতে বাধা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠানের জন্য স্কুলের শিক্ষকদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন নন্দীগ্রামের একটি ক্লাবের সদস্যেরা। অভিযোগ, দাবি মানতে রাজি না হওয়ায় শুক্রবার স্কুলের গেট আটকে তাঁরা শিক্ষকদের ঢুকতে বাধা দেন, গালিগালাজ করেন, প্রাণনাশের হুমকিও দেন। ঘণ্টা দু’য়েক পরে বাইরে আটক স্কুলের পড়ুয়া ও অভিভাবকদের হস্তক্ষেপে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের রাজারামচক শিক্ষা নিকেতনের গেট ছাড়েন তাঁরা। তবে এলাকার তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।”
ক্লাবের ছেলেরা তৃণমূল সমর্থক বলেই পরিচিত এলাকায়। ক্লাবের ওই অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসাবে সাংসদ শুভেন্দুর নাম ছিল কার্ডে। তিনি না এলেও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের, কেন্দেমারির তৃণমূল প্রধান শেখ সাহাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। ঘটনাচক্রে এই দু’জনই আবার স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক এবং সভাপতি। আবু তাহের বলেন, “ক্লাবের কেউ দলের সমর্থক নন। স্থানীয় বাসিন্দা। এমন দাবি আমি সমর্থনও করি না। ঘটনার কথা জেনেই পুলিশকে খবর দিই।” বহু চেষ্টা করেও এ দিন ওই ক্লাবের সভাপতি, সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সিহি বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে এটা একটা কলঙ্কজনক ঘটনা। যারাই করে থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।”
স্কুল সূত্রের খবর, চাঁদার জন্য গত কয়েকদিন ধরেই চাপাচাপি করছিলেন পাশের শান্তি স্পোর্টিং ক্লাবের ছেলেরা। প্রধান শিক্ষকের কাছে দশ হাজার টাকা ও অন্যদের কাছে দেড় হাজার টাকা করে চাঁদা চেয়েছিলেন তাঁরা। শিক্ষকেরা বড়জোর আট হাজার টাকা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন। তাতে রাজি ছিলেন না ক্লাবের সদস্যেরা। এই টানাপোড়েনের মাঝেই বৃহস্পতিবার স্কুলের পাশের মাঠে ক্লাবের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়।
সকাল থেকেই তারস্বরে বাজছিল মাইক। ১০টা নাগাদ স্কুলের গেটের সামনে ব্যারিকেড করে শিক্ষকদের আটকে দেন ক্লাবের ছেলেরা। এ দিনই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। অন্য কিছু ক্লাসে বই বিলিরও কথা ছিল। ফলে, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অভিভাবকেরাও এসেছিলেন স্কুলে। সকলেই আটকে পড়েন বাইরে। দু’ঘণ্টা ধরে ঘেরাও চলে। শেষমেশ বিরক্ত অভিভাবকেরাই ক্লাবের ছেলেদের সরিয়ে দেন।
স্কুলের প্রধানশিক্ষক সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, “আমি স্কুলের ভিতরে ছিলাম। গণ্ডগোল হচ্ছে দেখে আবু তাহেরকে জানাই। বেশ কিছুক্ষণ পরে পুলিশ আসে। ততক্ষণে অবশ্য ক্লাবের ছেলেদের হঠিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।” এ দিনই বিকেলে স্কুলের শিক্ষকেরা নন্দীগ্রাম থানায় টাকা চাওয়া, গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ক’দিন আগেই তৃণমূলের অঞ্চল সম্মেলন উপলক্ষেও ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল শিক্ষকদের কাছে। শিক্ষকেরা সকলে মিলে পাঁচ হাজার টাকা তুলেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের নেতারা তা উপেক্ষা করে ফিরিয়ে দেন।
এ দিনের ঘটনার পরে পুলিশ পিকেট বসেছে স্কুলে। তবুও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষকেরা। অনেকেই বলেন, “পুলিশ কত দিন থাকবে? এখানেই তো প্রতিদিন আসতে হবে। যে ভাবে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে ওরা, ভয় ধরে গিয়েছে।” |
|
|
|
|
|