সামলে রাখুন চাপ
খুশিতে বাঁচুন
চাপ নিতে কে-ই বা ভালবাসি? কিন্তু চাপ না নিলে, শরীর বা মস্তিষ্কের ঠিকমতো বিকাশ হয় না। চাপেই অনেক সময় সেরাটা বেরিয়ে আসে। তবে কতটা চাপ নেবেন তা জানা দরকার। সীমা ছাড়ালে মুশকিল।
অনেকের মতে, মন বা শরীরের উপরে কোনও দাবি করলে যে-নির্দিষ্ট উপায়ে শরীর সাড়া দেয় তাই চাপ। নানা জনের শরীর নানা ভাবে সাড়া দেয়। কেউ সহজে মানিয়ে নিতে পারেন। কেউ পারেন না। চাপও নানা রকম। আগে কয়েক ধরনের চাপের ভাল-মন্দ জেনে নিন।


মাধ্যাকর্ষণের আওতায় থেকে কোনও নির্দিষ্ট বা এলোমেলো শারীরিক ক্রিয়াকলাপে যে চাপ সৃষ্টি হয় তাতে হাড় ও মাংসপেশির শক্তি বাড়ে। মনে রাখতে হবে মাধ্যাকর্ষণের আওতায় থাকতে হবে। যেমন, সাঁতার কাটলে শরীরের অনেক উপকার হলেও হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে না। কারণ, ভাসমান অবস্থায় মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করা যায় না।
শরীরচর্চার সময়ে অনেকগুলি ভাল হরমোন ক্ষরণ হয়। এতে শরীর ও মনের উপকার হয়। যেমন, এন্ডোরফিন মন ভাল রাখে। গ্লুকাগন হরমোন গ্লাইকোজেন থেকে গ্লুকোজ তৈরিতে সাহায্য করে। এর ফলে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে। এপিনেফ্রিন হরমোনেরও ক্ষরণ হয়। এতে মেজাজ ভাল হয়ে যায়। বৃদ্ধির হরমোনও ক্ষরণ হয়। এ ছাড়া শরীরচর্চা করলে ঘুম ভাল হয়। ঘুমের সময়ে শরীর ও মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য নানা হরমোন ক্ষরণ হয়।
শরীরচর্চা কম হলে মেদ বেড়ে যায়। আবার বেশি শরীরচর্চা করলে রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতার উপরে চাপ পড়ে। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, এতে অল্পে ক্লান্ত হয়ে পড়া, ফুসফুসে সংক্রমণের মতো সমস্যা হয়। তা ছাড়া বসার ভঙ্গি ঠিক না হলে শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশির সমস্যা, অস্থিসন্ধির সমস্যা, রক্ত সঞ্চালন ও নানা অঙ্গের সমস্যা হয়।

মাংসপেশির মতোই কাজ না করলে পরিপাক তন্ত্র ঠিক থাকে না। খাদ্য হজমের সময়ে পরিপাক তন্ত্রের উপরে চাপ পড়ে। পরিপাক তন্ত্র ভাল থাকে।

বেশি খাওয়া, উল্টোপাল্টা খাওয়া, দূষিত খাবার খেলে পরিপাক তন্ত্রের উপরে চাপ বেড়ে যায়। এতে পরিপাক তন্ত্রের স্বাভাবিক কাজে সমস্যা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা রোগের মূল কারণ পরিপাক তন্ত্রের উপরে এই অতিরিক্ত চাপ।

মানসিক চাপ
মানসিক চাপ না থাকলে মস্তিষ্কের বিকাশ হয় না। পড়াশোনা, ব্যবসা বা চাকরি যে কোনও ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোতে গেলে চাপ নিতে হবে। এতে মানসিক শক্তি বাড়ে।
দেখা গিয়েছে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে বেশি মনযোগ দিলে মানসিক চাপ তৈরি হয়। এতে ক্ষতি হয়। তাই অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে মনযোগ না দেওয়াই ভাল। যেমন, অন্যের উন্নতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়া। এতে মানসিক চাপ বাড়ে। ক্ষতি হয়। তা ছাড়া বকাবকি, অতিরিক্ত পড়াশোনা, ধর্মীয় ভাবাবেগ, নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু ইত্যাদি কারণে মানসিক চাপ বাড়ে, ক্ষতি হতে পারে।

তড়িৎচুম্বকীয় চাপ
এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ সূর্যালোক। সূর্যালোক শরীরের হরমোন ক্ষরণ এবং মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গেও মানসিক অবস্থা পাল্টে যায়। তবে তা ব্যক্তির উপরে নির্ভর করে। যেমন, মেঘ করলে কারও মন ভাল হয়ে যায়। কারও মন খারাপ করে।
বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ করে। তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ নির্দিষ্ট মাত্র ছাড়িয়ে গেলে কিন্তু শরীরের ক্ষতি হতে পারে। আবার সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মিও শরীরের ক্ষতি করে।

শরীরের মধ্যেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে। তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে স্থির থাকে। মাঝেমধ্যে বেশি ঠান্ডা বা গরমে গিয়ে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে পরখ করা দরকার।
কিছু যদি শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বাড়িয়ে দেয় বা কমিয়ে দেয় তবে ক্ষতি হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

কোন বিষয়গুলি আপনাকে বেশি চাপে রাখছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। অনেক সময়ে ছোটখাটো বিষয়ে নজর দিতে গিয়ে আমরা মূল কারণগুলি ভুলে যাই। এতে চাপ কমার বদলে বেড়ে যায়। সাধারণত দেখা গিয়েছে সুরক্ষা,যৌনতা, আর্থিক কারণ, আশ্রয়ের সমস্যা ইত্যাদি চাপ তৈরির মূল কারণ।
অনুভূতি আর প্রতিক্রিয়াকে আলাদা করতে শিখুন। ধরুন কেউ আপনার সমালোচনা করল। আপনি তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানালেন। আপনার চাপ বাড়বে। কিন্তু যদি একটু সময় নেন, একটু ভাবেন, তাঁর বলার কারণটি চিহ্নিত করতে পারেন, তবে আপনার প্রতিক্রিয়া অনেক সংযত হবে। আপনার চাপ কমবে। বিষয়টি সহজে হয় না। অভ্যাস করতে হয়।
খাওয়ার দিকে নজর দেওয়া উচিত। ফাস্টফুড এড়িয়ে চলাই ভাল। দেখা গিয়েছে, শরীরে জল কমে গেলে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। বেশি করে জল খান। মদ, কফি এবং নানা ধরনের সফ্ট ড্রিঙ্কস কম খাওয়াই ভাল।
শুয়েবসে থাকবেন না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে শরীরচর্চা করুন।
মন ভাল রাখতে যা ভাল লাগে পড়ুন। সিনেমা দেখুন। দাবা বা শব্দছকের খেলায় মন দিন।
হতাশ হবেন না। আর অতিরিক্ত আত্মসমালোচনা না-করাই ভাল।

অলঙ্করণ: অনুপ রায়

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.