বিদ্রোহী প্লেয়ারদের আধডজন দাবিতে কার্যত আত্মসমর্পণ কর্তাদের
ভারতীয় টেনিসের ইতিহাসে শুক্রবার আরও একটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ দিন গেল। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন আজকের দিনটা হবে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের। টেনিস কর্তা বনাম প্লেয়ার। বিদ্রোহী প্লেয়ারদের তীব্র সব দাবির কাছে নতি স্বীকার করবেন না টেনিস কর্তারা, আর তা থেকে ধুন্ধুমার বাঁধবে।
কার্যত দেখা গেল টেনিস কর্তারা আপসের রাস্তায় চলে গেলেন। প্লেয়ারদের আনা আধ ডজন দাবির মধ্যে চারটে মেনে নিলেন। দুটোর ক্ষেত্রে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখলেন। প্লেয়ার-পাওয়ারের কাছে ক্রীড়া কর্তাদের মাথা ঝোঁকানোর এমন সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত ভারতের আর অন্য কোনও খেলায় নেই। অলিম্পিকের আগে যখন এআইটিএ প্রেসিডেন্ট অনিল খন্নারা সমঝোতা করেছিলেন, তখন বলা হয়েছিল অলিম্পিকের জন্য বাধ্য হয়ে সমঝোতা করতে হয়েছে। এখন দেখা গেল অলিম্পিকের পরেও সমঝোতা চলছে। রাজধানীর টেনিস অলিন্দের ফিসফাস বিশ্বাস করতে হলে, এর কারণ হল প্লেয়াররা এআইটিএ-র ভেতরেই তাঁদের এক বড় সমর্থক পেয়ে গিয়েছেন। ইনি হলেন সংস্থার সহ-সভাপতি কার্তিক চিদম্বরম। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের পুত্র। চিদম্বরমের সমর্থনপুষ্ট হওয়ায় এখন কার্যত লড়াইটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এআইটিএ-র কিছু কর্তা বনাম বিক্ষুব্ধ প্লেয়ার ও এআইটিএ।
অলক্ষে মহেশ ভূপতির নেতৃত্ব দেওয়া প্লেয়ারদের জোট দাবি তুলেছিল ছ’টা।
দাবি ১
ডেভিস কাপ খেলার জন্য প্লেয়ারদের বিজনেস ক্লাসে ট্র্যাভেল করতে দিতে হবে।
প্রতিক্রিয়া: দাবি মঞ্জুর হয়ে যাবে।

দাবি ২
পুরস্কার অর্থের পরিমাপ বাড়াতে হবে।
প্রতিক্রিয়া: মঞ্জুর হয়ে যাবে। পারস্পরিক আলোচনায় শুধু শতকরা কত ভাগ দু’পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য, তা ঠিক হবে।

দাবি ৩
সাপোর্ট স্টাফে কারও বাবা, কারও মেসো রাখা যাবে না। তারকা প্লেয়ারের ব্যক্তিগত সাপোর্ট স্টাফকেও টিমে নেওয়া যাবে না।
প্রতিক্রিয়া: এই দাবিটা মুখ্যত লিয়েন্ডার পেজকে অপদস্থ করার জন্য। তাঁর বাবা টিমের ডাক্তার ভেস পেজ ও তাঁর ব্যক্তিগত ফিজিও সঞ্জয়কে সরানোর জন্য। এআইটিএ মেনে নিচ্ছে এই দাবি।

দাবি ৪
ডেভিস কাপ কোন সারফেসে খেলা হবে, তা প্লেয়ারদের সঙ্গে কথা বলে টেনিস সংস্থাকে ঠিক করতে হবে।
প্রতিক্রিয়া: দাবিটা আংশিক মানা হচ্ছে। টেনিস সংস্থা মনে করে, প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব নয়। যেহেতু সবার নির্বাচন টাইতে নিশ্চিত নয়। তবে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে তাঁরা রাজি। সুতরাং দাবি আংশিক মঞ্জুর।

দাবি ৫
প্লেয়ারদের ক্যাপ্টেন ঠিক করতে দিতে হবে। সোমদেবরা তাঁদের পছন্দের ক্যাপ্টেন হিসেবে দু’জনের নাম পেশ করেছেন। প্রথম পছন্দ আনন্দ অমৃতরাজ। দ্বিতীয় পছন্দ রোহিত রাজপাল।
প্রতিক্রিয়া: প্লেয়াররা ক্যাপ্টেন নির্বাচনে কিছু বলতে পারে না বলেও এআইটিএ তাদের প্যানেলে বিবেচনার জন্য এই দুটো নামও রেখেছে। সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে এআইটিএ প্যানেলে বাংলার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়-সহ অনেকের নামই রয়েছে। তবে আনন্দ যেহেতু ৩৯ ডেভিস কাপ ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ, তাঁর ব্যাপারে এআইটিএ উদার হতেই পারে। অর্থাৎ এখানেও দাবি আংশিক মঞ্জুর হয়ে যেতে পারে। প্লেয়ারদের তাঁর প্রতি বিশ্বাসহীনতায় গভীর মর্মাহত নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন শিব মিশ্র পদত্যাগ করেছেন। এআইটিএ তাঁকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাও করতে বলছে না।

দাবি ৬
প্লেয়ারদের কোচ ঠিক করতে দিতে হবে। সোমদেব-বিষ্ণু বর্ধনরা তাঁদের পছন্দের কোচের নামও দিয়ে দিয়েছেন। ইনি আদিত্য সচদেব।
প্রতিক্রিয়া: ভারতীয় টেনিস সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী কোচকে হতে হবে হয় ডেভিস কাপার, নয়তো জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। আদিত্য দুটো দাবির কোনওটাই পূরণ করছেন না। তাই তাঁকে কোচ করতে এআইটিএ রাজি নয়। কোচ হিসেবে উঠে আসছে জিশান আলির নামও।

বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন

শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এআইটিএ-র রীতিমতো যুদ্ধংদেহি ধ্বনি ছিল। বিদ্রোহী প্লেয়ারদের এই ঝাঁক না খেললে আমাদের বয়েই গেল। আমরা বিকল্প দল তৈরি করে খেলাব, এমন মনোভাবও দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্তারা গুটিয়ে যান। প্লেয়ারদের কাছে এক রকম আত্মসমর্পণের রাস্তায় চলে যায় এআইটিএ। কর্তাদের ধারণা ছিল লিয়েন্ডার পেজ প্রবল ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু লিয়েন্ডার এর মধ্যে ঢুকতেই চাননি। জানিয়েছেন দিল্লির টাইতে তিনি অবশ্যই খেলবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের ছবি রাজধানী এক্সপ্রেসের প্রোমোশন নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত আছেন। এআইটিএর প্রভাবশালী এক সদস্য রাতে দিল্লিতে বলছিলেন, “লিয়েন্ডার যদি পাশে না থাকে, তা হলে ওর হয়ে লড়াইটা কী করে সম্ভব?”
টেনিস কর্তারা তাঁদের চিঠির খসড়া তৈরি করে ফেলছেন রবিবার। প্লেয়ারদের কাছে তা পৌঁছে যাবে সোমবার। কথা ছিল সেই চিঠিতে থাকবে তীব্র কড়কানি। বলা হবে, শর্ত প্রত্যাহার না করলে আর দেশের হয়ে খেলতে নেমো না। কার্যত এখন তা হয়ে দাঁড়াবে অনুনয়-বিনয়ের চিঠি। এআইটিএ-র মহাকর্তা হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় এ দিন রাতে দিল্লিতে বসে বললেন, “প্লেয়াররা আমাদের হয়ে খেলে। আমরা চাই ওরা আরামে থাকুক। ওরা যেন কোনও কিছুতে বিপন্ন না বোধ করে।” অন্তত এই মুহূর্তে সুর যে সমঝোতার, তা আর বুঝতে বাকি আছে?

মহেশ ভূপতি
লিয়েন্ডার ও আমি যদি একমত হতে পারতাম, তা হলে কয়েক বছর আগেই এই পরিবর্তনটা আনা যেত। এতদিন পর বর্তমান প্রজন্মের এই পরিবর্তন আনার ইচ্ছা দেখে খুব ভাল লাগছে।
রোহন বোপান্না
পরামর্শগুলো ভারতীয় টেনিসের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই দেওয়া হয়েছে। সত্যিই যদি পরিবর্তন আনা যায়, তা হলে ভারতীয় টেনিস দল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
সোমদেব দেববর্মন
আমাদের দলের জন্য যা ভাল বলে বিশ্বাস করি আমরা, তার সঙ্গে যদি সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থা একমত হতে পারে, তা হলেই আমি আছি। প্রশাসকদের প্রাচীন কান্ডকারখানা চললে আমি নেই।
বিষ্ণু বর্ধন
এটা কোনও বিদ্রোহ নয়, সেরা ভারতীয় ডেভিস কাপ দল বাছার জন্য এআইটিএ-র সঙ্গে খেলোয়াড়দের একটা বোঝাপড়া, যাতে আখেরে লাভই হবে। আমাদের অবস্থানে কিন্তু আমরা অনড় থাকব।
য়ুকি ভামব্রি
আমাদের বয়স কম। তাই আমাদের কমবয়সি সাপোর্ট স্টাফও দেওয়া উচিত, যাদের সঙ্গে আমাদের মানসিক দূরত্ব বেশি থাকবে না। ওদের সঙ্গে কাজ করতে আরও অনেক বেশি সুবিধা হবে।
সনম সিংহ
ডেভিস কাপে দল হিসেবে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে চাই আমরা। আমাদের কথা অন্তত শোনা হোক। সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থার ক্ষতি হোক এমন কিছু তো চাই না আমরা।
দ্বিবিজ শরণ
পরিবর্তন দরকার। তা হলেই আমরা সবাই ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারব। ভারতীয় টেনিসের উজ্জল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এই পরিবর্তন অবশ্যই দরকার আছে।
সকেত মিনেনি
ভারতীয় টেনিসকে ঔজ্জ্বল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুলতে চাইছি আমরা। এখানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা কর্তারা করবেন বলে মনে হয় না। আশা করি সব ভালয় ভালয় মিটে যাবে।

—ফাইল চিত্র।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.