খেলা
বয়স ভুলে টেবলে
কেউ আশির পথে। কেউ ষাট বা পঞ্চাশের কোঠায়। কিন্তু ব্যাট হাতে টেবলের সামনে যেন তরুণ। এমনই এক ঝাঁক খেলোয়াড়কে নিয়ে হাওড়া স্পোর্টিং ক্লাবে হয়ে গেল নন্দলাল সিংহ মেমোরিয়াল টেবল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ।
আয়োজক ক্লাবের সম্পাদক নিমাই দত্ত বললেন, “আমাদের ক্লাবের সদস্য প্রয়াত নন্দলাল সিংহ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। প্রবীণ খেলোয়াড়দের উত্‌সাহ দিতে ১৩ বছর ধরে তাঁর নামে এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে।” মহিলাদের একটি এবং পুরুষদের চারটি বিভাগে লড়াইয়ে নেমেছিলেন হাওড়া, কলকাতা, মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা ও পুরুলিয়া থেকে আসা প্রতিযোগীরা। এক সময় কলকাতা ময়দানে প্রথম ডিভিশনে চুটিয়ে ফুটবল, ক্রিকেট খেলেছেন। অবসর নেওয়ার পরে শুরু করেছিলেন টেবল টেনিস চর্চা। কাসুন্দিয়ার সেই দিলীপ সাঁতরা সত্তরোর্ধ্ব বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হলেন কলকাতার অনুপম চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে। ফাইনালে হারলেও দমে যাননি প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় অনুপমবাবু। তাঁর কথায়: “স্লিপ ডিস্কে ভুগছি। আকুপাংচার চলছে। তবু মনের টানে টেবলে আসি।”
—নিজস্ব চিত্র
দুর্দান্ত লড়াই হল হাওড়া কদমতলার রণজিত্ রায় ও কলকাতার তপন চট্টরাজের মধ্যে। দু’জনেই প্রাক্তন টেবল টেনিস খেলোয়াড়। ষাটোর্ধ্ব বিভাগের ফাইনালে শেষ পর্যন্ত তপনবাবু ৩-২ গেমে জিতে যান। রণজিত্‌বাবুর হেরেও কষ্ট নেই। তিনি বললেন, “প্রেসার, কোলেস্টেরল থাবা বসিয়েছে অনেক দিন। হেরেছি, দুঃখ নেই। শরীর ভাল রাখতেই নিয়মিত টেবল টেনিস খেলি।”
সাত সকালে সুদূর খড়্গপুর চলে এসেছেন ৭৪ বছরের ‘তরুণ’ সুধেন্দু মৈত্র। তাঁর কথায়: “জয় বড় নয়। খেলার মধ্যে রয়েছি বলেই হয়তো শরীরে এখনও কোনও অসুখ বাসা বাঁধতে পারেনি। বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রীকে রেখে খেলতে এসেছি।” ক্যানসারের মতো মারণরোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে কলকাতার ভবানীপুর থেকে এসে এ বারও খেলতে নেমেছিলেন প্রবীণদের জাতীয় টেবিল টেনিসের সত্তরোর্ধ্ব বিভাগে রুপোজয়ী ৭৯ বছরের রমাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
প্রবীণদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে আসা জাতীয় ভেটারেন্স টেবল টেনিসে পদকজয়ী উত্তর কলকাতার বিবেক অরোরা চল্লিশোর্ধ্ব বিভাগে জয়ী হলেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব বিভাগে জয় পেলেন ব্যারাকপুরের সুব্রত গোস্বামী। মহিলাদের একটি মাত্র বিভাগ চল্লিশোর্ধ্বতে এ বারও সেরা হলেন দক্ষিণ কলকাতার মান্তু মুর্মু। জার্মানি, জাপান, সুইত্‌জারল্যান্ড ও সুইডেনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে আসা মান্তুদেবী হারিয়ে দিয়েছেন গোপা বালা, মন্দিরা শূর ও প্রীতিকণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
সহযোগী ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেটারেন্স টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুব্রত বক্সী জানালেন, ২০০০-এ এই ক্লাবেই রাজ্য ভেটারেন্স টেবল টেনিস সংস্থার জন্ম হয়েছিল। সভাপতি তথা প্রাক্তন খেলোয়াড় জ্ঞান মল্লিক বললেন, “অ্যাসোসিয়েশন তৈরির পরে প্রবীণ টেবল টেনিস খেলোয়াড়দের থেকে সবচেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি। অনেকেই খেলায় ফিরছেন। গত বছর জাতীয় ভেটারেন্স টেবল টেনিসে পাঁচটি সোনা-সহ ১৮টি পদক জিতেছে বাংলা।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.