|
|
|
|
ত্রিপুরায় নির্বাচন |
নতুন মুখ এনে ‘পরিবর্তন’ চাইছে সিপিএমই
আশিস বসু • আগরতলা |
রাজ্য বিধানসভার আগামী নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় অনেক নতুন মুখ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬০টি আসনের ৫৫টি আসনে সিপিএম প্রার্থী দেবে। তার মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ মুখই হবে নতুন। অর্থাৎ ১০-১৫টি নতুন মুখ এ বার সিপিএমের তালিকায় থাকছে।
কেন নতুন মুখ সে প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরের ব্যাখ্যা, অনেকে বয়সের কারণে আর দাঁড়াতে চাইছেন না। যদিও রাজ্য কমিটি সবার কথাই যে মেনে নিয়েছে তা নয়। এ ছাড়াও দলে নতুন রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনীয়তাও যে রয়েছে তারও ইঙ্গিত মিলেছে বিজনবাবুর কথায়। তাঁর বক্তব্য, এই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কী সেই বাধ্যবাধকতা, তার ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি করেননি।
বর্তমান বিধায়কদের সরিয়ে নতুন মুখগুলি আনা হচ্ছে কিনা তার সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বিজনবাবু জানান, “বর্তমান বিধায়কদের অধিকাংশই প্রার্থী হবেন।” তবে মহিলাদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র পাঁচটি আসন। অর্থাৎ ৫৫টি আসনের মধ্যে মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশেরও কম আসন বরাদ্দ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, রাজ্যে দেড় দশকের টানা বাম শাসনের পর বিরোধী কংগ্রেস এ বার রাজ্যের মানুষের কাছে ‘পরিবর্তন’-এর দাবি জানাতে শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টকে উচ্ছেদ করে যে ‘পরিবর্তন’ ঘটেছে, বার বার তার উল্লেখ করা হচ্ছে কংগ্রেসের সভা-সমাবেশে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে ২০০৬ সালে তৃণমূলের পরিবর্তনের ডাককে অনেকটাই ভোঁতা করে দিয়েছিলেন সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস। সিপিএম তাঁদের প্রার্থী তালিকায় প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন মুখ এনে নিজেরাই ‘পরিবর্তন’-এর কাজটা আগেভাগে সেরে নিয়েছিলেন। সে বার সিপিএম ২৩৫টি আসনে জয়ী হয়। ত্রিপুরায় সিপিএম প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখের পরিকল্পনায় তারই ছায়া।
নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘন্ট এখনও ঘোষণা না করলেও ত্রিপুরায় নির্বাচনী প্রচারের কাজ কার্যত শুরু করে দিয়েছে শাসক বামফ্রন্ট ও বিরোধী দল, কংগ্রেস। শুরু হয়ে গিয়েছে মিছিল-সভা। বামফ্রন্ট এ বার রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা আসনে তাঁদের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়ে প্রচারে পুরো গতি আনতে চাইছে। সিপিএম তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেললেও তা প্রকাশ করতে পারছে না, কারণ বামফ্রন্টের অন্য শরিকরা এখনও তাদের তালিকা চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি।
আসন নিয়ে আরএসপি-র দাবি শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়ে গত বারের মতো এ বারেও দু’টি আসন তাদের জন্য ছেড়ে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, আসন সীমা পুনর্বিন্যাসের ফলে এ বার বেশ কিছু আসনের ভারসাম্যে পরিবর্তন হয়েছে। সেই কারণে আরএসপি-র সাবেক শালগড়া আসনটি সিপিএম আর তাদের ছাড়তে রাজি নয়। ও দিকে আরএসপি-ও তাদের দু’টি আসনের দাবিতে অনড় ছিল। শেষ পর্যন্ত, বিজনবাবুর কথায়, “বামফ্রন্টের ঐক্যের খাতিরেই আমরা দু’টি আসনই আরএসপিকে ছেড়েছি।” তবে কাঁকড়াবন-শালগড়া আসনটি নয়, পরিবর্তে সিপিএম প্রভাবিত বাধারঘাট আসনটি আরএসপি-কে ছাড়া হয়েছে। আগের মতোই সি পিআই-কে এ বারও দু’টি আসন ও ফরওয়ার্ড ব্লককে একটি আসন ছাড়া হয়েছে। আরএসপি-র দু’টি আসনের দাবি পূরণ হলেও শালগড়া না পাওয়ায় আরএসপি অখুশি, কারণ শালগড়া অঞ্চলে দলের নিজস্ব কিছু প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল। এ ক্ষেত্রে বাধারঘাটে পুরোপুরি সিপিএমের উপর ভরসা করেই তাদের লড়তে হবে। সে কারণে আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক সুর্দশন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আসন সমঝোতা নিয়ে যে সমস্যা ছিল তা মিটে গিয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থায় আরএসপি সন্তুষ্ট, এ কথা বলতে পারছি না।’’
তবে সিপিএম নেতৃত্ব তাদের ৫৫ জন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে ফেললেও মাত্র কয়েকটি আসন নিয়ে তিন বাম শরিক এখনও দোলাচলে রয়েছে। প্রার্থীর নাম তারা চূড়ান্ত করতে না পারায় সিপিএমও তালিকা প্রকাশ করতে পারছে না। সিপিএমের মুখপাত্র গৌতম দাস বলেন, “আশা করা হচ্ছে ৬ বা ৭ জানুয়ারির মধ্যেই বামফ্রন্ট তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারবে।’’ |
|
|
|
|
|