|
|
|
|
কাঠগড়ায় গগৈ সরকার |
মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দুই কবি পাননি ‘সাহিত্য পেনশন’
উত্তম সাহা • শিলচর |
রাজ্যের বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের জন্য সাহিত্য পেনশনের ঘোষণা করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে এ জন্য মনোনীত করার কথা বলাও হয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, কবি-সাহিত্যিকদের এ ভাবে সম্মান জানানোর ঘোষণাই সার। অভিযোগ, পেনশনের টাকা পাঠানোর ব্যাপারে উদ্যোগী নয় অসম সরকার।
দফতরে দফতরে যাঁরা দৌড়ঝাঁপ করতে বা প্রভাবশীল আমলা বা নেতার দ্বারস্থ হতে পেরেছেন, তেমন কেই কেউ পেনশন পেলেও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন সাহিত্যিকদের ক’জনের পক্ষে আর নিজের পেনশনের জন্য ছুটোছুটি সম্ভব! তাই তাঁদের সরকারি সম্মান বছরের পর বছর কাগজপত্রেই আটকে থাকে, ঘোষণামতো অর্থ আর আসে না ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
এ ভাবেই সাহিত্য পেনশন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, যাঁর কবিতার বিখ্যাত লাইন “যে কেড়েছে বাস্তুভিটে সেই কেড়েছে ভয়...”। ২০০৪ সালের স্বাধীনতা দিবসে শক্তিপদবাবুকে পেনশন দিয়ে সম্মানিত করার কথা ঘোষণা করে অসম সরকার। কিন্তু জীবদ্দশায় ওই পেনশনের মুখ দেখে যেতে পারেননি কবি। ২০০৫-এর ১ ফেব্রুয়ারি মারা যান কাছাড়ের এই কবি। বিষয়টিকে ‘মর্যাদার লড়াই’ হিসেবে ধরে নেন উপত্যকার সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকে। বহু চিঠি লেখালেখি হয়। শেষে ১৩ মে সমস্ত কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়। ২০০৬-এর ৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চশিক্ষা দফতর অধিকর্তা বিভাগীয় কমিশনার-সচিবকে লেখেন, শক্তিপদবাবুর মৃত্যুর দরুন এখন ওই পেনশন তাঁর স্ত্রী বেলা ব্রহ্মচারীর নামে দেওয়া হোক। ফাইল আর ঘুরে আসেনি। এমনকী, মন্ত্রীদের নজরেও আনা হয় ব্যাপারটি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল
না। আজও সে টাকা আর পায়নি শক্তিবাবুর পরিবার।
একই কাহিনির পুনরাবৃত্তি ঘটে কবি অনুরূপা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে। ২০১১-র ১৫ অগস্ট তাঁর নাম সাহিত্য পেনশনের জন্য মনোনীত করা হয়। এক বছরেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও চিঠি নেই। পরে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁরা নিজেরাই খোঁজ নেন উচ্চশিক্ষা দফতরে। তখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয় তাঁদের কাছে। ক’দিনের মধ্যে সব পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গত মাসে অনুরূপার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর অ্যাকাউন্টে পেনশনের অর্থ জমা পড়েনি। সদ্য মাতৃহারা অসমঞ্জ বিশ্বাস জানতে চান, এ কী ধরনের সম্মান প্রদর্শন সরকারের?
যাঁরা ওই পেনশনের টাকা পেয়ে যাচ্ছেন তাঁদের বক্তব্য, এক বছর লেগে যায় পেনশন আদায়ে। করিমগঞ্জের নিশীথরঞ্জন দাস বললেন, “যাঁরা ফাইল নাড়াচাড়া করেন, তাঁরা চান সাহিত্যিকরা তাঁদের কাছে ছুটে যান, আর দশ জনের মতো তাঁরাও স্পিড-মানি দিন। এ বড় দুর্ভাগ্যজনক।” কাছাড়ের খৈরউদ্দিন চৌধুরী, সমরেন্দ্র ভট্টাচার্যরা জানান, পেনশন চালু করাটাই বড় ভোগান্তির। তবে একবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পেনশন জমা পড়ে গেলে আর সমস্যা নেই।
কিন্তু এই একবারই যে আর এল না শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, অনুরূপা বিশ্বাসদের জীবনে!
প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে অসম সরকার সাহিত্য পুরস্কার ও সাহিত্য পেনশনের জন্য ক’জনকে নির্বাচিত করে। পেনশন হিসাবে মাসে ২ হাজার এবং পুরস্কারের জন্য নির্বাচিতরা পান এককালীন ২০ হাজার টাকা। |
|
|
|
|
|