সিনেমা সমালোচনা...
রিমেক অথচ কী মৌলিক
রিমেকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েই বাংলা বাণিজ্যিক ছবি তার মৌলিক মেজাজ হারিয়ে ফেলেছে, এমন একটা কথা প্রায়শই বলা হয়। কথাটা অনেকাংশে সত্যি, কিন্তু সবটা সত্যি নয়। অন্তত রাজ চক্রবর্তীর ছবি দেখলে সেটা বারবারই মনে হয়। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ দেখেও আবার করে মনে হল।
রাজ নিজে কোনও দিনই রিমেককে মৌলিক বলে চালাবার চেষ্টা করেননি। বোঝে না...তেও সেই ট্র্যাডিশন অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এই স্বচ্ছতাটুকুর ধার আজকাল অনেকেই ধারেন না। তথাকথিত আঁতেল ছবি করিয়েরাও না, বলিউডের বিগ লিগের সদস্যরাও না। ধরিয়ে দিলে অনুপ্রেরণা বলে চালিয়ে দেন। ওহো, অনুপ্রেরণা বা ইনস্পিরেশন কথাটা তো আবার এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে! এখন বলতে হয়, ট্রিবিউট!
ইনস্পিরেশন আর ট্রিবিউটের মধ্যে তফাতটা কোথায় বলুন তো? ইনস্পিরেশনে আপনি অন্যের সৃষ্টি থেকে একটা আদল নিয়ে সেটাকে নিজের মতো করে ব্যবহার করেন! আর ট্রিবিউট মানেটা এখন দাঁড়িয়েছে, কোটেশন উইদাউট কোটেশন মার্কস! ঠিক এই রকম করেই রিমেক কথাটারও দু’রকম অর্থ হয়। একটা স্রেফ টুকলিফাই, অন্যটা পুনর্নির্মাণ। রাজের রিমেক-স্টাইলটা এই দ্বিতীয় গোত্রের। অর্থাৎ দক্ষিণের একটা ছবি স্রেফ বাংলা নামধাম বসিয়ে ছেড়ে দেওয়া নয়। ছবিটাকে সত্যি সত্যিই বাংলায় এনে ফেলা। তাকে আদ্যন্ত একটা বাঙালি মেজাজ দেওয়া। ছবির স্থান-কাল-পাত্ররা সেখানে নিজের জমিতে পা গেঁথে দাঁড়িয়ে থাকে। ছবির গা থেকে ধুলো-মাটি-ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়া যায়। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ঠিক এই রকমই একটা ছবি।
বোঝে না সে বোঝে না
আবির, পায়েল, সোহম, মিমি
একটা বাস অ্যাক্সিডেন্ট আর দু’টো প্রেমের গল্প। আর তাদের ঘিরে থাকা আরও অজস্র মুখ। আবির আর পায়েল, সোহম আর মিমি। দুই জুটিকেই দেখতে বড় ভাল লাগে। খু-উ-ব মিষ্টি অভিনয় করেছেন চার জনেই। চিত্রনাট্যের সহায়তাও পেয়েছেন পুরোদস্তুর। সিচুয়েশন গড়ে তোলার মুন্সিয়ানাটি যদি পাকাপোক্ত হয়, চরিত্রের নির্মাণ যদি যত্ন করে সারা হয়, তা হলে অভিনেতাদের কাজটাও অনেক সহজ হয়ে যায়। বালুরঘাট থেকে প্রথম বার কলকাতায় এসে থতমত খাওয়া পায়েল বা মালদায় নার্সের চাকরি করা হেব্বি ডমিনেটিং টাইপ মিমি দু’টোর কনট্রাস্ট খুব ভাল খুলেছে। মিমির বড় পর্দার কেরিয়ারে এই ছবিটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। চশমা-আঁটা কড়া সমালোচক চাইলে কিছু এক্সেস খুঁজে পাবেন। কিন্তু গল্পের রস যদি খোলে, দর্শকের মন যদি ভরে তা হলে আর ও সব নিয়ে কে ভাবে? আবির আর সোহমের মধ্যেও কনট্রাস্ট কম না। আবির সেক্টর ফাইভে কাজ করা শহরের ছেলে। স্মার্ট, তবে স্ট্রিটস্মার্ট নয়। মনটা একটু বেশি রকমের ভাল। আর সোহম ক্যাবলা, ভিতু। মিমির দাপটে জড়োসড়ো। নায়ক-নায়িকার স্টিরিওটাইপ চেহারাগুলো বদলে দিয়ে এ ছবিতে বেশ একটা টাটকা বাতাস এনেছেন রাজ। তবে আবিরের চরিত্র সম্বন্ধে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। ‘অচেনা শহরের ছেলে’কে বিশ্বাস করতে পায়েলের দ্বিধা ওকে একটু বেশিই সেন্টিমেন্টাল করে দিল। ‘সবাই খারাপ না, কয়েক জনের জন্য সবার বদনাম হয়’-টয় বলে লেকচার না দিয়ে ব্যাপারটা আর একটু হিউমার নিয়ে দেখলে আরও ভাল লাগত, চরিত্রটার পক্ষে বাস্তবসম্মতও হত। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে গানগুলো ভালই লাগে। তবে ছবির দৈর্ঘ্য মিনিট পনেরো কম হলে ভাল হত। আর বাসের বাকি চরিত্রদের মধ্যে এক দম্পতি আর এক প্রেম হব-হব যুগলের ব্যাপারটা একটু বোরিং। দু’দু’টো প্রেমের গল্প তো দেখছিই। তার সঙ্গে আরও ফাউ না থাকলেও চলত। বরং এই সুযোগে অন্য শেডের চরিত্রগুলো আর একটু বেশি জায়গা পেলে বৈচিত্র বাড়ত।
কিন্তু রাজ কামাল করেছেন অন্য জায়গায়। সদর-মফস্সলকে দারুণ ভাবে মিশিয়েছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ মানে যে শুধু কলকাতা না, এটা আজকালকার আরবান ফিল্মের দৌলতে আমরা ভুলতে বসেছি। লন্ডন-নিউ ইয়র্ক নিয়ে খই ফুটছে, কোচবিহার বা কাটোয়া মানচিত্রের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। আবার তথাকথিত আম-আদমির জন্য যে সব ছবি তৈরি হচ্ছে, সেগুলো একেবারে বুদ্ধিশুদ্ধি বন্ধক দিয়ে দেখতে বসতে হচ্ছে। এই সঙ্কট কাটাতে কিন্তু ‘বোঝে না সে বোঝে না’-র মতো মনোগ্রাহী ছবি আরও বেশি করে দরকার। যেখানে বাড়ির ছাদে কাপড় শুকোনো হয়, নায়ক লুঙ্গি পরে দাঁত ব্রাশ করে, আবার প্রেমিকার তাড়া খেয়ে আধুনিক দোকানে জামাকাপড় কিনতেও যায়, ক্যাফেটেরিয়ায় গল্প করতেও বসে। গৌড়ের মতো একটা লোকেশন গানের দৃশ্যে কত সুন্দর করে ব্যবহার করা যায়, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।
থ্যাঙ্ক ইউ, রাজ চক্রবর্তী! তবে এ বার কিন্তু একটা পূণার্ঙ্গ মৌলিক ছবি দেখার দাবী রাখছি।
আর একটা শেষ প্রশ্ন। প্রায় ফাঁকা চেয়ারগুলোর সামনে একাই গলা ফাটাচ্ছেন লাল পতাকার ট্রেড ইউনিয়ন নেতা...এটা কি কোনও স্টেটমেন্ট ছিল?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.