দুই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাজিয়ায় পঠনপাঠন বন্ধ হতে চলেছে বার্নপুরের সুভাষপল্লি বয়েজ বিদ্যানিকেতন স্কুলে। শুক্রবার ওই স্কুলে ক্লাস বন্ধ রেখেছিলেন প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার প্রধান শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। স্কুলে পড়াশোনা আদৌও শুরু করা যাবে কিনা, তাও নিশ্চিতভাবে অভিভাবকদের জানাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শক।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বার্নপুরের সুভাষপল্লি এলাকায় একই পাঁচিল ঘেরা জায়গায় দু’টি পৃথক ভবনে চলে সুভাষপল্লি বিদ্যানিকেতনের বালক বিভাগ ও সুভাষপল্লি বিদ্যানিকেতনের বালিকা বিভাগ। বালিকা বিভাগের পড়াশোনা হয় সকালে ও বালক বিভাগের পড়াশোনা হয় দুপুরে। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই দু’টি স্কুলই জন্মলগ্ন থেকে এ ভাবে পঠনপাঠন চালিয়ে আসছে। বালক বিভাগের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় জানান, ছাত্র সংখ্যার তুলনায় তাঁদের শ্রেণিকক্ষ কম থাকায় ১৯৯৫ সাল থেকে তাঁরা বালিকা বিভাগের ভবনটির সাতটি শ্রেণিকক্ষ অস্থায়ীভাবে ছাত্রদের পঠনপাঠনের জন্য ব্যবহার করছেন। কিন্তু মাস চারেক আগে বালিকা বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা সুপ্রভা আচার্য বালক বিভাগের প্রধান শিক্ষককে চিঠি লিখে জানান, নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে বালিকা বিভাগের পঠনপাঠন দুপুরে শুরু করা হবে। ওই সাতটি শ্রেণিকক্ষ তাঁরা আর তাঁদের ছাড়তে পাড়বেন না। এই অবস্থায় সংকটে পড়েছে বালক বিভাগের পঠনপাঠন। সুব্রতবাবু বলেন, “ওই সাতটি শ্রেণিকক্ষ না পেলে আমাদের ছাত্ররা বসার জায়গা পাবে না। আমরা বালিকা বিভাগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছি। সিদ্ধান্ত ফেরত না নেওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে আমাদের পঠনপাঠন বন্ধ রাখতে হবে।” |
প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন পর হঠাৎ বালিকা বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা কেন দুপুরে তাঁদের পঠনপাঠন শুরু করতে চাইছেন? সুপ্রভাদেবীর দাবি, তাঁরা উচ্চমাধ্যমিক পড়ানোর অনুমোদন পেতে চলেছেন। যেহেতু দুপুরে স্কুল না হলে উচ্চমাধ্যমিকের অনুমোদন মেলে না তাই তাঁরা নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে দুপুরে পঠনপাঠন শুরু করেত চান। একইসঙ্গে তাঁর আরও দাবি, সকালে স্কুল হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে ছাত্রীরা স্কুলে আসতে পারে না। এই অবস্থায় বছর বছর ছাত্রী সংখ্যা কমে যাচ্ছে ও স্কুলের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমরা দুপুরেই স্কুল করব। সিদ্ধান্তেও বদলাবে না।”
এই অবস্থায় বিপাকে পড়ে গিয়েছে ছেলেদের স্কুলটি। প্রধান শিক্ষক জানান, এই মুহুর্তে তড়িঘড়ি শ্রেণি কক্ষ বানানো সম্ভব নয়। আবার ছাত্রদের শ্রেণিকক্ষ ছাড়া পড়াশোনা করানোও সম্ভব না। ফলে স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধই থাকবে। শুক্রবারেও স্কুলে পড়াশোনা হয়নি। স্বভাবতই, ছাত্রদের স্কুলে দিতে এসে এ কথা জানার পরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা। প্রধান শিক্ষক তাঁদের সমস্যাটি বোঝানোর চেষ্টা করলে অভিভাবকেরাও পাল্টা অভিযোগ তোলেন, শ্রেণিকক্ষের সমস্যা ভবিষ্যতে আসতে পারে জেনেও স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেননি কেন? অভিভাবকদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাওয়া হলে প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় ও পরিচালন সমিতির সম্পাদক ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের সাফাই, চার মাস আগে বালিকা বিভাগের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পরই তাঁরা শিক্ষা দফতরের সঙ্গে জড়িত সব স্তরেই একাধিকবার চিঠি লিখে জানিয়েছেন। কোনও ফল মেলেনি। এ’প্রসঙ্গে আসানসোল মহকুমার অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শক অসিত হাজরা জানান, বিষয়টি তাঁর নজরে আসার পরেই দুই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। |