নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট |
গ্রামবাসী-বিএসএফ সংঘর্ষের জেরে বিএসএফের ছোড়া গুলিতে এক গ্রামবাসীর মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল দক্ষিণ দিনাজপুরের ভারত-বাংলাদেশের হিলি সীমান্ত এলাকায়। বুধবার সন্ধ্যায় হিলি থানার লস্করপুর গ্রামের ঘটনা। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও এক ব্যক্তি। আহত হয়েছেন তিন বিএসএফ জওয়ানও। পোড়ানো হয় পুলিশের গাড়ি। প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার হিলিতে ২৪ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে জেলা কংগ্রেস।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সোলেমান মণ্ডল (৩০)। লস্করপুরের পাশে ধলপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। ওই এলাকার মোফাজ্জল মণ্ডল আশঙ্কাজনক। তিনি বালুরঘাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাস্থলে যান দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী। |
জ্বলছে পুলিশের জিপ। —নিজস্ব চিত্র |
তিনি বলেন, “বিএসএফের গুলিতেই ওই যুবক মারা গিয়েছেন। আত্মরক্ষার জন্যই তারা গুলি চালিয়েছে বলে বিএসএফ জানিয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রশাসনিক তদন্ত হবে।” উত্তর ফ্রন্টিয়ারের বিএসএফের ডিজি বি ডি শর্মা বলেন, “এই ঘটনার ডিআইজি পর্যায়ের তদন্ত হচ্ছে। কী পরিস্থিতিতে গুলি চালাতে হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। কাল বিএসএফের আধিকারিকেরা গিয়ে তদন্ত শুরু করবেন।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাচারের জন্য গরু মজুতের অভিযোগকে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত হয়। বিএসএফ জানায়, ওই গ্রামে প্রায় ২০০ মিটার কাঁটা তারের বেড়াহীন এলাকা রয়েছে। সেখান দিয়ে রাতের অন্ধকারে কয়েকশো গরু পাচার করা হবে বলে খবর মেলে। গরুগুলি গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে বলে খবর পান বিএসএফ আধিকারিকেরা। এর পরেই মহিলা জওয়ানদের নিয়ে বিএসএফ গ্রামে যায়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ভুয়ো খবরের ভিত্তিতে বিএসএফ গ্রামে ঢুকে প্রতিটি বাড়ি থেকে গরু ধরে আটক করা শুরু করে। এতেই একজোট হয়ে বাসিন্দারা বাধা দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে মহিলা বিএসএফ জওয়ানদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। মহিলারা লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে জওয়ানদের তাড়া করেন। বিএসএফ লাঠিচার্জ শুরু করতেই তাদের লক্ষ করে ঢিল, ইট ছোড়া হয়। এতে দুই মহিলা বিএসএফ জওয়ান এবং এক পুরুষ জওয়ানের মাথা ফেটে যায়। |
বুধবার সন্ধ্যায় হিলি থানার লস্করপুরে গ্রামবাসী-বিএসএফ ঘটনায়
জখম মহিলা। বালুরঘাট হাসপাতালে অমিত মোহান্তর তোলা ছবি। |
তার পরেই বিএসএফ গুলি চালায় বলে অভিযোগ। নিহত সোলেমানের বুকে গুলি লাগে। গোলমালের খবর পেয়ে তিনি ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। আহত মোফাজ্জলেরও বুকে গুলি লেগেছে। বিএসএফ জওয়ানেরা সাত রাউন্ড গুলি চালান বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।
এরপর বাসিন্দারা দল বেঁধে হিলি-বালুরঘাট রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশের একটি জিপ ঘটনাস্থলে আসতেই সেটিতে আগুন ধরানো হয়। পাঁচটি বাস এবং তিনটি ট্রাকেও ভাঙচুর চালান একদল বাসিন্দা। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পালাতে থাকেন। আধ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে লাঠিচার্জ করে অবরোধ তোলে। বাসিন্দাদের দাবি, ঘটনার পর থেকে চার জনের খোঁজ মিলছে না।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে বিএসএফ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। এর প্রতিবাদে বন্ধ ডাকা হয়েছে। মৃত ও জখমদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” |