|
|
|
|
লাল ফিতের ফাঁস |
এক্স-রেও বন্ধ সরকারি হাসপাতালে |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
শুধু মহকুমা বা জেলা সদর হাসপাতাল নয়, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজেও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে এক্স-রে পরিষেবা। কোথাও বন্ধ থাকার কথা সরাসরি স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার জরুরি এক্স-রের জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে পাঁচ-ছ’মাস পরে। দরে না পোষানোয় সরবরাহকারী সংস্থা এক্স-রে ফিল্ম দেওয়া বন্ধ করে দেওয়াতেই এই বিপত্তি বলে সরকারি সূত্রে খবর। আর এর জন্য দায়ী সরকারি লাল ফিতের ফাঁস।
অধিকাংশ হাসপাতালেই মজুত ফিল্মের ভাঁড়ার শূন্য। এই পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ রাখা ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে, এমন কোনও আশার আলোও দেখাতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা। ফলে চিকিৎসার প্রাথমিক এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই পরীক্ষার সুযোগটুকুও এখন মিলছে না সরকারি হাসপাতালে।
পায়ের হাড় ভাঙার পরে এক্স-রে করাতে গিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ মাস পরের ‘ডেট’ পেয়েছেন অবনী চক্রবর্তী। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত পরাণ হালদারের এক্স-রের জন্য এসএসকেএম হাসপাতাল ছ’মাস পরে সময় দিয়েছে। মস্তিষ্কের জটিল অসুখে আক্রান্ত সাত বছরের পাপান দাসের এক্স-রের জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সময় নিয়েছে পাঁচ মাস। সংশ্লিষ্ট রোগীদের চিকিৎসকেরা এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, যে সময়ে এক্স-রে করানোর সুযোগ মিলবে, তত দিনে হয়তো অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগী তত দিন বাঁচবেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
কেন এ ভাবে এক্স-রে ফিল্মের সরবরাহ বন্ধ হল?
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, পুরনো দামে জিনিস সরবরাহ করার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ২০১২-র ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু তা এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখনই বেঁকে বসে সরবরাহকারী সংস্থা। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তাদের পক্ষে ফিল্ম সরবরাহ করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “বধির্র্ত দামের বিষয়টি প্রস্তাব আকারে অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে। তাদের সম্মতি এলেই নতুন দাম চালু করা যাবে। তত দিন পর্যন্ত হাসপাতালের নিজস্ব তহবিল থেকে এক্স-রে ফিল্ম কিনে নেওয়ার জন্য হাসপাতালের সুপার এবং জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এতেও সমস্যা মিটছে না। কারণ তহবিল থেকে কত টাকা পর্যন্ত এক্স-রে ফিল্ম কেনার জন্য ব্যয় করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ফলে অডিটের সময়ে অসুবিধা হতে পারে।
কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারের কথায়, “প্রতি মাসে এক্স-রে ফিল্ম কিনতে লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এক লক্ষ টাকার বেশি দামের জিনিস কিনতে গেলে টেন্ডার ডাকতে হবে। সেই টেন্ডারের জন্য আবার সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন। সে এক লম্বা প্রক্রিয়া!”
বর্ধমান জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তাও নিজস্ব তহবিল থেকে জিনিস কেনার ব্যাপারে এমন সমস্যার কথা জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “প্রতি মাসেই তো ওই জিনিসগুলি কেনা যায় না।
এক সঙ্গে তিন-চার মাসের ফিল্ম কিনে রাখা দরকার। সে ব্যাপারে অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখেছি। কিন্তু জবাব আসেনি।”
সরবরাহকারী সংস্থার তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, সঠিক মানের সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য টাকা বাড়ানোর কথা তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। কিন্তু সরকারি তরফে কান দেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|