|
|
|
|
জলসা-কাণ্ডে বিতর্কের ঝড়, সাসপেন্ড এক নেতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দলের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে ভাঙড়ের জলসা-খ্যাত মীর তাহের আলিকে সাসপেন্ড করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হল না। ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ভাঙড়ে এক জলসায় চলে স্বল্পবাস তরুণীদের উদ্দাম নাচ-গান। তাঁদের দিকে টাকাও ছোড়েন তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সদস্য তাহের সেই জলসায় ছিলেন বলে অভিযোগ।
রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বুধবার জানান, বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করবেন না। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি বৈঠক করে অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করেছে। পরে অভিযুক্তদের বহিষ্কারও করা হতে পারে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “দলীয় মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কোনও কাজ যদি কোনও অনুমোদিত কর্মী করেন, তা হলে রেহাই পাবেন না।”
১ জানুয়ারি ভাঙড়ের ওই অনুষ্ঠানের দৃশ্য বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তৃণমূল নেতৃত্ব তাহেরকে সাসপেন্ড করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে নাচের সময়ে টাকা ছড়ান আইনাল আলি। তিনি স্থানীয় ঘটকপুকুর গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন কমিটির সম্পাদক। ভাঙড় গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য এহেসান আলি মোল্লাও অনুষ্ঠানে ছিলেন। নাচ-গান চলে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, অনুষ্ঠানের অনুমতি ছিল না। তাহেরকে এ দিন ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম বলেন, “ওই অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু জানি না। কেউ আলোচনাও করেনি।” |
|
ভাঙড়ের এই অনুষ্ঠান নিয়েই বিতর্ক।—নিজস্ব চিত্র |
তৃণমূল অবশ্য তাহেরকে দ্রুত সাসপেন্ড করেই ওই পদক্ষেপকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ক্ষমা চেয়েছিলেন সিপিএম নেতা আনিসুর রহমান। সেই ঘটনার উল্লেখ না-করেও ডেরেক টুইটারে লিখেছেন, ‘তৃণমূলের কাছে সুসংস্কৃতি এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরোধিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ রাজ্যে এবং তৃণমূল দলে মহিলাদের প্রতি অসম্মান একেবারেই বরদাস্ত করা হয় না। যার অর্থ দ্রুত এবং কঠোর ব্যবস্থা। অন্তঃসারশূন্য ক্ষমাপ্রার্থনা নয়’! ডেরেকের আরও দাবি, দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রায় সব অনুষ্ঠানেই রক্তদান শিবির এবং দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বইপত্র দেওয়া হয়েছে। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও এ দিন বর্ধমানে বলেছেন, “ভাঙড় একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা চাই সুস্থ সংস্কৃতি। যা সিপিএম ৩৪ বছরে নষ্ট করে দিয়েছে। হোপ ’৮৬ ভুলে গেলে চলবে না!”
সম্প্রতি তৃণমূলের অনেক নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। কোনও ক্ষেত্রেই তৃণমূল নেতৃত্বকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, ভাঙড়ে কোনও বিরোধী দল বা তার নেতা নন, বিপন্ন তৃণমূলের নিজের সম্মানই। তাই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েছেন নেতৃত্ব। তাঁদের ব্যাখ্যা, ভাঙড়ের বিচ্ছিন্ন ঘটনা তৃণমূলের সংস্কৃতি এবং রুচির পরিচায়ক নয়।
তবে সমাজের বিভিন্ন মহল এ দিন ভাঙড়-জলসার নিন্দায় সরব ছিল। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা বলেন, “স্বাধীনতার এত বছর পরেও এমন হতে পারে, তা কল্পনার অতীত!” বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যালের আশঙ্কা, “এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির শিকার হবে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা।” তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ সাংসদ কবীর সুমনের মতে, “ব্রিগেডে শহিদ দিবসের মঞ্চে যদি ‘পাগলু’র গান হয়, বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর যদি রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে ধেইধেই করে নাচতে পারেন, তা হলে এঁদের আর কী দোষ দেব?” একই প্রসঙ্গ তুলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, “যে দিকে এবং গতিতে তৃণমূল এগোচ্ছে, তাতে এমন ঘটনা অবধারিত!”
দক্ষিণ ২৪ পরগনারই ক্যানিংয়ে এ দিন কংগ্রেসের সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেন, “তৃণমূল এখন বিচিত্রানুষ্ঠানের দল হয়ে গিয়েছে! ‘প্রতিষ্ঠাতা দিবস’ লিখে থানার সামনে জলসা হচ্ছে!” আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, “মমতা দাবি করেন, তিনি নাকি ছবি এঁকে দল চালান! কিন্তু ওঁর ছবির নায়কেরা (দলের নেতা-কর্মী) যে এত ‘ডার্টি’, জানা ছিল না!” |
|
|
|
|
|