নয়াগ্রামে হাতির মৃত্যু, দেখতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে বনকর্মী |
গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল দলমার পালের একটি মাঝবয়সী পুরুষ হাতির। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম ব্লকের নরসিংহপুর গ্রামে মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। সুবর্ণরেখা নদীর চর লাগোয়া ওই গ্রামের একটি আখ খেতের পাশে পড়ে থাকা মৃত হাতিটিকে দেখতে গিয়ে বুধবার গ্রামবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়েন বনকর্মীরা। ফসলের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বনকর্মীদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বনকর্মীরা ঘেরাও মুক্ত হন। এরপর সেখানেই ময়না-তদন্তের পর হাতিটিকে দাহ করা হয়। হাতিটির ভিসেরা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট না-পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়জানিয়েছেন ময়না তদন্তকারী প্রাণী চিকিৎসকেরা। তবে প্রাথমিক ভাবে অনুমান, হৃদযন্ত্র ও ফুসফস বিকল হয়ে হাতিটির মৃত্যু হতে পারে। খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “হাতিটির শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। দাঁত দু’টি অক্ষত ছিল।” বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস খানেক আগে হাতির পালটি ওড়িশায় চলে গিয়েছিল। ওড়িশার দিক থেকে তাড়া খেয়ে দিন চারেক আগে হাতিরা নয়াগ্রামে ফিরে এসেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত চার দিনে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে হাতিরা নয়াগ্রামের মলম, কলমাপুকুরিয়া, শুকদেবপুর, নরসিংহপুর, নিমাইনগর, কুড়চিবনির মতো ১০-১২টি গ্রামে হামলা চালাচ্ছে। এমনকী রাতে সুবর্ণরেখা পেরিয়ে কেশিয়াড়ি ও সাঁকরাইল ব্লকের আখ ও সব্জি খেতেও হানা দিচ্ছে হাতিরা। বন দফতরের গাফিলতিতে হাতির পাল এলাকায় ফিরে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা। যদিও গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বন দফতর জানিয়েছে, জোর করে হাতির পালের নিজস্ব গতিপথ বদলানোর চেষ্টা করা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। সেই কারণেই মাত্র চার দিনে আখ, কপি-সহ প্রায় দু’শো বিঘে জমির শীতকালীন সব্জিচাষের ব্যাপক ক্ষতি করেছে হাতিরা। হাতির পালটির গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন দফতর। |
১৯৯৮ সাল থেকে প্রতি বছর শীতের মরসুমে দলমার হাতির পাল নয়াগ্রামে আসছে। আগে কয়েক মাস নয়াগ্রামে কাটিয়ে হাতিরা ফিরে যেত। ২০১১ সালে অবশ্য মাত্র কয়েকটা দিন নয়াগ্রামের জঙ্গলে কাটিয়ে হাতিরা নয়াগ্রাম ছেড়ে ওড়িশায় চলে গিয়েছিল। ফলে চিরাচরিত ফসল ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো গিয়েছিল। ওই বছর হাতিরা মর্জি মাফিক মাস খানেক ওড়িশায় কাটিয়ে ফের নয়াগ্রাম হয়ে চাঁদড়ার দিকে ফিরে গিয়েছিল। কেন ২০১১ সালে হাতিরা ওড়িশা চলে গিয়েছিল? বন দফতরের ব্যাখ্যা, আরও ভাল পরিবেশের খোঁজ পেলে হাতিরা নতুন নতুন এলাকায় যায়।
এ বার (২০১২) গত নভেম্বরের গোড়ায় চাঁদড়ার দিক থেকে কলাইকুণ্ডা হয়ে আসা হাতির পালটি সুবর্ণরেখা পেরিয়ে নয়াগ্রামে ঢোকে। কিন্তু নয়াগ্রামের চাঁদাবিলা বনাঞ্চল হয়ে ওড়িশার দিকে যেতে গিয়ে প্রথমে বাধা পায় হাতিরা।
২০১১ সালের শিক্ষা নিয়ে ২০১২তে হাতির যাত্রাভঙ্গ করতে পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামের সীমানা বরাবর খাল কেটেছিল ওড়িশা সেচ দফতর। রাজ্য বন দফতর সূত্রের খবর, ২০১১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে হাতির পাল ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ বন্যপ্রাণ বিভাগের অন্তর্গত বেতনটি বনাঞ্চলে ঢুকে সেখানে মাস খানেক ছিল। গতবার ওড়িশার ওই এলাকায় লোকালয়ে হাতির হানায় ফসল ও সম্পত্তির ভালই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। আর এতেই উদ্বিগ্ন হয়ে এলাকায় হাতির ঢোকা আটকাতে তড়িঘড়ি ওই খাল কাটা হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ওড়িশার সেচ দফতর ও ময়ূরভঞ্জ বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ। খাল কেটেও কিন্তু হাতির পালকে আটকানো যায়নি। সাময়িক বাধা পেলেও ওড়িশার খুঁটাপালের কাছে খালটির গভীরতা কম থাকায় চতুর হাতিরা খাল পেরনোর উপযুক্ত পথের সন্ধান করে নেয়। গত ২৬ নভেম্বর ১২০টি হাতির পাল ‘বিকল্প ওই পথে’ ওড়িশার বনাঞ্চলে ঢুকে পড়ে। ওড়িশার দিক থেকে তাড়া খেয়ে দিন চারেক আগে হাতির পালটি নয়াগ্রামের জঙ্গলে ফিরে আসে। |