চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মীদের পাঠানো বিদায়ী চিঠিতে টাটা গোষ্ঠীকে আরও আগ্রাসী হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন রতন টাটা। তবে একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তা করতে হবে নিজেদের নীতি, মূল্যবোধকে বিসর্জন না দিয়েই। নতুন কর্ণধার হিসেবে যেন ঠিক সেখান থেকেই ইনিংস শুরু করলেন সাইরাস মিস্ত্রি। গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হিসেবে বুধবার কর্মীদের প্রথম চিঠি দিয়েছেন তিনি। আর সেখানে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পূবর্সূরির সেই দিশা নির্দেশ থেকে তাঁর আমলেও সরে আসবে না টাটা গোষ্ঠী। তবে বিশ্ব জুড়ে ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে আরও বড় পা ফেলবে তারা। শুধু আগামী দু’বছরেই লগ্নির অঙ্ক দাঁড়াবে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। টাটা ব্র্যান্ডকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে।
|
সাইরাস মিস্ত্রি |
ভারতের শিল্পমহল বরাবরই মনে করে, রতন টাটার অন্যতম বড় কৃতিত্ব কোনও ভারতীয় সংস্থাকে বহুজাতিক করে তোলার পথ দেখানো। কোনও দেশি ব্র্যান্ডকে বিশ্বজোড়া পরিচিতি দেওয়ায়। কিন্তু একই সঙ্গে তাদের অভিমত, টাটা এখন বিশ্বে বহুল পরিচিত ব্র্যান্ড হলেও বিভিন্ন দেশে পণ্য পৌঁছে তাকে আরও অনেক বেশি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করার চ্যালেঞ্জ সাইরাসেরই। এ জন্য হয়তো ব্যবসার অনেক কৌশলই ঢেলে সাজতে হবে শতাব্দী প্রাচীন এই কর্পোরেট সংস্থাকে। কিছু ক্ষেত্রে কমাতে হবে বাড়তি খরচ। বাড়াতে হবে শেয়ার পিছু রিটার্নের অঙ্কও। কিন্তু সবথেকে বড় শর্ত হল, এ সব করতে গিয়ে নিজেদের নীতি, মূল্যবোধ কিংবা স্বচ্ছতার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারবে না টাটারা। কারণ, সে ক্ষেত্রে নড়ে যাবে সংস্থার মূল ভিত্তিই।
এ দিন শিল্প মহলের সেই মনের কথাই যেন চিঠিতে তুলে এনেছেন সাইরাস। জানিয়েছেন, নীতি আর মূল্যবোধই হল গোষ্ঠীর ডিএনএ। এই যুগলবন্দীই আর পাঁচটি সংস্থার থেকে আলাদা করে দেয় টাটা গোষ্ঠীকে। তাই যে আদর্শ এবং ঐতিহ্য বয়ে চলার পথ রতন টাটা দেখিয়ে গিয়েছেন, তার থেকে সরে না আসার প্রতিজ্ঞাও কর্মীদের সামনে তুুলে ধরেছেন তিনি। এ জন্য চেয়েছেন সকলের সহযোগিতাও। স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র মুনাফা কিংবা শেয়ারে চড়া রিটার্নের ‘লোভে’ এই আদর্শ থেকে সরে আসবে না টাটা গোষ্ঠী। তাঁর মতে, সংস্থার শীর্ষ পদে পরিবর্তন এক ঝলক টাটকা হাওয়ার মতো। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে তার যাত্রা শুরু হবে পুরনোর সব ভালকে ভাসিয়ে দিয়ে। টাটা গোষ্ঠীর কোনও সংস্থায় শীর্ষ পদে যে এখনই কোনও পরিবর্তন হবে না, তা-ও জানিয়ে রেখেছেন তিনি।
অবশ্য সাফল্য পেতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার ধরনে যে পরিবর্তন আনতে হবে, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাইরাস। কারণ তাঁর কথায়, নিজেদের সম্পর্কে উঁচু ধারণা পোষণ করা ভাল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে এক সময় প্রতিযোগিতায় পড়া অনিবার্য। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে কেন্দ্রের প্রশংসাও করেছেন তিনি। |