পরিকাঠামোর উন্নয়ন, পূর্ণ সময়ের চিকিৎসক নিয়োগ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে এক গুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্যের শ্রম দফতরের ইএসআই হাসপাতাল টাস্ক ফোর্স কমিটি। আসানসোল ও দুর্গাপুর ইএসআই হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য শ্রমমন্ত্রকের কাছে পাঠানো একটি রিপোর্টে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
টাস্ক ফোর্স কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল হাসপাতালের অধীনে বার্নপুর উপকেন্দ্রে কোনও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। প্রয়োজনে রোগীদের মূল কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স থাকাও জরুরি। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম চিকিৎসক থাকায় প্রয়োজন দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ করা। অন্য দিকে, রানিগঞ্জ উপকেন্দ্রটি মঙ্গলপুর শিল্পতালুক থেকে সরিয়ে আনার জেরে শিল্পতালুকের রোগীরা খুব কমই সেখানে পৌঁছে উঠতে পারেন। ফলে কমিটির মতে, পরিকাঠামোর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে।
কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এইচএলজি (হেমেনলাল গুপ্ত হাসপাতাল) হাসপাতালের সঙ্গে আসানসোল ইএসআই হাসপাতালের চুক্তি ছিল, তার ইএসআই হাসপাতালের রোগীরা ওই হাসপাতালে আধুনিক পরিষেবা পাবেন। কিন্তু সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ইএসআই হাসপাতালের প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে এইচএলজি হাসপাতালের কাছে। ফলে ওই হাসপাতালের রোগীও ভর্তি নিচ্ছে না এইচএলজি। ফলে রোগীদের নিয়ে যেতে হচ্ছে অন্ডাল বা রাজ্যের অন্যত্র, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। টাস্ক ফোর্স কমিটির সুপারিশ, ইএসআই হাসপাতালকে দ্রুত বকেয়া টাকা মিটিয়ে শীঘ্র পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে আধুনিক পরিষেবার কথা ছেড়ে দিলেও আসানসোল ইএসআই হাসপাতালে ঠিক নেই ন্যূনতম চিকিৎসা পরিকাঠামোটুকুও।
চুক্তির ভিত্তিতে অস্থি বিশেষজ্ঞ থাকলেও তা দিয়ে প্রয়োজন মিটছে না। দ্রুত পর্যাপ্ত হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট নিয়োগ জরুরি। এক্স-রে যন্ত্র থাকলেও কর্মী না থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অন্য দিকে, প্রয়োজনের বেশি পরিমাণে রয়েছে আলট্রা সোনোগ্রাফি যন্ত্র। আসানসোলের এইচএলজি হাসপাতালের ফিন্যান্স ম্যানেজার তপন মজুমদার জানান, ছ’মাস ধরে পাওনা টাকা মিলছে না। তিন বার দরপত্র ডাকা হলেও প্রতি বারই তারা দরপত্র তুলে দিয়েছেন। এখনও কাজের ‘অর্ডার’ পাননি। কিছু দিন আগে টাস্ক ফোর্স কমিটি তাদের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছে। তাদের কথা মতো কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তাঁরা চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তপনবাবু। তবে এখনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি।
একই অবস্থা দুর্গাপুর ইএসআই হাসপাতালেরও। কমিটির সুপারিশ, দুর্গাপুর হাসপাতালে ল্যাপ্রোস্কপি যন্ত্র বসাতে হবে। আরও ৫০টি শয্যা বাড়ানোর জন্য হাসপাতাল ভবনের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ করতে হবে। খারাপ এক্স-রে যন্ত্র সারানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টাস্ক ফোর্স কমিটির সদস্য তথা সিটুর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিনয়কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, দুর্গাপুরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। চুক্তির ভিত্তিতে যে চিকিৎসকদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই অবসরপ্রাপ্ত। সময় মতো তাঁদের পাওয়া যায় না। দুর্গাপুর মিশন হাসপাতাল টাকা না পেয়ে পরিষেবা বন্ধ করেছে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালের সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। নতুন সরকার এসে আর উদ্যোগী হয়নি।
বিনয়বাবুর বক্তব্য, রাজ্য সরকারে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকাকালীন তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী অনাদি সাহুর নেতৃত্বে দুর্গাপুর মহকুমার ইএসআই হাসপাতালের অধীন বেনাচিতি, কাঁকসা ও অঙ্গদপুরে তিনটি উপকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেনাচিতিতে একটি কেন্দ্র নির্মাণও হয় সেই সময়ে। কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি দু’টি উপকেন্দ্র গড়ার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।
বিনয়বাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার দেশে ১২টি ইএসআই হাসপাতালে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানিকতলা ও জোকায় কাজ শুরু হচ্ছে। আসানসোল হাসপাতাল চত্বরে প্রায় ৯০ বিঘা জমি পড়ে রয়েছে। এখানে অন্য সব সুবিধাও রয়েছে। এখানে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য আমরা বারবার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু কোনও জবাব পাইনি।”
টাস্ক ফোর্সের সদস্য তৃণমূলের যুব নেতা অভিজিৎ ঘটক বলেন, “রাজ্য সরকার এই বিষয়গুলি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে। সে কারণেই এই টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে।” |