বিরোধীরা নয়, দলের অন্য গোষ্ঠী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে কি নাসে দিকেই নজর রাখতে হচ্ছে পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতৃত্বকে। রবিবার শেষ হওয়া জেলার কয়েকটি স্কুল নির্বাচনে তৃণমূল জয় পেলেও, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে কিছু ক্ষেত্রে তাদের আসন হারাতে হয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিরও বিশেষ সুযোগ নিতে পারেনি বিরোধীরা।
নিতুড়িয়া ব্লকের রানিপুর কোলিয়ারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে গত বার তৃণমূলের পাঁচটি আসন ও বামফ্রন্টের দখলে একটি ছিল। এ বার তৃণমূল একটি আসন খুইয়ে চারটি ধরে রাখে। বামফ্রন্ট আসন বাড়িয়ে দু’টি করে। তৃণমূলের খাসতালুকে এই ফল কেন? তৃণমূলের খোদ নিতুড়িয়া ব্লক সভাপতি শান্তিভূষণ প্রসাদ যাদবের কথাতেই স্পষ্ট গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ফল। তিনি বলেন, “আমরা এ বার ছ’টি আসনেই জিততাম। কিন্তু আমাদেরই যুব সংগঠনের একাংশ ছ’টি আসনেই পাল্টা প্রার্থী দিয়ে ভোট কাটে। তাই নিশ্চিত দু’টি আসন আমাদের হারাতে হল।” তিনি জানান, দলের জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাবেন। যুব তৃণমূলের নিতুড়িয়া ব্লক সভাপতি জয়দেব চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “যুব সংগঠন পৃথক ভাবে একটি আসনেও প্রার্থী দেয়নি। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই মিথ্যা রটনা হচ্ছে।”
সাঁতুড়ি ব্লকের মুরাডি শ্রীরাধাবিনোদ পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ছ’টি আসনেই তৃণমূল-এসইউসি জোট জয়ী হলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়ানো যায়নি। সাঁতুড়ির তৃণমূল ব্লক সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “আমাদের জোটের ছয় প্রার্থী আমাদেরই যুব সংগঠনের চার প্রার্থী ও বামফ্রন্টের প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই করেছে।” এই স্কুলের পরিচালন সমিতি আগে বামফ্রন্টের দখলে ছিল। পুরুলিয়া ২ ব্লকের বেলমা রঘুনন্দন উচ্চ বিদ্যালয় এবারও নিজেদের দখলে রাখল তৃণমূল-জেএমএম জোট। পাড়া ব্লকের বড়াসিনি নন্দলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষমতা এত দিন বামফ্রন্টের ছিল। এ বার সেখানে ছ’টির মধ্যে চারটি আসন দখল করেছে তৃণমূল-জেএমএম জোট। বাকি দু’টি জিতেছে বামফ্রন্ট। পুরুলিয়া ২ ব্লকের শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয় আগে বামফ্রন্টের দখলে ছিল। এবারও পিডিএসকে সঙ্গে নিয়ে বামফ্রন্ট পাঁচটি আসন ধরে রাখে। একটি ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল।
আবার ঝাঁপড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বামফ্রন্ট, বিজেপি, কংগ্রেস ও তৃণমূল সকলেই ছ’টি করে প্রার্থী দিয়েছিল। তৃণমূল এখানে একটি আসন বাড়িয়ে মোট চারটিতে জিতেছে। বাকি ২টি আসন পেয়েছে বামফ্রন্ট। এখানে পরাজিত হয়েছেন বিজেপির খোদ জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অভিভাবকরা যা রায় দিয়েছেন, তা মাথা পেতে নিয়েছি।” বোরো থানার ধরমপুর গার্লস স্কুলে এ বারও সিপিএম জিতেছে। মানবাজারের থানার মহড়া হাইস্কুলও তৃণমূল দখলে রাখে। হুড়া থানা মজফ্ফর আহমেদ আকাডেমির ছ’টি আসনের মধ্যে ২টি করে আসনে সিপিএম এবং তৃণমূল জিতেছে। বাকি দু’টি আসনের ফল অমীমাংসিত রয়েছে। রবিবার সুইসা নেতাজি সুভাষ গ্রন্থাগারে নিবার্চন ছিল। আটটি আসনের সবকটিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “দীর্ঘ দিন পর মানুষ নিজের রায় দিতে পারছেন। এত দিন তো নির্বাচনই হত না।” তবে তাঁর স্বীকারোক্তি, “নিতুড়িয়া ও সাঁতুড়ি এলাকায় নির্বাচনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কিছুটা প্রভাব পড়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে সাবিকর্র্ ভাবে আমাদের ফল ভাল হয়েছে।” |