বাড়ি চড়াও হয়ে গলায় ভোজালি ধরে মুখ বেঁধে এক বধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সুতি থানার গাজিপুর গ্রামে। ওই মহিলা জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। সোমবার সন্ধ্যা রাতে ওই মহিলার স্বামী পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছেন। পুলিশও ধর্ষণের অভিযোগ গ্রহণ করে দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে। তবে অভিযুক্ত পলাতক।
পুলিশ এই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৪৪৮ এবং ৩৭৬ ধারায় মামলা রুজু করেছে। কিন্তু জঙ্গিপুর ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের সরকারি আইনজীবী রামপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, “অভিযোগকারিনীর বয়ান অনুযায়ী এই দু’টি ধারার সঙ্গে ৩৮৪ নম্বর ধারাটিও যোগ করা উচিত ছিল। তবে প্রাথমিক ভাবে যে ধারাতেই মামলা রুজু করা হোক, চার্জ গঠনের সময়ে নয়া ধারা যোগ করা যেতেই পারে।” জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, “ধর্ষণ বা মহিলা নির্যাতনের ঘটনায় তদন্তে কোনওরকম গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না। অভিযোগকারিনীর বক্তব্য শুনেই মামলা রুজু করা হবে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি, ওই মহিলা কী বয়ান দিয়েছেন এবং কী ধারা তাতে যোগ করা উচিত।”
ওই মহিলার পরিবার খুবই দরিদ্র। ইট ভাটায় মাটি সরবরাহের কাজ করেন তাঁর স্বামী। ওই মহিলার তিন সন্তান। তিনি বলেন, “আমার তিন ছেলেমেয়ের কেউই এই দিন বাড়ি ছিল না। ছিলেন না স্বামীও। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ আমি বারান্দায় কাপড় টাঙিয়ে ছাগল রাখার বন্দোবস্ত করছিলাম। তখনই পিছন থেকে আমারই শাড়ির আঁচল মুখে চেপে ধরে কেউ। তাকিয়ে দেখি গ্রামেরই এক যুবক। তাকে আমি চিনি। সে আমার গলায় একটা ভোজালি চেপে ধরে। তারপরে আমার উপরে অত্যাচার করে।” তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তার স্বামী ঘরে ফেরেন। তিনি বলেন, “আমি দেখি বারান্দায় ওই যুবক আমার স্ত্রীর উপরে অত্যাচার করছে। আমাকে দেখেই ওই যুবক পালায়। এরপরেই প্রতিবেশীদের কথা মতো থানায় যাই স্ত্রীকে সঙ্গে করে।” বিকেলে মেডিক্যাল পরীক্ষায় ওই মহিলাকে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গিয়েছে।
মুর্শিদাবাদে ধর্ষণের ঘটনা এখন বেশি নথিভুক্ত হচ্ছে বলে আইনজীবী ও পুলিশ সূত্রে খবর। এই সূত্রগুলি জানাচ্ছে, ধর্ষণের ঘটনা সচরাচর পুলিশের কান পর্যন্ত পৌঁছয় না। কারণ মহিলারা সহজে এই অপমানের কথা বলতে চান না। তাঁদের পরিবারও চান না তা প্রকাশ্যে আসুক। তা ছাড়া, বারবার আদালতে দৌড়োনো বা পুলিশের কাছে যাওয়ার হ্যাপাও নিতে চান না অনেকে। অভিযুক্ত আবার আক্রমণ করতে পারে, এই আশঙ্কাও থাকে। সেই সঙ্গে পুলিশও সর্বদা সহযোগিতা করত না বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আদালতে জমে রয়েছে অনেক মামলাই।
বহরমপুর জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় বলেন, “জেলায় মোট জমে থাকা মামলার সংখ্যা ৯৯ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ৪২ শতাংশই ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের। তার আবার ৪ শতাংশ মতো ধর্ষণের মামলা। ধর্ষণের মামলাগুলির প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই চার্জশিট দিয়ে দিয়েছে পুলিশ।” কিন্তু তবু জমে থাকা মামলার মীমাংসা হচ্ছে না। দেবাশিসবাবুর কথায়, “জেলায় আদালত রয়েছে ৪৮টি। কিন্তু ৭০ লক্ষ বাসিন্দার এই জেলায় আদালতের সংখ্যা না বাড়লে এই সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে না। রাজ্য সরকারের কাছে এই নিয়ে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।” জঙ্গিপুরের সরকারি আইনজীবী সাক্ষীগোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের যে সব মামলা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে সব মামলার ক্ষেত্রে সাজা হওয়ার সংখ্যা অনেক কম।”
সাক্ষীগোপালবাবু জানান, অনেক সময়েই ধর্ষণের মামলার আপোষে মীমাংসা হয়ে যায়। ধর্ষিতাকে বিয়ে করে নেয় অভিযুক্ত, এমনও দেখা গিয়েছে। তাঁর কথায়, “পুলিশের উচিত সব দিকেই নজর রাখা। তা হলে ধষর্ণের মামলার নিষ্পত্তি হতে পারবে। তাতে সাজা হবে। সাজাপ্রাপ্তদের দেখে সেক্ষেত্রে ধর্ষণের সংখ্যাও কমবে।”
ধর্ষিতার মেডিক্যাল টেস্ট নিয়ে জটিলতার কথা স্বীকার করেন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল। তাঁর কথায়, “কোনও ধর্ষিতার মেডিক্যাল টেস্টের পরে সোয়াব টেস্ট করা হয় কলকাতায়। সেই রিপোর্টের সঙ্গে চিকিৎসকের রিপোর্ট না মিললে সেই চিকিৎসক বিপদে পড়বেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে পুলিশ অনেক সময়ে যে মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁকে নিয়ে আসেন অনেক দেরি করে। সেটা যদি দ্রুত হয়, তবে চিকিৎসকের সুবিধা হয়।” সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “কোনও মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন কি না, তা চিকিৎসক বলতে পারেন না। বড়জোর বলা যায় সহবাস হয়েছে কি না এবং শরীরে কোনও আঘাত রয়েছে কি না।” |