সম্পাদক সমীপেষু...
কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলল না যে!
অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরী সাক্ষাৎকারে (‘কেবল গুজরাত...’, ১৮-১২) অত্যন্ত খেদের সঙ্গে জানিয়েছেন যে, ভারতীয় গণতন্ত্র বিপন্ন। এমনকী থেকেও নেই বললেই হয়। ভারত নিজের রাষ্ট্রসীমার মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তি, সন্ত্রাসবাদ, অন্তর্ঘাত ইত্যাদি প্রতিরোধ করার জন্য যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এর ফলে, অগণিত তরুণ-তরুণীর তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেছে (সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের প্রাণও যে ঝরে গেছে মুম্বই, দিল্লি, পুণে ইত্যাদিতে, পাকিস্তান সমর্থিত ও প্ররোচিত সন্ত্রাসের ফলে, যে সব নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে তা অবশ্যই ধর্তব্য নয়)। যদি আমাদের গণতন্ত্র হিসেবে গর্ব করতে হয়, তবে চিন, পাকিস্তানকে জানিয়ে দেওয়া উচিত যে, এসো ভাই, আমরা গণতান্ত্রিক, তোমাদের একজন মার্ক্সবাদী ও অন্য জন ইসলামি স্বৈরতন্ত্র, অতএব তোমাদের তো সে দায় নেই, তোমরা এসে আমাদের লুঠ করো, ভেঙে দাও, আমরা প্রতিরোধ করব না। তবেই না প্রমাণ হবে আমরা গণতন্ত্র! আর যারা এ রকম কাছা খোলার প্রতিবাদ করে তারা জঘন্য সাম্প্রদায়িক। অধিকাংশ শিক্ষিত বাঙালিও তাদের মধ্যে আছেন।
কিন্তু কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল না যে?
প্রথম প্রশ্ন, গোলওয়ালকরকে গ্রেফতারের প্রশ্নে নাকি গোবিন্দবল্লভ পন্থ টালবাহানা করেছিলেন। তার পর গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরোলে দেখা গেল, ‘গোলওয়ালকর পগারপার’! কোথায় সেই অগম্য সীমাহীন পগার, যা পার হয়ে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরোয়ানাও গোলওয়ালকরকে ছুঁতে পারেনি? গোলওয়ালকর মারা গেছেন ১৯৭৩ সালে। এর মধ্যে সারা ভারত ঘুরে বেড়িয়েছেন। প্রচুর ছবি তোলা হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা গেল না?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, পুরো মুসলমান সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে মুসলমান শাসকদের ক্লিন চিট দেওয়া নিয়ে। নরেন্দ্র মোদী না-হয় ঘৃণ্য। আর তিনি যে স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে বিশ্বাস রাখেন সেটা না-হয় সিংহচর্মাবৃত গর্দভের কাজ। কিন্তু আমরা গোলা লোকেরা তো জানি যে, সাম্প্রদায়িক হিংসায় দু’তরফেরই দোষ থাকে, যদিও সব সময় সমান দোষ নয়। কিন্তু গোটা সাক্ষাৎকারটার মধ্যে হিন্দুর দোষ আর মুসলমানের প্রশংসাই শুধু পাওয়া গেল যে!
তার পর, লেকে বেড়াতে গিয়ে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আবিষ্কার করলেন, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি সাম্প্রদায়িক, গোলওয়ালকরের দর্শন ছিল, হিন্দুদের অধীনে মুসলমানদের থাকতে হবে (যদিও পাকিস্তান-বাংলাদেশে মুসলমানদের অধীনে হিন্দুদের থাকাতে কারও কোনও আপত্তি হওয়া উচিত নয়), ইত্যাদি। কেন এই বিচিত্র একপেশে ইতিহাস (?) পরিবেশন?
শ্রীরায়চৌধুরীকে মনে করিয়ে দেওয়া যাক, ১৯৫০ সালের হিন্দু গণহত্যা (দাঙ্গা নয়) সবচেয়ে বীভৎস আকার ধারণ করেছিল বরিশাল জেলায়। এই গণহত্যার ইতিহাস আজকের প্রজন্ম জানে না, কারণ এ সব লেখা আজকের ভোটব্যাঙ্ক-রাজনীতির দিনে ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ নয়। পুরো গণহত্যাটা পূর্ব পাকিস্তান সরকারের চিফ সেক্রেটারি আবদুল আজিজ-এর পরিকল্পিত, যাঁকে বি কে নেহরু তাঁর আত্মজীবনীতে ‘কুখ্যাত হিন্দুবিরোধী’ বলেছেন। এই বাবদে ড. জয়ন্তকুমার রায়ের ‘ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ন্যাশনালিজম অন ট্রায়াল’ পঠিতব্য। বরিশালের মানুষ, নমঃশূদ্র নেতা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইন ও শ্রমবিষয়ক মন্ত্রী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ৮ অক্টোবর ১৯৫০ তারিখের পদত্যাগপত্র অনুযায়ী শুধু বরিশাল জেলাতেই আড়াই হাজার হিন্দু খুন হয়েছিলেন। পুরো পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাটা দশ হাজার ছাড়িয়েছিল। আর কত হিন্দু মেয়ে ধর্ষিতা বা অপহৃতা হয়েছেন (এই পত্রলেখকের আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই হয়েছেন) তার হিসাব কোনও দিন পাওয়া যাবে না।
প্রসঙ্গত, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রথম জীবনে প্রচণ্ড ‘বর্ণ’ হিন্দু বিরোধী ছিলেন এবং মুসলিম লিগে যোগদান করেছিলেন।
এগুলো ইতিহাস নয়? অনুক্ত রাখতে হবে? বলতে হবে শুধু, আওরঙ্গজেব তারকেশ্বর মন্দিরের জমি দান করেছিলেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.