রাজ্যে এলপিজি-র একাধিক সংযোগ রাখা সন্দেহভাজন তালিকার অন্তত ৩৫% গ্রাহকই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কেওয়াইসি জমা দিলেন না। ফলে এত বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের অস্তিত্ব নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। স্পষ্ট ছবি পেতে কেওয়াইসি জমার সময়সীমা আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন ডিস্ট্রিবিউটরেরা।
সরকারি নিয়মে এখন থেকে একই ঠিকানায় পরিবার পিছু গ্যাসের একটিই সংযোগ মিলবে (তবে দু’টি সিলিন্ডার রাখা যাবে)। একাধিক সংযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের একটি রেখে অন্যগুলি ছেড়ে দেওয়ার কথা। এ জন্য গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কেওয়াইসি জমা দিতে বলেছিল তেল সংস্থাগুলি। মঙ্গলবার সংস্থাগুলি জানিয়েছে, রাজ্যে সেই তালিকার প্রায় ৩৫%-৪০% গ্রাহকের কাছে থেকে তারা কেওয়াইসি পায়নি।
ইন্ডিয়ান অয়েল সূত্রের খবর, রাজ্যে তাদের প্রায় ১৪.৫০ লক্ষ গ্রাহকের একাধিক সংযোগের তালিকার মধ্যে ৯.৫ লক্ষের কাছ থেকে কেওয়াইসি পাওয়া গিয়েছে। হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের ১.২০ লক্ষেরও বেশি গ্রাহক কেওয়াইসি জমা দিয়েছেন। যদিও মোট সন্দেহভাজনের সংখ্যা প্রায় ১.৮২ লক্ষ। কলকাতা-সহ ৮ জেলায় ভারত পেট্রোলিয়ামের প্রায় ২.৫৯ লক্ষ সন্দেহভাজন গ্রাহক থাকলেও কেওয়াইসি জমা দিয়েছেন ১.৫৮ লক্ষ।
তা হলে কি বাকি গ্রাহক ভুয়ো? তেল সংস্থাগুলির বক্তব্য, কিছু ভুয়ো থাকলেও সংখ্যাটা এত বিপুল নয়। কর্মসূত্রে বাইরে থাকা-সহ নানা কারণে অনেকে এখনও কেওয়াইসি জমা দেননি। কেউ অন্যত্র চলে গেলেও সংযোগ বাতিল করেননি। অনেকে সংযোগ রাখলেও দীর্ঘদিন গ্যাস নিচ্ছেন না।
তাদের সঙ্গে কিছুটা সহমত ডিস্ট্রিবিউটররা। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়াটি নিয়েই তারা ক্ষুব্ধ। অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর্স ফেডারেশনের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক বিজনবিহারী বিশ্বাস বলেন, “অল্প সংখ্যক গ্রাহকের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। অনেকে হয়তো বাইরে ছিলেন। আবার অনেকের ঠিকানার যথাযথ প্রমাণপত্র না-থাকায় কিছুটা আশঙ্কা থেকেই আমাদের কাছে আসতে চাননি।” তাঁর দাবি, কেউ কেউ ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে আগে ব্যাঙ্কের পাশ বই দিতে চাইলেও তখন নিয়ম না-থাকায় ডিস্ট্রিবিউটর-রা তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। অথচ সময়সীমা পেরোনোর ১৫ দিন আগে বলা হয়, সেটি গ্রাহ্য হবে। এত অল্প সময়ে সব গ্রাহক সেই তথ্য জানতে পারেননি। তাই কেওয়াইসি-র সময়সীমা আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তাঁরা।
কেওয়াইসি জমা না-দিলে ও আগে বুক করলেও গ্রাহককে ১ জানুয়ারি থেকেই ১,১৬৬ টাকা দরে সিলিন্ডার (নন-ডোমেস্টিক কমার্শিয়াল-এক্সেম্পটেড) কিনতে হবে বলে জানিয়েছে তেল মন্ত্রক। তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিজনবাবুরা। তাঁদের দাবি, কেওয়াইসি জমা দেওয়ার শেষ দিন ও এই বাড়তি দরে গ্যাস দেওয়ার শুরুর দিনের মধ্যে ফারাক না-থাকায় গ্রাহক-ডিস্ট্রিবিউটরদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়বে। কারণ কেওয়াইসি জমা না-দেওয়া গ্রাহকদের (যাঁরা গত কয়েক দিনে গ্যাস বুক করেছেন) এখন ওই বাড়তি দর দিতে হবে। আবার কোনও ডিস্ট্রিবিউটর যদি তাঁদের কাছ থেকে ভুল করে কম দাম (ভর্তুকির ৪১২.৫০ টাকা বা ভর্তুকিবিহীন ৯২৫ টাকা) নেন, তা হলে বাকি টাকা ডিস্ট্রিবিউটরের পকেট থেকেই যাবে। |