আক্ষরিক অর্থেই খাদের কিনারায় দাঁড়ানো মার্কিন অর্থনীতিকে অন্তত এক পা পিছিয়ে আসার স্বস্তি দিল সেনেট।
কথা হচ্ছিল, ঘাটতি আর ধারের বোঝা কমাতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই রাজস্ব আদায় বাড়াতে বাধ্য থাকবে মার্কিন সরকার (১০ বছরে ৬০ হাজার কোটি ডলার)। তার জন্য চড়া হারে কর বসাবে সাধারণ মানুষের উপর। বিপুল পরিমাণে ছাঁটাই করতে হবে সরকারি খরচও (১০ বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি ডলার)। সকলেরই আশঙ্কা ছিল, এই ‘সাঁড়াশি আক্রমণে’ শুধু আমেরিকায় কাজ হারাবেন ৩৪ লক্ষ মানুষ। মন্দার মুখে ঢলে পড়বে মার্কিন অর্থনীতি। সঙ্কট গভীর হবে বাকি বিশ্বে। এই আশঙ্কাকেই গত কয়েক মাস ধরে ‘ফিস্কাল ক্লিফ’ নামে ডেকেছে সারা পৃথিবী। বছরের প্রথম দিনে প্রথা-ভাঙা গভীর রাতের ভোটাভুটিতে আপাতত এই আতঙ্ক এড়ানোর পক্ষে (৮৯-৮) রায় দিল সেনেট।
ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকানদের প্রবল দর কষাকষির পর যে প্রস্তাব পাশ হল, তার সার কথা হল, এখনই বাধ্যতামূলক খরচ ছাঁটাইয়ের তেতো ওষুধ গিলতে হবে না। বদলে মানতে হবে কিছু শর্ত। এর মধ্যে রয়েছে
• ১০ বছরে ৬০ হাজার কোটি ডলার রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে ঠিকই। তবে তা আসবে মূলত ধনীদের উপর কর বসিয়ে।
• বছরে ব্যক্তিগত আয় ৪ লক্ষ ডলারের নীচে হলে, কর সংক্রান্ত সুবিধা চালু থাকবে। একই সুবিধা পারিবারিক আয় সাড়ে ৪ লক্ষ ডলারের কম হলেও। তবে রোজগার তার বেশি হলে, করের হার হবে এখনকার ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩৯.৬%। বাড়বে ডিভিডেন্ড ও মূলধনী-লাভ করও।
• করের হার বাড়বে ৫০ লক্ষ ডলারের বেশি দামের বাড়ির (এস্টেট) ক্ষেত্রেও।
• এক বছরের জন্য বেকারভাতা পাবেন ২০ লক্ষ মানুষ। ইত্যাদি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথায়, “ঘাটতি কমাতে চেষ্টা করব। তবে এই রফা দেখিয়ে দিল যে, খরচ কমানোর পাশাপাশি তা করতে হবে ধনীদের থেকে আরও বেশি কর আদায়ের মাধ্যমে।”
তবে এই হাঁফ ছাড়া কতক্ষণ স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে মার্কিন কংগ্রেসের আর এক কক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে (প্রতিনিধিসভা) বিল পাশ পাওয়ার উপর। মঙ্গলবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে দশটায় এই বিতর্ক শুরু হয়েছে সেখানে। তার পর ভোট। সেখানেও ব্যালটের ফল প্রস্তাবের পক্ষে গেলে, তবেই সেনেটে ‘জয়ের’ সার্থকতা। কারণ সে ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াতে কিছু দিন (বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস দু’য়েক) সময় পাবে মার্কিন অর্থনীতি। তাই আমেরিকা তো বটেই, মার্কিন প্রতিনিধিসভার দিকে চোখ এখন তামাম দুনিয়ারও। |