ঠান্ডায় বোরো ধানের বীজতলায় হতে পারে সংক্রমণ। তা হলে রয়েছে ক্ষতির সম্ভাবনাও। কনকনে ঠান্ডা এবং ঘন কুয়াশার দাপটে ইতিমধ্যেই মহকুমার কিছু কিছু এলাকায় বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করছেন চাষিরা। কৃষি দফতরের আশঙ্কা, টানা এই আবহাওয়া চলতে থাকলে বীজতলায় ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সতর্ক না হলে বীজ বাঁচাতে বিপাকে পড়তে পারেন চাষিরা।
কালনা মহকুমা জেলার কৃষি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই চাষাবাদের উপরে নির্ভরশীল। মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবি মরসুমে এ বার অন্তত ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হবে। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি এলাকা রয়েছে মন্তেশ্বর ব্লকে। ইতিমধ্যেই এই চাষের জন্য দু’হাজার জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। এই বীজতলা থেকে অন্তত কুড়ি হাজার হেক্টর জমির ধান চারা পাওয়ার কথা।
নান্দাই, বাঘনাপাড়া, হাটকালনা, কৃষ্ণদেবপুর-সহ মহকুমার বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, বীজতলায় চারার বয়স প্রায় ১৫ দিন। তবে বেশির ভাগ বীজতলা থেকে সবুজ উধাও। বদলে চারার রঙ তামাটে হতে চলেছে। চাষিদের দাবি, গত চার-পাঁচ দিন ধরে বীজতলার যতই পরিচর্যা করা হোক না কেন চারার সতেজ ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। |
কালনার নান্দাই এলাকার ধান চাষি রমজান শেখ বলেন, “নিয়মানুযায়ী যা জমি তার দশ ভাগের এক ভাগ জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। বীজতলার জমি তৈরি করে উন্নতমানের বীজও ফেলা হয়। দু’সপ্তাহ পরে বীজতলায় তৈরি হওয়া ধানচারা মূল জমিতে লাগানোর কথা। এই মুহূর্তে চারার সতেজ ভাব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।” মন্তেশ্বরের চাষি আবুল করিমের দাবি, “চারা বাঁচাতে না পারলে সঠিক সময়ে চাষ শুরু করা যাবে না। ফলে শস্য বৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হবে।”
বোরো ধানের বীজতলা সতেজ ভাব নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে মহকুমা কৃষি দফতর। এই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ খানেক ধরে ঠান্ডার বাড়ছে। সন্ধ্যা নামতেই এলাকা ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে মেঘলা আবহাওয়ায় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। ঠান্ডার প্রকোপে বীজতলায় দেখা দিয়েছে কোল্ড ইনজুরি। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কোল্ড ইনজুরি থেকে বীজতলায় ক্ষতিকারক ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটার চরম আশঙ্কা রয়েছে। যা থেকে বীজতলায় চারাগাছ শুকিয়ে যেতে পারে।
জেলা সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের কথায়, “এই মুহূর্তে ধান থেকে চারা গাছের খাদ্য সংগ্রহ করার কথা। প্রচন্ড ঠান্ডায় চারাগাছ খাবার সংগ্রহ করতে না পারার কারণেই গাছের রঙ তামাটে হয়ে যাচ্ছে।” তবে এই পরিস্থিতি থেকে বীজতলা বাঁচাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। যদি বীজতলা এখনও তৈরি না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মাটির তলায় জলের উৎস রয়েছে এমন জায়গায় বীজতলা তৈরি করা প্রয়োজন। বীজতলার জমি তৈরির আগে জৈব সারের প্রয়োগ জরুরি।
|
কৃষি দফতরের দাওয়াই |
• রাতে বীজতলায় গরম জল দিয়ে ভোরে তা বের করে দিতে হবে।
• ট্রাইসাইক্লোজল এবং জিঙ্ক ইডিটিএ-এর মিশ্রণ স্প্রে।
• ট্রাইকনট্যানল জাতীয় ওষুধ স্প্রে।
• ১৫ লিটার জলে দশ গ্রাম ট্রাইসাইক্লোজল এবং ১৫ গ্রাম ইডিটিএ-র মিশ্রণ স্প্রে।
• বীজতলার তাপমাত্রা বাড়াতে কালো ছাই ছড়াতে হবে। |
|