বড়দিনে শীত ছিল টি-টোয়েন্টির মেজাজে। আর বর্ষবরণের আগে তা বদলে গেল টেস্ট ম্যাচে। আবহবিদেরা বলছেন, বর্ষবরণেও শীত পুরনো ঢঙে ফিরবে কি না, তা নির্ভর করছে কাশ্মীর থেকে নেমে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার গতিপ্রকৃতির উপরে।
গত সপ্তাহের শুরু থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ জবুথবু ছিল হাড়কাঁপানো ঠান্ডায়। আকাশ মেঘলা থাকায় দিনের বেলাতেও কনকনে ঠান্ডায় টুপি-সোয়েটার ছাড়া রাস্তায় বেরনো দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল স্বাভাবিকের অনেক নীচে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বড়দিনের আগে বাংলাদেশ ও সংলগ্ন উত্তরবঙ্গে একটি ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে এ রাজ্যের পরিমণ্ডলে মেঘ ঢুকছিল। তার জেরেই দিনের তাপমাত্রার রেকর্ড পতন হয়েছিল। সেই ধারা অব্যাহত ছিল বড়দিনের পরেও। বৃহস্পতিবার চলতি মরসুমে প্রথমবার শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে দক্ষিণবঙ্গ। যা দেখে অনেকেই আশা করেছিলেন, এ বার বর্ষবরণের ‘উষ্ণতা’ বাড়িয়ে দেবে উত্তুরে হাওয়া। কিন্তু শনিবার থেকেই আবহাওয়ার বদল সেই ‘গুড়ে ’ কিছুটা হলেও ‘বালি’ ঢেলেছে।
কেন এই পরিবর্তন? রবিবার মৌসম ভবন জানিয়েছে, কাশ্মীরের উপরে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা রয়েছে। সেটির কারণে উত্তুরে হাওয়ার গতিপথ কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জানান আবহবিজ্ঞানীরা। আর সেই কারণেই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে। এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে মাত্র ২ ডিগ্রি কম। পাশাপাশি, মেঘ কেটে গিয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে দিনের তাপমাত্রাও। আবহবিদেরা বলছেন, ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সমতলে নেমে না আসা পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এমন পরিস্থিতিই চলবে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, বর্ষবরণের দিন কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রির আশপাশে থাকবে। বছরের শুরুতে রাজ্যের সর্বত্র তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও দেখছেন তাঁরা।
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গের ঠান্ডার গতিপ্রকৃতি মূলত নির্ভর করে কাশ্মীর থেকে নেমে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার উপর। তার উপরেই নির্ভর করে উত্তুরে হাওয়ার দাপটও। কাশ্মীর থেকে নেমে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝাটি পূর্ব ভারতের দিকে সরে এলে ফের দেখা মিলতে পারে কনকনে শীতের।
আবহাওয়া কিছুটা ‘উত্তপ্ত’ হলেও উৎসবের সপ্তাহে কলকাতা কিন্তু নিজের মেজাজ হারায়নি। বর্ষবরণের আগে রবিবার চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সায়েন্স সিটি, মিলেনিয়াম পার্ক-সহ কলকাতার দ্রষ্টব্যগুলি ছিল জমজমাট। গিজগিজে লোক আর দোকানপাটে ওই এলাকাগুলিতে ছিল মেলার মেজাজ। দেখা মিলেছে ময়দানে চাদর বিছিয়ে পারিবারিক পিকনিকেরও। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন চিড়িয়াখানায় গিয়েছেন প্রায় হাজার দশেক লোক। বিকেলের দিকে ভিড় হয়েছে গঙ্গাপাড়ের প্রিন্সেপ ঘাট, মিলেনিয়াম পার্কেও। |