|
|
|
|
ওষুধে যৌন তাড়না নাশের দাবি জোরালো |
বিচারের ধীর গতিই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বেশি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কাল বছরের শেষ দিন। তার আগে পরিসংখ্যান হাতড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেখছে, স্রেফ এ বছরই দিল্লিতে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৬৩৫টি। অভিযুক্ত ৭৫৪ জন। তার মধ্যে ৩৪৮ জনের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। শাস্তি ঘোষণা হয়েছে শুধু ১ জনের বিরুদ্ধে!
ধর্ষণকারীদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে দেশের আম-আদমির আন্দোলন যখন অজস্রমুখী হয়ে চাপ বাড়াচ্ছে সরকারের উপর, সনিয়া গাঁধী মনমোহন সিংহরা তখন বেশ বুঝতে পারছেন, আইনে কতটা কী কড়া শাস্তির ব্যবস্থা আছে সেটা বড় প্রশ্ন হতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় বাধা নয় ন্যায় বিচারে। ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশি তদন্ত ও শুনানির ওই ধীর গতিই এখন গভীর উদ্বেগের বিষয় সরকারের কাছে। এ জন্য দ্রুত তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করা, তার জন্য সময় বেঁধে দেওয়ার মতো পদক্ষেপের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার সংক্রান্ত যাবতীয় মামলায় ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ আদালত গঠন করা ছাড়াও আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রককে। |
 |
কড়া পাহারায় শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরুণীর দেহ। ছবি: পিটিআই |
সাক্ষ্যপ্রমাণ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের প্রস্তাবও বিবেচনা করছে সরকার। আবার সরকারের একটি সূত্র বলছে, সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদও বিষয়টি খতিয়ে দেখে শীঘ্রই সুপারিশ জানাবে সরকারকে।
ধর্ষণে শাস্তি বাড়ানোর নানা রকম প্রস্তাব নিয়েও ভাবতে হচ্ছে কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতাদের। তার মধ্যে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের প্রস্তাব যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে কেমিক্যাল ক্যাস্ট্রেশনের দাবি। ইউপিএ-র প্রথম দফার সরকারে মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী থাকার সময় থেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব রেণুকা চৌধুরি। এখনও এই শাস্তির দাবিতে দলে সবচেয়ে বেশি সরব তিনিই। কংগ্রেসের এই মুখপাত্র সনিয়ার কাছেও তাঁর দাবি জানিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। এ নিয়ে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অন্য বহু প্রস্তাবের মতো এটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। দ্রুতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কী এই ক্যাস্ট্রেশন? বাংলায় লিঙ্গচ্ছেদ। শাস্তির এক প্রাচীন পদ্ধতি। কিন্তু অস্ত্রের আঘাতে বা শল্যচিকিৎসার বদলে ওষুধের প্রয়োগেও যৌন তাড়না নির্মূল করে দেওয়ার পথ রয়েছে এখন। আমেরিকার মতো মুক্ত সমাজেও কয়েকটি প্রদেশে এই শাস্তির বিধান রয়েছে। এই শাস্তি বৈধ অন্য কিছু দেশেও। দিল্লির সাম্প্রতিক লজ্জা পর্বে সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলি তো এমন শাস্তির দাবিতে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে। |
 |
পাহারা তাঁর বাড়ির সামনেও। নয়াদিল্লিতে। ছবি:এএফপি |
দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনা রুখতে পুলিশি ব্যর্থতা ও অন্যান্য ত্রুটি বিচ্যুতি খতিয়ে দেখতে বিচারপতি ঊষা মেহরার নেতৃত্বে একটি কমিশন গড়েছে সরকার। পাশাপাশি, তীব্র বিক্ষোভের মুখে কেন্দ্র ধর্ষণ সংক্রান্ত ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ জানাতে বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করেছে। ওই কমিশন ও কমিটি মহিলা সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বহু পরামর্শ আসছে ই-মেলেও। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়েছে। ধর্ষকদের কেমিক্যাল ক্যাস্ট্রেশনের অনেক প্রস্তাব আসছে বলেও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে অভিযোগ রয়েছে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক সদস্য আজ জানান, ধর্ষণের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। তার মধ্যে একটি হল সাক্ষ্যপ্রমাণ আইনের সংশোধন। কেননা, বহু মামলায় দেখা যাচ্ছে, শুনানির বিভিন্ন পর্যায়ে বারবার অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীর সাক্ষ্য নিতে গিয়ে প্রক্রিয়াগত দেরি হচ্ছে। এ বার সেই অযথা বিলম্ব এড়ানোর পথ খুঁজতে চাইছে সরকার।
তবে বিজেপি-র মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “ধর্ষণের ঘটনা সংক্রান্ত মামলার দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি সরকারের অজানা ছিল না। এ ব্যাপারে আগেই পদক্ষেপ করা উচিত ছিল কেন্দ্রের। এখন ঠেলায় পড়ে মুখ বাঁচাতে তৎপরতা দেখাচ্ছে কংগ্রেস।” তা ছাড়া, রাজনীতির কারবারিরাও মনে করছেন, জন অসন্তোষ প্রশমিত করতে এখন অতিসক্রিয়তা দেখাতে চাইছেন কংগ্রেস নেতারা। আর সেই কারণেই, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিবিধানের জন্য কংগ্রেসের তরফেও নানা সুপারিশ করা হচ্ছে।
দলের একটি সূত্রে বলছে, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের ৩০ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে দল। আবার কারও মতে, কেমিক্যাল ক্যাস্ট্রেশনের পক্ষে সায় দিতে পারে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেসের মুখপাত্র রশিদ অলভিও বলেন, দল এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। |
|
|
 |
|
|