|
সাজগোজ... |
|
একটু উষ্ণতার জন্য |
শাল জড়িয়ে ঢাকার সময় নয়। শীত হল যৌবনের ঋতু
খোলামেলা পোশাকেও। লিখছেন সংযুক্তা বসু |
শপিং মলে রং-বাহারি শীতের পোশাক। কিন্তু সব পোশাক কেনার নয়। টুপি আর স্কার্ফের পাশাপাশি কিনতে হবে স্টাইলিশ শর্ট ড্রেস, লং বুট, জ্যাকেট, ম্যাক্সি ড্রেস। আর এই সব জামাকাপড় দেরাজে থাকলে তো কথাই নেই। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে নায়িকাদের মতো আপনিও হয়ে উঠতে পারেন মনমোহিনী। জেনে নিন কেমন হবে চোখ-টানা শীতসাজ নায়িকাদের কাছে।
|
শীতে শরীর খোলা রাখলেই সেনসুয়াস
পাওলি দাম |
ধরি মাছ না ছুঁই পানি হয় নাকি? শীতে সেনসুয়াস সাজব অথচ ঠান্ডাও লাগবে না, এটা হয় না। একটু একটু ঠান্ডা গায়ে মেখে খোলামেলা পোশাক পরাই যায় এখনকার কলকাতার শীতে।
ঠান্ডা সব থেকে বেশি ওঠে পা দিয়ে। তাই পায়ে লং বুট পরে ওপরে শর্ট ড্রেস পরা যেতে পারে। তাতে পুরো শরীরের আকর্ষণ ধরা পড়ে ভাল। কালো রঙের অফ শোল্ডার বডি হাগিং শর্ট ড্রেসের সঙ্গে ফ্রন্ট ওপেন জ্যাকেট যে-কোনও মেটিরিয়ালের পরলে সেক্সি দেখাবে। যাদের সুন্দর লম্বা পা তাদের জন্য এই পোশাক খুব মানানসই। আমি তো খুব ভালবাসি এমন পোশাক পরতে। তবে খোলা পা যেন খসখসে না দেখায়। সেক্স অ্যাপিলের অনেকটাই জড়িয়ে থাকে লম্বা টানটান পায়ে। এর জন্য দরকার পায়ের ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং। খোলামেলা পোশাকে শীতের পার্টি অ্যাটেন্ড করতে হলে সব থেকে আগে চাই শরীরের যত্ন। শরীরে যেন একটা ঝাঁ-চকচকে তৈলাক্ত ভাব থাকে। পার্টির সব আলো যেন পিছলে পড়ে আমার শরীরে সেটাই তো দেখব। পিঠ খোলা শর্ট ড্রেসও পরা যায়। তার জন্য ব্র্যান্ডেড দামি লঁজারি পরা দরকার। অ্যাপলিং লঁজারি দেখানোটাও একটা স্টাইল।
তবে সারা শরীর ঢাকা পোশাকেও সেক্স অ্যাপিল থাকতে পারে। তার জন্য নেকলাইনের কাছটা হবে ট্রান্সপারেন্ট লেসের, বা নেটের। তাতে ক্লিভেজ দেখা যাবে। বাদবাকি পোশাকের অংশ হতে পারে লাইনিং দেওয়া লেসের।
শরীরকে মেলে ধরতে গেলে আমি মেক আপে খুব গুরুত্ব দিই। কখনও চোখে ঘন করে কাজল পরে, ঠোঁটে ব্যবহার করি ন্যুড কালার। আবার কখনও চোখে মিনিমাম কাজল দিয়ে লাল টকটকে লিপস্টিক লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে, ঠোঁটে আনা যায় সেনসুয়াস লুক।
শাড়ি পরলে আমার পছন্দ গলা খোলা, কাঁধ খোলা ডিপ নেক লাইনের ব্লাউজ। হাতা থাকবে অবশ্যই থ্রি কোয়ার্টার। কিছুটা ঢাকা, কিছুটা খোলার মধ্যেই তো আসল মাদকতা।
গত বছর ‘হেট স্টোরি’ ছবির শু্যটিং হয়েছিল দিল্লিতে। কী হাড় হিম করা ঠান্ডা রে বাবা! ওখানকার ডি এল এফ মল থেকে নানা রঙের ডেনিম জিন্স, স্টকিংস কিনেছিলাম। জিন্সের সঙ্গে সেনসুয়াস দেখায় স্মার্ট লুক জ্যাকেট পরলে। নীচে ট্রাউজার পরে, ওপরে স্প্যাগেটি টপের ওপর কালো, সবুজ, হলুদ, নীল রঙের জ্যাকেট পরলে বেশ লাগে।
শীতের কথা এলে আমার প্রথম যৌবনের কথা মনে পড়ে। তখন তো অত সাজগোজ পোশাকের স্টাইল জানতাম না, কিন্তু কারও চোখে আমি হয়তো অনন্যা হয়ে উঠেছিলাম। তার কথা আজ বলতে ইচ্ছে করছে।
কলেজে যখন পড়ি তখন। একদিন ভোরবেলা কলেজ যাওয়ার সময় এক যুবক ঘন কুয়াশার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে আমার হাতে একটা গোলাপ ফুল গুঁজে দিয়েছিল। কিছু বোঝার আগেই সে মিলিয়ে গেল কুয়াশায়। আর কোনও দিন দেখা হয়নি।
|
অফ শোল্ডার সোয়েটার পরে নেকলাইন দেখাতে বেশ লাগে
তনুশ্রী চক্রবর্তী |
|
শীতে প্রকৃতির গন্ধটা আশ্চর্য ভাবে পাল্টে যায়। কুয়াশার গন্ধের সঙ্গে মনে পড়ে যায় পুরোনো প্রেমের কথা। যা এই রকমই এক শীতে কোনও একবার ঘটেছিল। মনে হয় এ বারের শীতটাও তেমন আনন্দে কাটবে তো! আমার কাছে শীত খুব রোমান্টিক আর সেক্সি ঋতু। অনেকটা ঢাকা আর কিছুটা খোলা শীতের রহস্য।
তবে সেক্সি যদি দেখাতেই হয় আর লনে খোলা আকাশের নীচে যদি পার্টি হয় আমার পছন্দ ভেতরে টিউব টপ পরে ওপরে জ্যাকেট পরা। শীতের কম-বেশি অনুসারে জ্যাকেটের বোতাম লাগাতেও পারি বা খোলাও রাখতে পারি। খোলা রাখলে শরীরের সামান্য অংশ দেখা যাবে। তার একটা আবেদন থাকে বইকী।
শীতে কলকাতায় দিনের বেলায় বিশেষ ঠান্ডা পড়ে না। দিনের বেলা কার্ডিগান টাইপের পরতে পারি, যাকে ফ্যাশনের ভাষায় বলে শ্রাগ। কালো শ্রাগ আমার বিশেষ পছন্দের। স্লিভ লেস টপের সঙ্গে শ্রাগ মানায়। তার সঙ্গে গলা ঢাকতে একটা স্কার্ফ নেওয়া যেতে পারে। দিনের পার্টিতে ম্যাক্সি ড্রেসের সঙ্গে শাল নিলে খুব ‘এথনিক’ দেখায়। পা ফাটা আটকাতে এর সঙ্গে মোজা পরে ব্যালেরিনা জুতো পরি।
আমার গলা লম্বা। গলার সৌন্দর্য দেখাতে অফ শোল্ডার সোয়েটার মানানসই। এমন সোয়েটার পরলে আর গলায় কোনও নেক পিস পরার দরকার নেই। কানে থাকবে খুব হালকা ঝোলানো দুল।
খুব ঠান্ডা পরলে ফুল হাতা বোট নেক ব্লাউজের সঙ্গে আমার পছন্দ একরঙা পাট-তসর মিশেল দেওয়া অথবা সিল্কের একরঙা শাড়ি। শাড়ি যদি হয় লাল রঙের ব্লাউজ হবে কালো। আবার নেভি ব্লু শাড়ির সঙ্গে পরব সাদা বা বেজ রঙের ব্লাউজ। যদি গলাবন্ধ ব্লাউজ পরি, সঙ্গে স্টোল বা শাল নেওয়া যায় স্টাইলাইজ করে।
|
ডেনিম জ্যাকেট প্লাস শাড়িতে স্টাইলিশ
শ্রীলেখা মিত্র |
|
শীত ঋতুটা এমনিতেই সেক্সি। সব সময় কেমন উষ্ণতা খুঁজতে ইচ্ছে করে। ইন্ডোর পার্টিতে যেতে হলে শটর্র্ ড্রেস পরব। নীচে শিয়ার স্টকিংসের সঙ্গে পা ঢাকা জুতো। তাতে শরীরের অনেকটা দেখানোও যায়। পা দিয়ে ঠান্ডাও ওঠে না। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় অবশ্যই সঙ্গে নিই কার্ডিগান বা সোয়েটার। যেটা পার্টির বাড়িতে গিয়ে খুলে ফেলা যায়। নাচের সময় কার্ডিগান বা সোয়েটার খুললে খোলামেলা পোশাকের বাহারটা বেরোবে। কিন্তু আউটডোর পার্টিতে ইনফরমাল ট্রাউজারের সঙ্গে পরব টপ আর জ্যাকেট। আমার আলমারিতে খানদশেক জ্যাকেট আছে নানা স্টাইলের। কর্ডের জ্যাকেট তার মধ্যে আমার কাছে খুব স্পেশাল।
অতি অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়। তাই বাড়ির বাইরে বেরোবার সময় মাথায় টুপি আর গলায় স্কার্ফ ব্যবহার করি তেমন কনকনে ঠান্ডা পড়লে।
বিয়েবাড়িতে শাড়ির সঙ্গে নিই বেনারসি স্টোল। ডেনিম জ্যাকেটের সঙ্গেও শাড়ি ভাল খোলে। খুব স্টাইলিশ দেখায়।
শীতের পার্টিতে চুল খুলে গেলে সেক্সি দেখায়।
|
ইন্দিরা গাঁধীর মতো লং কোটের সঙ্গে শাড়ি খুব পছন্দের
অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় |
আমি খুব শীতকাতুরে। তাই ঢাকা পোশাক পরলে অ্যাপিলিং দেখাবে না, আর খোলা পোশাক পরলেই নজর কাড়বে সেক্স অ্যাপিলে, এটা আমি একদম বিশ্বাস করি না। আসল কথা নিজেকে কী ভাবে ক্যারি করা হচ্ছে।
ঠান্ডার দিনে আমার বিশেষ পছন্দ লেয়ারিং পোশাক। ভেতরে একটা টি শার্ট পরে তার ওপর পুল ওভার পরলাম। তার ওপরে পরলাম একটা জ্যাকেট। নীচে রইল প্যান্ট বা ট্রাউজার। জ্যাকেটে থাকবে গাঢ় রং। লাল, কমলা, বেগুনি বা পার্পল, গোলাপি।
কর্ডের প্যান্টের ওপর এই ধরনের লেয়ারিং পরলে শীত জব্দ, দেখায়ও স্মার্ট। জিপ দেওয়া হুডওয়ালা জ্যাকেট অভিজাত মানের কাপড়ের হলে আমার বেশ লাগে।
এ ছাড়া আমার পছন্দ লং কোট, শর্ট কোট দুটোই। ডিপ কাট শর্ট ড্রেসের সঙ্গে চলতে পারে শর্ট কোট। দেখতেও অ্যাপিলিং লাগবে। নি লেংথ বুট থাকবে পায়ে।
ইন্দিরা গাঁধী শাড়ির সঙ্গে লং কোট পরতেন। সেটা আমার খুব ভাল লাগত। কলকাতায় ভারী শীত পরলে তেমন পরা যায়। পোলো নেক উলেন ব্লাউজের সঙ্গেও শাড়ি পরা যেতে পারে। ফুলহাতা ব্লাউজ পরলেও হাতে ব্রেসলেট পরা যায়। একটু ওয়েস্টার্ন নকশার হতে হবে সেই গয়নাকে। |
ছবি: রাসবিহারী দাস |
|