|
|
|
|
|
|
|
সিনেমা সমালোচনা ১... |
|
‘চুলবুল’ আছে, গল্প কম |
তাতে কী? সলমন তো আছেন। ঢলঢলে শরীরে
সোনাক্ষী সিংহও। লিখছেন শতাব্দী রায় |
‘দাবাং ২’- সম্পর্কে বলতে গেলে দু’রকম অভিজ্ঞতা,
১. যদি আমি চলচ্চিত্রপ্রেমী হই তাহলে এটা এক কথায় দারুণ ছবি বলা যাবে না।
২. যদি আমি সলমনপ্রেমী হই তাহলে সলমন খান যে দারুণ তা চোখ বুজে বলা যাবে।
এখন হিন্দি ছবির জগতে যে ধরনের ছবি হচ্ছে, এবং যে অন্য ভাবনা, নতুন চিন্তাশক্তি ব্যবহার করে নতুন ধারার সে ছবিগুলো পরিচালকরা করছেন তা কিন্তু একেবারেই ‘দাবাং ২’ নয়। বরং এই ছবি আশি-নব্বই দশকের ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ। আজকে যে সব গল্প নিয়ে পরিচালকেরা ছবি বানাচ্ছেন কয়েক বছর আগেও তা প্রযোজকদের কাছে দুঃসাহস ছাড়া কিছু বলে মনে হত না। অথচ আজকে হিন্দি ছবিতে সেই অপরিচিত গল্প, চিত্রনাট্য এবং অপরিচিত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের রমরমা। এখনকার এটাই ট্রেন্ড। নায়কোচিত চেহারার পুরুষ নয় অথচ নায়ক, হিট নায়ক-নায়িকাদের মুখ পোস্টারে নেই অথচ ছবি হিট। এক্ষেত্রে ‘দাবাং ২’ সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। যখন আমি ‘দাবাং’ দেখি তখন মনে হয়েছিল হয়ত সেই পুরোনো কাহিনি, পুরোনো প্রতিশোধের গল্প। অনেক দিন পরে হয়েছে। বেশি বুদ্ধি না লাগিয়ে ছবি দেখার মানুষের সংখ্যাও তো কম নয়। তারা অনেক দিন পর এমন একটা ছবি পেয়েছে যা দেখে চারবার সিটি মারা গিয়েছে। সাত বার সিটে লাফিয়ে উঠেছে। আর ‘জিও গুরু’ বলে বার কুড়ি চেঁচাতে পেরেছে। তাতেই ওরা খুশি হয়েছে। আর তাতেই প্রযোজক অনেক টাকা প্রফিট করেছে। কিন্তু ‘দাবাং ২’ দেখে মনে হল এ ছবি যদি হিট হয় তার একটাই কারণ। সলমন খান। এবার একটা প্রশ্ন করি সলমন খান-কে। ‘‘আপনি বিয়ে করছেন না কেন?”
এত মহিলার হৃদয় উচাটন করা পুরুষসিংহ আপনি। মহিলাদের থেকে দূরে থাকেন তার প্রমাণ আমরা পাই নি। বিগত প্রেমিকার সংখ্যাও কিছু কম নয়। আর আমার ব্যক্তিগত ধারণা যা আপনার ইন্টারভিউ থেকে অনুভব করেছি, আপনি উদ্ধত নন। গুন্ডাগর্দি কখনও কখনও করেন। সেটা মেয়েদের কাছে আকর্ষণের কারণও। আর পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গে জোরাজুরি! তাও তো ভালবাসারই প্রতিফলন। সব মিলিয়ে আপনি যে কোনও নারীর কাছে লোভনীয় পুরুষ। তবুও এই সুপুরুষটি কেন কোনও নারীর কাছে স্বপ্নের থেকে বাস্তবে নেমে এসে রোজকার জীবনযাত্রার সঙ্গী হয়ে উঠছেন না! আজকের যে সুন্দরী নায়িকাকে নিয়ে আপনার সম্পর্কের ভাঙাগড়ার গল্প আমরা শুনতে পাই, তা যদি সত্যি হয়ে ওঠে তাহলে আমার মতন অনেকেই খুশি হবে। যাক, এ বার যে ছবি নিয়ে লিখতে বসেছি তা নিয়ে বলি। ছবির গল্পে চুলবুল পাণ্ডে পুলিশ অফিসার, কানপুরে বদলি হয়ে আসেন। সেখানে ‘বাচ্চা ভাই’-এর দৌরাত্ম্য বন্ধ করেন। ‘বাচ্চা ভাই’ তার প্রতিশোধ হিসাবে সন্তানসম্ভবা চুলবুলের স্ত্রী রাজোর ওপর অত্যাচার করে। তার সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এই ঘটনার প্রতিশোধ নেয় চুলবুল। কোনও দৃশ্যের মধ্যে অনেক দারুণ মুহূর্ত, অনেক সেন্টিমেন্ট, অনেক নাটকীয়তা কিছুই নেই। তবু সলমনপ্রেমীদের উৎসাহের শেষ নেই। তবুও মুক্তির দিন হলের সামনে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হচ্ছে। সকালবেলা টিকিট ব্ল্যাক হচ্ছে পাঁচশো টাকায়। ভক্তদের মালার ভারে পোস্টারে সলমনের মাথা নীচের দিকে হেলে পড়েছে, আর এই সব সত্যির থেকেও বড় সত্যি এই মানুষগুলো তার প্রিয় নায়ককে ভালবেসেই এ সব করেছে। তাদের টাকা দিয়ে, ফ্যান ক্লাব নিজেরাই তৈরি করে। প্রথম দিন হলে এক লরি লোক পাঠিয়ে নায়কককে প্রিয় হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা কিন্তু তাঁকে করতে হচ্ছে না। এটা সলমন খানের অভিনয় ক্ষমতা। অ্যাকশনের পারদর্শিতা তাঁকে এই ভক্তদের কাছে ‘গুরু’ বানিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবির সময় সোনাক্ষী সিংহ ছিলেন ২ বছরের। |
|
দাবাং টু
সলমান, সোনাক্ষী, প্রকাশ রাজ |
দুটো ‘দাবাং’-এ কখনই তাঁকে বেমানান লাগেনি। সোনাক্ষী নায়িকাদের ভিড়ে একটু আলাদা। তাঁর চেহারা? যে জিরো ফিগারের দাপটে বলিউড আজ মোহিত তাঁর থেকে এক দম অন্য, হয়তো এ কারণেই ম্যাগাজিন উল্টোলে সোনাক্ষীর ছবি বিজ্ঞাপনের পাতা জুড়ে। এ ছবিতে বিরাট কিছু করার নেই ওঁর। ঢলঢলে মুখ, আর দিঘল চোখ দুটোর মধ্যে আকর্ষণ আছে। আর তা না হলে সারা ছবিতে সিদুঁর, শাঁখা, শাড়ি পরা নায়িকাকে দেখে দর্শকাসন থেকে সিটি বেজে উঠবে কেন?
আবার একটা প্রশ্ন করি সলমনকে, আচ্ছা আপনি নিজের এই জনপ্রিয়তাকে নিয়ে অহঙ্কারী না উদাসীন? কারণ এই মুহূর্তে আর দুই খানকে পেছনে ফেলে আপনি সামনের সারিতে। আমার ধারণা আমিরের মতো প্রচুর রিসার্চ ওয়ার্ক করেও আপনি ছবি করেন না। রাজনীতির ভাষায়, ‘আমজনতা’কে সামনে রেখেই তাদের উচ্ছ্বাসে আপনার পর পর ছবিগুলো হিট হওয়ার কারণ। আজকের দিনে আপনি বোধ হয় সব চেয়ে বেশি সেলেবেল স্টার। কয়েকশো কোটির ব্যবসা আপনার ছবির ক্ষেত্রে কোনও ব্যাপার নয়। তবে আপনার পরিশ্রম আপনার ছবিতে চোখে পড়ে।
ছবির কথা লিখতে গিয়ে বারবার সলমন প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। আর এটাই বোধ হয় ‘সলমন খান’ নামটার আকর্ষণ। ‘দাবাং টু’এর ভিলেন প্রকাশ রাজ। আমার ভীষণ ভীষণ প্রিয় অভিনেতা। অন্য কেউ এ চরিত্রটা করলে তাঁর কথা লিখতাম না। কিন্তু তাঁকে বহু দিন, সাউথের ছবি দেখার সময় থেকে পছন্দ করি। যে কোনও নায়কের থেকে ওঁর দৃশ্য মন দিয়ে দেখি। সেই প্রকাশ রাজ এই ছবির ভিলেন। একদম একটা সাধারণ চরিত্রকে উনি অসাধারণ করে তুলেছেন ওঁর অভিনয়গুণে এবং আমার দেখার দৃষ্টিতে।
প্রকাশ রাজের ভাইয়ের চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তাঁর নাম আমি জানি না। তবে ছোটখাটো চেহারা, মাথায় পাতলা চুল, একদম সাদামাঠা চেহারার একটা ছেলে। কিন্তু তাঁর অভিনয় তাঁকে খুব শীঘ্র প্রচারের আলোয় নিয়ে আসবে। গত কয়েক বছর এরকম বহু শক্তিশালী অভিনেতাকে বলিউড স্টারের আখ্যা দিয়েছে।
বিনোদ খন্না। সেই সুপুরুষ নায়কটি আজ বয়সের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছেন। মোটা, ভুঁড়ি, গাল ঝুলে যাওয়া এরকম কিছুই হয়নি তাঁর। তবু যেন...
এ ছবির আইটেম গার্ল করিনা কপূর। মালাইকান আছেন। তবে টিভিতে বিজ্ঞাপনের দৌলতে করিনার গানটাই সব চেয়ে জনপ্রিয়। যদিও দর্শকের হুল্লোড়ে গানের কোনও শব্দ ও অর্থ আমার বোধগম্য হয়নি। দর্শকের উচ্ছ্বাস দেখে আমার এটাই মনে হল জেনারেশন সত্যি পাল্টেছে। আগে নায়িকাদের বিয়ে হয়ে গেলে তাঁকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া হত। ইয়ং ছেলেদের কোনও উৎসাহই থাকত না বিবাহিত নায়িকাদের প্রতি। আজকের মডার্ন জেনারেশন সেই ভাবনাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছে। তাই সদ্য বিবাহিত স্যাফ আলি খানের স্ত্রীকে দেখেও তাদের উৎসাহ অমলিন।
সলমন, সলমন, সলমন। এই অন্য ধারার ছবির ভিড়ে সেই অর্থে তথাকথিত কমার্শিয়াল ছবিকে আপনি বাঁচিয়ে রেখেছেন। একমাত্র আপনার ক্ষেত্রেই গল্প, গান, পরিচালনা কিছুই দর্শক দেখতে যাচ্ছে না আপনাকে ছাড়া। আপনার ইন্ট্রোডাকশন সে ছায়াতেই হোক, বা হাতের মুঠো পাকিয়ে, সবেতেই মানুষের উচ্ছ্বাস সমান। এই উচ্ছ্বাসই আপনার সাফল্য।
শেষে পরিচালক আরবাজ খানকে বলি ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আরও অনেক ছবি করবেন। যে কোনও অভিনেতার পরিচালক হওয়া স্বপ্ন আর যাঁরা সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন তাঁরা ভাগ্যবান। তবে একটা কথা, পরের ছবিগুলোতে যদি অন্য কোনও নায়ককে নেন তা হলে নতুন গল্প, নতুন ভাবনাকে কাজে লাগাবেন। তার কারণ সলমন খান নামটা তুলে নিলে এ ছবির জনপ্রিয়তা নিয়ে অনেক অনেক প্রশ্ন জমা হচ্ছে। যা সলমনের ভাই আরবাজকে নয়, কিন্তু পরিচালক আরবাজকে নিশ্চয়ই করব কোনও একদিন। |
|
|
|
|
|