শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের শৌচাগারে পড়ে রোগীর মৃত্যুর জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অবহেলা এবং নজরদারির অভাব যে দায়ী তা স্বীকার করা হল তদন্ত রিপোর্টে। বুধবার ওই রিপোর্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে পাঠান। সেই মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদের নজরদারি, ‘ডিউটি’তে নিয়ম মেনে কর্মী থাকার মতো ৬ টি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টে অবশ্য কোনও ব্যক্তি বিশেষকে দায়ী করা বা শাস্তির সুপারিশের কথা নেই।
গত ১৭ ডিসেম্বর হাসপাতালের শৌচাগারে পড়ে বিপুল সিংহের মৃত্যুর জন্য ওই কারণগুলিকেই যে দায়ী করা হয়েছে তা কমিটির রিপোর্ট নিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্যেই স্পষ্ট। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেছেন, “কাউকে দায়ী করে শাস্তির দেওয়ার মতো বিষয় ভাবা হচ্ছে না। আমরা পরিষেবার মান উন্নত করতে চাই। ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সঠিক নজরদারি, ‘ডিউটি’ বদলের সময় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের দায়িত্ব ঠিক ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া এবং তা পালন করার মতো বেশ কিছু বিষয়ে তদন্ত কমিটি গুরুত্ব দিতে বলেছে।” সেগুলি কার্যকর করতে বলার পাশাপাশি নির্দেশিকা জারি করে বিভিন্ন বিভাগে পাঠানো হবে বলেও সুবীরবাবু জানিয়ে দেন। মৃত ব্যক্তি শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের বাড়ির দারোয়ান। মেয়র বলেন, “ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে যে সমস্ত বিষয় তাঁরা গুরুত্ব দিতে বলছেন স্বাভাবিক ভাবেই তা ঘটনার পিছনে মূল কারণ। তদন্ত কমিটি তা স্বীকার করছেন। অথচ কাউকে দোষী করতে চাইছেন না। তা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাই রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী।”
কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলছে তদন্ত কমিটি? হাসপাতালেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বিশেষ ভাবে দেখভাল করা। ওয়ার্ডে সময় মতো কর্মীদের ডিউটিতে যোগ দেওয়া। না হলে ডিউটি বদলের ‘নির্দিষ্ট সময়’ ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য কর্মী না থাকলে পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। রোগীরা কে কখন শৌচাগারে যাচ্ছেন তা সব সময় দেখা সম্ভব না হলেও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের বিষয়টি সে ক্ষেত্রে অবশ্যই নজরদারি করতে হবে। ওয়ার্ডে সার্বিক নজরদারি বাড়াতে হবে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সদের। আয়া বা বিশেষ সহায়করা সরকারি ব্যবস্থার মধ্যে নেই তাই তাদের হাসপাতালের তরফে কিছু বলা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে নার্সিং ইনচার্জ, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারদের দেখতে হবে ওয়ার্ডে নার্স, সাফাই কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী যাদের ডিউটিতে থাকার কথা তাঁরা যাতে থাকেন। হাসপাতালের শয্যা অনুসারে কর্মী থাকার পরও ওয়ার্ডে ডিউটির জন্য কর্মী না পাওয়ার অর্থ একসঙ্গে অনেক কর্মী ছুটিতে রয়েছেন। এক সঙ্গে যে ক’জন কর্মী ছুটি নিলে পরিষেবা বিপর্যস্ত হবে না সেভাবে ছুটি দিতে হবে। বিপুলবাবুর মৃত্যুর ঘটনার সময় ডিউটিতে মাত্র একজন নার্স ছিলেন বলে অভিযোগ। কোনও স্বাস্থ্যকর্মী বা সাফাই কর্মী ছিলেন না। ওয়ার্ড মাস্টারদের বিভাগ থেকে জানানো হয় সে কারণে বিশেষ সহায়ক (আয়াদের মতো পুরুষ বিভাগে যাঁরা থাকেন) দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম মতো রোগীদের শৌচাগারে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়ে যান। অনেক সময় গুরুতর অসুস্থ রোগী শৌচাগারে যেতে না-পারলে স্বাস্থ্যকর্মী বা সাফাই কর্মীরা শয্যাতেই ব্যবস্থা করেন। বিপুলবাবুর ক্ষেত্রে তা হয়নি। এমনকী শৌচাগারে পড়ে গেলে তুলে আনার মতো স্বাস্থ্যকর্মী ওয়ার্ডে ছিলেন না। অন্য রোগীর পরিবারের লোকরা গিয়ে তাঁকে তুলে আনেন বলে অভিযোগ। অন্য দিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের গাফিলতিতে সদ্যোজাতের মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ৩ সদস্যের কমিটি এ দিন গঠন করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে তাঁরা রিপোর্ট দেবেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
|
স্বরযন্ত্রের পক্ষাঘাতে দীর্ঘ দশ বছর শ্বাসের সমস্যায় ভুগছিলেন পাকিস্তানের সাদিয়া তারিক। কলকাতায় এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শান্তনু পাঁজা লেজার সার্জারির মাধ্যমে তাঁর বদ্ধ হয়ে যাওয়া শ্বাসনালী স্বাভাবিক করে দেন। অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই রোগিণীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। |