কলকাতা মেট্রো এলাকায় টিভিতে একশো শতাংশ ডিজিটাল সিগন্যাল চালু করার বিষয়ে আবার পিছিয়ে গেল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। নিজেদের অবস্থানে অটল রইল রাজ্য সরকার। তবে কেন্দ্রের যুক্তি, রাজ্য যত জেদই দেখাক, সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই সেট টপ বক্স কিনে নিচ্ছেন। তার ফলে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়েই আরও বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারবে। তাই সময়সীমা নিয়ে কেন্দ্র আর জেদ দেখাবে না।
বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের এক সূত্র দিল্লি থেকে জানান, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক অফিসারদের পাঠাচ্ছে। ওই প্রতিনিধিরা মহাকরণে মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে কলকাতায় ডিজিটাল অ্যাড্রেসেবল সিস্টেম (ড্যাস) সম্প্রচার নিয়ে ‘অচলাবস্থা’ মেটানোর সূত্র বার করার চেষ্টা করবেন। এ বিষয়ে রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “দিল্লি লোক পাঠালে তো ভালই। আমি বা মুখ্যসচিব দিল্লি গিয়ে আলোচনা করতে পারি, এমন প্রস্তাব আমরাই দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রই তা উপেক্ষা করে এসেছে। এখন ওদের সুবুদ্ধি হলে ভাল।”
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের বক্তব্য, ২৮ তারিখ, শুক্রবার এ শহরের এমএসও সংস্থাগুলির কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরে দিল্লির অফিসারেরা কলকাতায় আসবেন। বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের ওই সূত্র বলেন, “ড্যাস চালুর সময়সীমা নির্দিষ্ট করা আছে। কতটা মানা হচ্ছে, দেখা যাক। তার পরে কলকাতায় গিয়ে বৈঠক করবেন অফিসারেরা।” যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “রাজ্যের সঙ্গে ঝগড়া করার উদ্দেশ্যে ড্যাস চালু হচ্ছে না। সাধারণ মানুষকে উন্নত প্রযুক্তি দেওয়ার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। এর থেকে দুই সরকারই বাড়তি রাজস্ব পাবে।”
আগের দু’বারের মতো এ বারের সময়সীমাও অমান্য করার জন্য রাজ্য সরকার এমএসও সংস্থাগুলির উপরে চাপ দেয়। এই বিষয়টি বুঝে চলতি মাসেই ১২ তারিখ এমএসও-দের দিল্লিতে ডেকে ড্যাস চালু করার ব্যাপারে মুচলেকা লিখিয়ে নেন স্বয়ং তথ্য-সম্প্রচার সচিব উদয় বর্মা। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, নির্দেশ অমান্য হলে এমএসও-দের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন কলকাতা হাইকোর্টেও খারিজ হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এমএসও-দের জানিয়ে দেয়, অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ করা চলবে না।
এমএসও-রা বলছে, আগের সময়সীমা ৩১ অক্টোবরের পর থেকেই সোনি, জি ইত্যাদি সংস্থার অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করে দেওয়া হয় চ্যানেলের সদর দফতর থেকে। তার পরে সেট-টপ বক্স ছাড়া এ সব চ্যানেল দেখতে পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু মহাকরণের হুমকিতে একাংশ এমএসও ‘স্টেপ ডাউন’ পদ্ধতিতে ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগে রূপান্তরিত করে সম্প্রচার করছে। ‘কেব্ল টিভি ইউনিয়ন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর এক পদাধিকারী বুধবার বলেন, “রাজ্য সরকারের কথা মানতে গেলে বেআইনি ‘স্টেপ-ডাউন’ পদ্ধতিতে ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগে রূপান্তর করিয়ে গ্রাহককে দেখাতে হবে। ব্রডকাস্টারেরা আগেই জানিয়েছেন, তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মানতে গিয়ে আমাদের বেআইনি কাজ করতে হবে কেন?” ইন্ডিপেন্ডেন্ট কেবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ফেডারেশন অফ কেবল অপারেটর্স সংগঠনেরও একই কথা। এ নিয়ে এখনও কোথাও বিক্ষোভের কথা শোনা যায়নি।
তবে অনেক জায়গায় ‘স্টেপ ডাউন’ পদ্ধতিও হচ্ছে না। বারুইপুর, হাওড়া, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, বারাসত, মধ্যমগ্রাম ইত্যাদি মফস্সল এলাকায় ১ অক্টোবর থেকেই ডিসকভারি, অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট্স, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, স্টার স্পোর্টস, ইএসপিএন ইত্যাদি পে চ্যানেলের অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২৭ ডিসেম্বর রাত ১২টার পর সোনি ও জি টিভির বিনোদনমূলক পে চ্যানেলগুলিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। |