ভাঁড়ারে টাকা নেই। কর্মীদের বেতন, পেনশন কোথা থেকে হবে তা নিয়ে প্রায় প্রতিদিন প্রশ্ন তোলেন। তবু নিজের কথা রাখতে সরকারি কর্মীদের বকেয়া ৭ শতাংশ মহার্ঘভাতা (ডিএ) দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার কোচবিহার যাওয়ার পথে বাগডোগরা বিমানবন্দরের বাইরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, জানুয়ারি মাস থেকে এই বাড়তি ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। তিনি বলেন, “রাজ্যে আর্থিক সঙ্কট চলছে। একদম টাকা-পয়সা নেই। তাও আমরা সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা দিচ্ছি।”
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে অবধারিত ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে তীব্র আর্থিক সঙ্কটের কথা তিনি নিজেই বলছেন, সেখানে এই বাড়তি দায় সরকার কী করে নেবে?
মহাকরণে অর্থ দফতরের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ব্যাপারে অর্থ দফতরের কর্তারা যেমন অন্ধকারে, তেমনই অর্থের সংস্থান নিয়েও তাঁদের কিছু জানা নেই। ১ শতাংশ ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের প্রতি মাসে ২৪-২৫ কোটি টাকা খরচ হয়। ফলে ৭ শতাংশ ডিএ দিতে ১৭০-১৭৫ কোটি টাকার প্রয়োজন। |
বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র |
অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশের মতে, আর্থিক সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও যে কৌশলে প্রতি মাসে বেতন হয়ে যাচ্ছে, সেই ভাবে বাড়তি ডিএ-র জন্যও হয়তো টাকার সংস্থান করে ফেলবেন অর্থমন্ত্রী।
কী সেই কৌশল? প্রথমত, বাজার থেকে ঋণ নেওয়া। দ্বিতীয়ত, অন্য খাতের টাকায় বেতন মেটানো।
এ দিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার খবর মহাকরণে পৌঁছতেই সরকারি কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। মুখে মুখে প্রশ্ন ফেরে, ৬ না ৭ শতাংশ! মহাকরণের খবর, যে কয়েক কিস্তি মহার্ঘভাতা বকেয়া রয়েছে, তার প্রথমটি হল ৬ শতাংশ (২০১১-র জানুয়ারি মাসের বকেয়া)। অথচ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ৭ শতাংশ ডিএ দেওয়া হবে। অর্থ দফতরের কর্তারা ব্যাখ্যা দেন, ৭ শতাংশ ডিএ-ই দেওয়া যাবে। এতে অসুবিধার কিছু নেই।
সরকারি তথ্য বলছে, রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা (ডিএ) দেওয়ার ক্ষেত্রে একেবারে পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্র তো বটেই, এমনকী বেশির ভাগ রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মহার্ঘভাতার ব্যবধান ২৭%। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার পরে তা কমে হবে ২০%। কিন্তু অর্থ দফতরের খবর, জানুয়ারিতে ফের এক কিস্তি (সম্ভবত ৯ শতাংশ) ডিএ ঘোষণা করার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ-এর ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াবে ২৯%।
ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা খুশি করতে পারেনি রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনগুলিকে। সিপিএম প্রভাবিত রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বকেয়া সমস্ত মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে। নবপর্যায়ের সাধারণ সম্পাদক সমীররঞ্জন মজুমদার বলেন, “বকেয়া ২০% ডিএ কবে দেওয়া হবে, তা জানাক রাজ্য?” কংগ্রেস প্রভাবিত কর্মী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গর্ভমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর নেতা মলয় মুখোপাধ্যায়ও একই দাবি জানিয়ে বলেন, “জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা আরও এক কিস্তি মহার্ঘভাতা পাবেন। ফলে সরকারি কর্মীদের লাভ কিছু হবে না, উল্টে বকেয়ার পরিমাণ আরও বাড়বে।” পদস্থ আমলাদের একাংশের বক্তব্য, “যাঁদের দিয়ে দফতরের কাজ করাই, তাঁদের থেকে আমরা ২৭% বেতন বেশি পাই। মাঝে-মাঝে খুব অপরাধী মনে হয় নিজেদের।” |