এমনিতেই অন্ধকার। তার উপরে একটি প্রকাণ্ড গর্ত, যার জেরে দুর্ঘটনা কার্যত নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে আগরপাড়া-তেঁতুলতলা অঞ্চলের বি টি রোডে। ইতিমধ্যে প্রাণ গিয়েছে এক জনের। গুরুতর জখম হন অন্তত আরও পাঁচ জন। গর্তটি সারাইয়ের দাবিতে মঙ্গলবার পথ-অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পুলিশ গিয়ে সমাধানের আশ্বাস দিলেও কাজ আটকে প্রশাসনিক চাপান-উতোরে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার রাতে অন্ধকারে ওই গর্ত দেখতে না-পেয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন দুই মোটরবাইক-আরোহী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তাঁরা। এর আগে সোমবার রাতে ওই গর্ত বাঁচাতে গিয়েই এক বৃদ্ধকে চাপা দেয় একটি লরি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার রাতেও সেখানে ঘটেছে দুর্ঘটনা। ওই গর্ত দেখতে পেয়ে একটি গাড়ি আচমকা ব্রেক কষায় পিছন থেকে আসা আর একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। একটি গাড়ির দুই আরোহী গুরুতর জখম হন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শুধু ওই মারণ গর্তটিই নয়, বি টি রোড জুড়ে এখন বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। রাস্তার ধারে পুরসভার ডাঁই করে রাখা আবর্জনা। রাতে অধিকাংশ বাতিস্তম্ভেই জ্বলে না আলো। আর রাস্তার দু’পাশে বেশির ভাগ অংশ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে লরি, বাস। ফলে দুই লেনের বি টি রোড ক্রমে সরু হয়ে যাচ্ছে। |
তার উপরে আট মাস ধরে বি টি রোড ধরে ব্যারাকপুর পর্যন্ত চলেছে মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য মাটি সমীক্ষার কাজ। সেই সঙ্গে চলেছে পলতা জল-প্রকল্পের পাইপ সারানোর জন্য সমীক্ষার কাজ। সব মিলিয়ে উত্তর শহরতলির অন্যতম ব্যস্ত রাজ্য সড়ক বি টি রোডের এখন বেহাল অবস্থা। প্রশাসনের একাধিক সমন্বয় বৈঠকেও ওই সব সমস্যার সমাধান হয়নি।
তা হলে এর সমাধান কী? পুলিশ বলছে, এই বিষয়ে তাদের কিছু করণীয় নেই। তবে অবিলম্বে গর্তটি বন্ধ করে দিতে পারলেই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে। সঙ্গে রাস্তার আলোগুলিও জ্বালানো দরকার।
কিন্তু কে করবে এই কাজ? পুলিশ দায় ঠেলছে পূর্ত দফতরের দিকে আর পূর্ত দফতর বলছে, কাজ করার কথা মেট্রো কর্তৃপক্ষের। ব্যারাকপুরের ডিসি (ট্রাফিক) বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাপ্রবণ সব ক’টি জায়গাতেই পুলিশ গার্ড রেল বসিয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের দিক থেকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সব রকম চেষ্টা আছে। কিন্তু রাস্তা তো আর আমরা সারাব না। ওটা প্রশাসন দেখবে।’’ মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, বিষয়টি পূর্ত দফতর দেখবে। এ দিকে, গর্তের সামনে এই গার্ড রেলগুলিই অন্ধকারে আরও বড় বিপদের কারণ হচ্ছে। গর্তে পড়েই গার্ড রেলে ধাক্কা মেরে নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তাটি বছর দেড়েক আগে কিছুটা মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু এর পরেই বি টি রোড জুড়ে মেট্রোর সমীক্ষা করার কাজ হয়। তার পরেই আবার গর্ত হয়ে অসমান হয়ে পড়েছে।
পুজোর আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল রাস্তা সারানোর। প্রশাসনের সব স্তরে সমন্বয় করে রাস্তা সারানোর একটা চেষ্টা হয়েছিল মাত্র। তবে কাজ পুরোপুরি হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের। পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সিদ্ধার্থ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই রাস্তাটি মেট্রোর সারানোর কথা। এ বছরের বাজেটে ওই রাস্তার খাতে কোনও টাকা আমাদের হাতে আসেনি। গর্তও বোজাতে পারব না।’’ মেট্রো রেলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “ঘটনাটি এই শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখছি মেট্রোর এ বিষয়ে কিছু করণীয় আছে কি না।”
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে তত দিন কি প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই ওই পথে চলতে হবে? ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির উত্তর, ‘‘আমি অবিলম্বে রাস্তা সারানোর বিষয়ে সমন্বয় বৈঠক করার চেষ্টা করছি।’’ |