|
|
|
|
ভিন্ন বয়ান শুভেন্দু ও প্রশাসনের |
হলদিয়ায় এডিএম পদের অবলুপ্তি নিয়ে ধোঁয়াশা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
হলদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসকের (এডিএম) পদ অবলুপ্তির এক মাস পরে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী জানালেন ‘ওই পদ থাকছে’। প্রশাসনের কাছে অবশ্য এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা পৌঁছয়নি। ফলে সাংসদের বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ এই পদের অস্তিত্ব নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
৩০ নভেম্বর হলদিয়ার এডিএম পদ তুলে দেওয়ার নির্দেশ জারি করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই পদে থাকা সুমন হাওলাদার জেলা সদর তমলুকের এডিএম (উন্নয়ন) হিসেবে বদলিও হয়েছেন। কিন্তু বুধবার তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, “ওই নির্দেশ বাতিল করেছে রাজ্য সরকার। হলদিয়ায় এডিএম পদ থাকছে।” পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএম পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি জানান, পদ লোপের নির্দেশ পেলেও তা বাতিলের ‘খবর নেই’ বলে জানিয়েছেন।
বস্তুত, রাজ্যে যেখানে বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্য জেলা, আবগারি জেলা ভাগ করে নতুন নতুন প্রশাসনিক পদ তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে হলদিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে এডিএম পদের বিলুপ্তির প্রয়োজন ছিল না বলেই মনে করছে শিল্পমহল। শিল্পের জন্য রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করবে না, এই তত্ত্বে সিলমোহর হিসেবেই তারা দেখছে নির্দেশিকাটিকে। ‘জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন কমায় হলদিয়ায় এডিএম পদের দরকার নেই’ বলে স্পষ্ট বলা হয়েছে নির্দেশিকাটিতে।
ডিএম অবশ্য পদের বিলুপ্তির সঙ্গে জমি অধিগ্রহণের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “যে সময় হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠছিল, তখন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সদর ছিল হলদিয়া থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে। ফলে প্রশাসনিক কাজের জন্য হলদিয়ায় ওই পদের প্রয়োজন ছিল। এখন পূর্ব মেদিনীপুরের সদর তমলুক থেকে হলদিয়ার দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। যে কারণে এডিএম নিয়োগ করা হয়েছিল তার প্রয়োজনীয়তা এখন নেই।”
ডিএম প্রয়োজন নেই বলে দায় সারলেও বাস্তবে এডিএম পদটি তুলে নেওয়ার ফলে সিইএসসি-সহ শিল্পশহরের বিভিন্ন প্রকল্পই সমস্যায় পড়তে চলেছে। ১৯৯৬-৯৭ সালে পেট্রোকেমিক্যাল-সহ আরও কিছু বড় শিল্পের জন্য প্রচুর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছিল হলদিয়ায়। সেই কাজ দ্রুত করতে ১৯৯৮ সালে হলদিয়া মহকুমার জন্য ‘স্পেশাল ল্যান্ড ইকুইজিশন অফিসার’ ছাড়াও অতিরিক্ত জেলাশাসকের পদ তৈরি করা হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া উপনগরীতে মোট ১৭ হাজার একর জমি অধিগৃহীত। এর মধ্যে প্রায় ৯ হাজার একর ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে, ৭ হাজার একর হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের। বাকি ১২০০ একরের মতো অধিগৃহীত জমি ছিল হলদিয়া এডিএমের হাতে। অধিগৃহীত সমস্ত জমি বিলি হয়ে গেলেও তার পুনর্বাসন সংক্রান্ত ঝামেলা-সহ আইনি ও প্রশাসনিক দিকগুলি এত দিন দেখভাল করতেন এডিএম। পদটি বিলুপ্ত হওয়ায় এই কাজকর্ম কে করবে, প্রশ্ন উঠছে।
এডিএমের কাছে প্রায় ৭৮ একর জমি নিয়ে হলদিয়ায় একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম দফার কাজ শুরু করে দিয়েছে সিইএসসি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার জন্য জমি অধিগ্রহণ এখনও বাকি (মোট ৪৯৮ একর জমি লাগবে)। বাকি ওই জমি কী ভাবে মিলবেতা জানা নেই। এ ছাড়াও কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার, দিঘা-জলেশ্বর রেল প্রকল্পের সম্প্রসারণ-সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে জমি অধিগ্রহণের বিষয় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে।
সেই কারণেই হয়তো ‘প্রশাসনিক এই পদের গুরুত্ব এখনও আছে’ বলেই মনে করছেন তৃণমূল সাংসদ।
|
|
|
|
|
|