বেঙ্গালুরু কাণ্ডে আঙুল ইশান্তের দিকে, জরিমানা দু’জনেরই
ধোনিরা রইলেন ঘরবন্দি,
যত মাতামাতি আফ্রিদিদের নিয়ে
মোতেরার যে সর্দার পটেল স্টেডিয়ামে ৪৮ ঘণ্টা পরে আর একটা ভারত-পাক লড়াই হতে যাচ্ছে, তার থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে প্রায় একই নামের একটা স্টেডিয়াম রয়েছে। আমদাবাদের সব রাস্তা যেন সেই স্টেডিয়ামে গিয়েই আজ মিলেছে।
নরেন্দ্র মোদী যে আরও একবার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এ দিন শপথ নিলেন ওই স্টেডিয়ামে।
লাখ দুয়েক লোকের সামনে মোদীর অনুষ্ঠান যখন এক দিকে চলেছে, তখন ভারত-পাকিস্তান টিম চার্টার্ড বিমানে নেমে পড়েছে আমদাবাদে। মোদী আবার গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্টও। তাঁর জমানায় প্রথম ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হতে যাচ্ছে আমদাবাদে। কিন্তু এ দিন রাজনীতিবিদ মোদীর সামনে মোটামুটি ম্লান হয়ে গিয়েছে ক্রিকেটারদের আকর্ষণ।
আর একটু পরিষ্কার করে বললে ধোনি বাহিনীর আকর্ষণ।
আমদাবাদে প্রবেশ বেঙ্গালুরু কাণ্ডের যুযুধান দুই চরিত্রের।
হোটেল ঢুকছেন ইশান্ত। রাতে লবিতে কামরান।
রাতে টিম হোটেলে গিয়ে দেখা গেল, ভারতীয় ক্রিকেটারদের চিহ্নমাত্র নেই কোথাও। জানা গেল, দুপুরে পৌঁছে জিমে খানিকটা সময় কাটিয়ে ধোনিরা নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন মোটামুটি। আর লবি জুড়ে পাক ক্রিকেটারদের মস্তানি। এই শোয়েব মালিক নামছেন দুটো নতুন ব্যাট হাতে। সঙ্গে সঙ্গে ফ্যানদের হুড়োহুড়ি। অটোগ্রাফ নেওয়ার আব্দার মেটাচ্ছেন তো কেউ কেউ বায়না ধরছেন, একটা ছবি প্লিজ। এক সময় অবস্থা এমন দাঁড়াল, পুলিশ এসে ‘ভারতের জামাই’কে সরিয়ে নিয়ে গেল অন্য দিকে। একটু পরেই আবার লিফট থেকে বেরোলেন শাহিদ আফ্রিদি। আর উনিশ-কুড়ির সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপ স্বপ্নের নায়কের দিকে। একটু ছুঁয়ে দেখতে হবে তো!
দেখে ধন্দ লাগবে। মনে প্রশ্ন জাগবে, কারা ভারতের ক্রিকেটার, কারা পাকিস্তানের। পাক ক্রিকেটারদের নিয়েই স্থানীয় মানুষের যত উন্মাদনা। আফ্রিদি-আকমলরাই যেন ঘরের ছেলে, আর ধোনিরা এসেছেন বিদেশ সফরে!
প্রথম টি-টোয়েন্টি হারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ দিন আরও একটা খারাপ খবর ছিল ভারতীয়দের জন্য। গত কাল বেঙ্গালুরুর ম্যাচে ইশান্ত বনাম কামরানের ঝামেলায় ম্যাচ রেফারি রোশন মহানামা রায় দিয়েছেন, ইশান্তই ঝামেলা শুরু করেন। ফলে ভারতীয় পেসারের জরিমানা হয়েছে ম্যাচ ফি-র ১৫ শতাংশ। কামরানের হয়েছে ৫ শতাংশ। ইশান্ত আবার এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু মহানামা ম্যাচের ভিডিও ফুটেজ এবং আম্পায়ারদের রিপোর্ট আবার খতিয়ে দেখে শাস্তির নির্দেশ বহাল রাখেন। পরে ম্যাচ রেফারি বলেন, “ম্যাচটা ক্রিকেটীয় স্পিরিট মেনেই খেলা হচ্ছিল। কিন্তু ইশান্তের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ঝামেলাটা শুরু করে। তার পরই ওর সতীর্থ এবং আম্পায়াররা হস্তক্ষেপ করে।” পাশাপাশি দুই ক্রিকেটারকে ডেকে ম্যাচ রেফারি এও বলে দেন, এটা অত্যন্ত হাই প্রোফাইল সিরিজ। মাঠে টেনশনও থাকবে। সেটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।
অটোগ্রাফ-শিকারিদের উন্মাদনা এখন পাক-ক্রিকেটারদের নিয়েই।
বুধবার রাতে টিম হোটেলের লবিতে শোয়েব মালিক। আমদাবাদ।
ইশান্তের শাস্তি নিয়ে অবশ্য ভারতীয় টিমের মধ্যে কোনও ক্ষোভ নেই। উল্টে মনে করা হচ্ছে, আরও বেশি শাস্তি হলেও কিছু বলার ছিল না। টিমের সঙ্গে থাকা এক বোর্ড কর্তা এ দিন বলছিলেন, “আমরা সবাই জানি, ইশান্তই আগে গালাগালি করেছিল।”
পাক শিবিরও এই ব্যাপার নিয়ে আর জলঘোলা করতে চাইছে না। রাতের দিকে লবিতে পাওয়া গেল কামরান আকমলকে। তাঁকে ম্যাচ রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করলে পাক উইকেটকিপার সাফ বলে গেলেন, “টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের বলে দিয়েছে, এই নিয়ে কোনও কথা বলা চলবে না।”
‘গ্যাগ অর্ডার’ রয়েছে পিচ কিউরেটর ধীরাজ পারসানার উপরও। ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্টের পরে ধোনির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন পারসানা। তারপর থেকেই বোর্ডের নির্দেশ। এখন কথা বলা তো দূর অস্ত, পারসানার মোবাইল নম্বরও কাউকে দেওয়া হচ্ছে না।
সংঘাতের চার কিসসা
মোরে বনাম মিয়াঁদাদ, সিডনি, বিশ্বকাপ ১৯৯২
পাকিস্তান ইনিংসে জাভেদ মিঁয়াদাদ ব্যাট করার সময় পিছন থেকে ক্রমাগত আবেদন ভারতীয় উইকেটকিপার কিরণ মোরের। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্লেজিং। মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে পাল্টা মুখ খোলেন মিঁয়াদাদ। মোরের দিকে ফিরে ব্যাঙের মতো লাফ দু’তিন বার। এই ঘটনার পরেই ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাওয়া শুরু পাক দলের।
শাস্তি: হয়নি। ম্যাচ রেফারি টেড উইকসের ব্যাখ্যা ছিল, “দুই ক্রিকেটারই ইংরেজিতে কিছু না বলায় ঘটনাটা পরিষ্কার বোঝা যায়নি।”

প্রসাদ বনাম সোহেল, বেঙ্গালুরু, বিশ্বকাপ, ১৯৯৬
এক্সট্রা কভার দিয়ে প্রসাদের বলে চার মেরে আমির সোহেল ব্যাট দেখিয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, যাও বলটা গিয়ে নিয়ে এস। পরের বলেও মারব। প্রসাদের পরের বলেই উড়ে গেল সোহেলের অফ-স্টাম্প। এরপরই সোহেলকে লক্ষ্য করে গালিগালাজ শুরু প্রসাদের। অশান্ত পরিস্থিতি শান্ত করেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন।
শাস্তি: ম্যাচ রেফারি রমন সুব্বারাও দু’জনকেই সতর্ক করে ছেড়ে দেন।

হরভজন বনাম শোয়েব, কলম্বো, এশিয়া কাপ ২০১০
হরভজন ব্যাট করার সময় শোয়েবের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। পাল্টা দিলেন হরভজনও।
শাস্তি: ম্যাচ রেফারি দু’জনকে ডেকেই সতর্ক করে দেন।

গম্ভীর বনাম আফ্রিদি, কানপুর, ওয়ান ডে সিরিজ, ২০০৭
ম্যাচ চলাকালীন মাঠের মধ্যেই গম্ভীর এবং আফ্রিদির ঝামেলা। গম্ভীর ব্যাট করার সময় ক্লোজ ইন থেকে ক্রমাগত স্লেজিং করে যাচ্ছিলেন আফ্রিদি। রান নেওয়ার সময় পাল্টা গালিগালাজ গম্ভীরের।
শাস্তি: গম্ভীরের ৬৫ শতাংশ এবং আফ্রিদির ৯৫ শতাংশ ম্যাচ ফি কেটে নেন ম্যাচ রেফারি।
পাকিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়ক মিসবা উল হক আবার এ সবের মধ্যেই টিমের জন্য জরুরি ‘এসওএস’ ছেড়ে রেখেছেন। আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই ভারতে এসে যাচ্ছেন মিসবা। আসছেন সাদিক মহম্মদ, ওয়াসিম বারি, ইন্তিখাব আলমের মতো প্রাক্তনরাও। আর ছেলেদের কাছে মিসবার বার্তা এ রকম, “জিতেছ ঠিক আছে। তবে আত্মতুষ্টি দেখিও না। ভারত কিন্তু পরের ম্যাচে ঝাঁপিয়ে পড়বে।”
রাত দশটা নাগাদ দেখা গেল প্রায় পুরো পাকিস্তান দলই লবিতে নেমে এসেছে। ডিনার করতে। ভারতীয় খাদ্যই এখন প্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তানিদের কাছে। তা সে ডিনার টেবিলে হোক, কী বাইশ গজে! এখন দেখার, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও ভারতীয় বোলারদের দিয়ে ডিনার সারেন কি না হাফিজ-শোয়েবরা!

ছবি: উৎপল সরকার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.