|
|
|
|
হৃদরোগ না আঘাত, তোমরের মৃত্যু ঘিরে বাড়ছে বিভ্রান্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ময়নাতদন্ত বলছে, আঘাতের ফলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল সুভাষ চাঁদ তোমরের। আবার চিকিৎসকরা বলছেন, তোমরের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্নই ছিল না। হাসপাতালে আসার আগেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার, দুই বক্তব্য একই হাসপাতালের। রবিবার তোমরকে ভর্তি করা হয় সরকারি রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে। মৃত্যুর পরে সেখানেই তাঁর ময়নাতদন্ত হয়। তত ক্ষণে আট জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে ফেলেছে দিল্লি পুলিশ। সেই অভিযুক্তদের দলে রয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আমআদমি পার্টিরও কয়েক জন। তখনই কেজরিওয়ালরা দাবি করেন, পুলিশ যা বলছে তা ঠিক নয়। কোনও আঘাতে নয়, তোমরের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে নিয়ে কেজরিওয়ালদের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। তোমরের পরিবারও দাবি করে, হৃদরোগের কোনও ইতিহাস ছিল না সুভাষের। তিনি মারধরের ফলেই মারা গিয়েছেন।
কিন্তু সেই রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালের সুপার টি এস সিধু সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন। তাঁর সঙ্গে যোগ হয়েছে দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানও, যাঁরা বলছেন, তোমর যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাঁরা সেখানে হাজির ছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্যও করেছেন।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের হাতে তোমরের মৃত্যু হয়েছে বলে কি পুলিশ-প্রশাসন কৌশলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করছে!
কী বলছে দিল্লি পুলিশ? তাদের হাতে সব থেকে বড় প্রমাণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট দেখিয়ে দিল্লি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কে সি দ্বিবেদী বলেন, “তোমরের ঘাড়ে ও বুকে ভোঁতা কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। তার ফলেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।” দ্বিবেদী আরও জানান, “তোমরের বুকে বাঁদিকের তিনটি পাঁজরও ভেঙেছিল বলে ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে। নরম টিস্যুতে এবং ঘাড়ের পেশিতে ‘ব্লাড এফিউশন’ হয়েছিল।” মারধরের অভিযোগ তোমরের ছেলে আদিত্যরও।
কী বলছেন রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালের সুপার টি এস সিধু?
তাঁর বক্তব্য, সামান্য কিছু কাটাছেঁড়া বাদ দিলে তোমরের শরীরের বাইরে বা ভিতরে তাঁরা কোনও আঘাতের চিহ্ন পাননি। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মানসিক ভাবে তিনি যথেষ্ট আঘাত পেয়েছিলেন।
চিকিৎসকদের মধ্যে এই পরস্পরবিরোধী মন্তব্য দেখিয়ে কেজরিওয়ালের অনুগামী মণীশ সিসোদিয়ার বক্তব্য, পুলিশ রাজনীতি করছে। দিল্লির পুলিশ-কর্তারা আবার বলছেন, এই ঘটনার তদন্তের ভার ক্রাইম ব্রাঞ্চকে দেওয়া হয়েছে। তারাই সব কিছু খতিয়ে দেখবেন।
এর মধ্যে এসে পড়েছে কয়েক জন বিক্ষোভকারীর বক্তব্য। তাঁদের দাবি, তোমর যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁরা দেখাশোনা করেছিলেন। এঁদের মধ্যে দু’জন আজ সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছেন। যোগেন্দ্র এবং পলিন। যোগেন্দ্রর দাবি, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। ঘটনার দিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, বিক্ষোভকারীদের পিছনে তাড়া করতে গিয়ে হঠাৎই পড়ে যান তোমর। আরও কয়েক জন পুলিশও তখন সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাঁরাও বিক্ষোভকারীদের পিছনে ধাওয়া করেন। পরে পুলিশের জিপে চাপিয়ে তোমরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যোগেন্দ্র বলেন, “আমিও ওই জিপে ছিলাম। ওঁকে হাসপাতালেও দেখেছি। শরীরে কোনও আঘাত ছিল না। তিনি ভিড়ের পায়ের তলাতেও পড়েননি। কেউ মারধরও করেনি।”
একই দাবি করেছেন আর এক প্রত্যক্ষদর্শী পলিন। বিক্ষোভের সময় পলিন নিজেও মাথায় আঘাত পান। তার চিকিৎসা করে ফেরার সময়ই তিনি তোমরকে পড়ে যেতে দেখেন। পলিনের বক্তব্য, “ঘটনার সময় বিক্ষোভকারীদের ভিড় থেকে ৫০-৬০ মিটার দূরে ছিলেন তোমর। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আমিই ওঁর জ্যাকেট ও শার্টের বোতাম খুলে দিই। আমরা না থাকলে ওঁর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হত। গোটা শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছিল। কিন্তু কোথাও কোনও আঘাত ছিল না।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান শুনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশ কি তা হলে মিথ্যে কথা বলেছে? যোগেন্দ্র এবং পলিনেরও বক্তব্য, সত্যি বলছে না পুলিশ।এই ভাবে তারা বিক্ষোভকে ধামাচাপা দিতে চাইছে। দু’জনেই জানিয়েছেন, তারা পুলিশকে নিজেদের বক্তব্য জানাবেন।
এই বিতর্কের মধ্যেই আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তোমরের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বক্তব্য, “এই ধরনের বিক্ষোভ সামলানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। সরকার এই ঘটনা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা নিয়েছে।” |
|
|
|
|
|