মাসে নিট আয়:
৫০,০০০ |
টাকা রাখেন (বছরে) |
• পিএফ (বাধ্যতামূলক):
৬০,০০০
• পিএফ (ঐচ্ছিক):
৬০,০০০
• জীবন বিমা:
৬৫,০০০ (বিমা মূল্য ৬ লক্ষ)
• পেনশন প্রকল্প:
১১,০০০ (বিমা মূল্য ৩.৬০ লক্ষ)
• পিপিএফ:
১,০০,০০০ (এখনও পর্যন্ত মোট ৬ লক্ষ) |
সম্পদ |
• স্থায়ী আমানত:
১০,০০,০০০
• শেয়ার:
১০,০০,০০০
• জমি:
১০,০০,০০০
(বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী)
• পরিকাঠামো বন্ড: ৪,০০,০০০ (পাঁচ বছরের)
• মাসে নগদ সঞ্চয়:
২০,০০০ |
|
• প্রথমেই
একটা প্রশংসা করে শুরু করা ভাল। তা হল, জহরবাবু যথেষ্ট মিতব্যয়ী। সঞ্চয়ের চেষ্টা তারিফযোগ্য। অন্তত তাঁর আয়, সঞ্চয় ও হাতে থাকা সঞ্চয়যোগ্য টাকার অঙ্ক তা-ই বলে।
কিন্তু এখন জহরবাবুর হাতে অবসরের আগে মাত্র কয়েকটি বছর রয়েছে। তাই এই সময়ে তাঁকে যতটা সম্ভব ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ে মন দিতে হবে। এর মধ্যে আবার দুই মেয়ের পড়াশোনা ও বিয়ের চিন্তা রয়েছে। লক্ষ্য রয়েছে, জল পরিশোধনাগার গড়ার। আসুন দেখে নিই কী ভাবে, কত টাকা জমালে এই সব লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব হবে তাঁর পক্ষে।
• গোড়ার কথা
অতিরিক্ত পিএফ জমা করা এবং পিপিএফ-এ লগ্নি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জহরবাবু। চাকরির শেষ দিন পর্যন্ত এ ভাবে অতিরিক্ত পিএফ জমা দিয়ে যাওয়া উচিত। নিয়মিত টাকা জমিয়ে যাওয়া উচিত পিপিএফ-এও। এই টাকা যেন অন্য কোনও খাতে খরচ বা বিনিয়োগ করা না হয়। এমনকী ব্যবসা শুরু করলেও, তার জন্য পিপিএফ-এ টাকা জমানো বন্ধ করা উচিত হবে না। কারণ, ব্যবসা না-চললে, ওই টাকা কাজে আসবে।
জহরবাবুর বয়স ৫৫। এই বয়সে তাঁর নতুন করে আর জীবনবিমা করার প্রয়োজন নেই। বরং বর্তমান পলিসিগুলিতে নিয়মিত টাকা দিন। চাইলে পেনশন পলিসির ক্ষেত্রে ২,০০০ টাকার টপ-আপ নিতে পারেন।
এ বার আসি তাঁর মূল তিন লক্ষ্যে। দেখি, স্থায়ী আমানত এবং শেয়ারের টাকা দিয়ে তা পূরণ হয় কি না—
লক্ষ্য: সন্তানদের পড়াশোনা
উপায়: জহরবাবুর বড় মেয়ে কলা বিভাগে স্নাতক স্তরে পড়ে। সে যদি ভবিষ্যতে কলা বিভাগেই স্নাতকোত্তর পড়তে চায়, তা হলে বেশি খরচ হবে না। কিন্তু এমবিএ বা মাস কমিউনিকেশন-এর মতো কোর্স-এ পড়াশোনা করতে চাইলে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে।
এখানে আমি কিন্তু পড়ার পুরো খরচের কথাও বলছি না। তা অনেক বেশি। সে জন্য হয়তো শিক্ষা ঋণ নিতে হবে। কিন্তু সে সব বাদ দিয়ে শুধু বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি, সেখানে বসার খরচ ইত্যাদি বাবদই শুরুতে তিন লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হবে বলে আমার ধারণা। দু’আড়াই বছরে তা জোগাড় করা হয়তো সম্ভব হবে না জহরবাবুর পক্ষে। তাই বুদ্ধি করে বর্তমান সঞ্চয়কেই ব্যবহার করতে হবে।
আর ছোট মেয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পৌঁছতে এখনও সাড়ে পাঁচ-ছ’বছর দেরি। মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রাখলে তখন তারও পড়াশোনার জন্য গোড়াতেই অন্তত ৫ লক্ষ টাকা সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে জহরবাবুকে। তাই এই সময়ের জন্য প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে এসআইপি-র মাধ্যমে লগ্নি করুন। দেখবেন, টাকার জোগাড় করতে অনেকটাই সুবিধা হবে।
লক্ষ্য: ব্যবসা শুরু
উপায়: জল পরিশোধনের ব্যবসা সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নেই। তবে নিতান্ত সাধারণ জ্ঞান থেকে কয়েকটি কথা বলতে পারি—
(১) সাধারণত এই ধরনের ব্যবসায় জমির খরচই প্রায় ৫০%। জহরবাবুর জমি রয়েছে। তাই তিনি তা এ কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
(২) বাকি মূলধন জোগাড় হতে পারে ঋণদাতা ব্যাঙ্ক বা সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। জমি হাতে থাকলে ঋণ পাওয়া অনেকটাই সহজ হতে পারে।
(৩) ঋণ অনুমোদনের আগে প্রথম এক বছর হয়তো কারখানা চালানোর টাকা নিজেকেই দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে শেয়ারের টাকা কাজে লাগাতে পারেন। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতি মাসে বুঝে-শুনে বিক্রি করতে পারেন কিছু শেয়ার। এক বছরের বেশি হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করলে ভাল। তবে লার্জ ক্যাপ শেয়ার বা বেশি ডিভিডেন্ড দেয় এমন শেয়ার ধরে রাখার চেষ্টা করুন।
লক্ষ্য: মেয়ের বিয়ে
উপায়: আগামী ৫ বছর প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা মেয়েদের বিয়ের খাতে লগ্নি করুন। এর মধ্যে ৭,৫০০ টাকা এসআইপি-র মাধ্যমে ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে রাখতে পারেন। আর বাকি ২,৫০০ টাকা রাখুন ডাকঘরে রেকারিং ডিপোজিটে।
এসআইপি-তে ১২% রিটার্ন ধরলে, জমবে প্রায় ৬,১২,০০০ টাকা। রেকারিং-এ ১,৮৩,০০০। বিয়ের সময় যত কাছে আসবে, তত ঝুঁকিহীন প্রকল্পে লগ্নি করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ৫ বছর সম্পূর্ণ হলে ওই টাকা ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখে দিতে পারেন।
• বাকি টাকায় স্বাস্থ্য বিমা সব লগ্নি করেও জহরবাবুর হাতে ৩,০০০ টাকা থাকছে। এর অর্ধেক তিনি স্বাস্থ্য বিমায় লগ্নি করতে পারেন। বা লগ্নি থাকলে, বাড়াতে পারেন। ব্যাঙ্কে এক বছরের মেয়াদে রেকারিং করুন বাকি ১,৫০০ টাকা। |