ইন্টারনেটে আয়কর রিটার্ন
ক্লিক্ করতেই কর জমা
য়কর দফতরের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে আমাদের ক্ষোভ অনেক দিনের। কখনও রিটার্ন জমা দেওয়ার পর তা প্রসেসিংয়ে অকল্পনীয় সময় লাগে। কখনও আবার টাকা ফেরত (রিফান্ড) পেতে গড়িয়ে যায় বছর। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান মিলেছে। সৌজন্যে তথ্যপ্রযুক্তি। অনলাইনে (ইন্টারনেট মারফত) আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার এই ব্যবস্থার পোশাকি নাম ই-ফাইলিং।

ই-ফাইলিংয়ের সুবিধা
• রিটার্ন জমার ঝক্কি অনেক কম।

• প্রসেসিংয়ে আগের থেকে অনেক কম সময় লাগে।

• রিফান্ডও পাবেন তাড়াতাড়ি।

দুই জমানার ফারাক
হাতে হাতে রিটার্ন জমা দেওয়া হলে, তার প্রসেসিং হয় আঞ্চলিক দফতরে। সে ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা পড়ার পর শুধু সংশ্লিষ্ট দফতরে ফাইল যাওয়া এবং ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে দিয়ে করের হিসাব করানোর কাজেই খরচ হয়ে যায় অনেকটা সময়।
অথচ অনলাইন ব্যবস্থায় শুধু রিটার্ন প্রসেসিংয়ের জন্যই তৈরি হয়েছে বিশেষ কেন্দ্র। তাই এই ব্যবস্থায় রিটার্ন জমার পর তা সরাসরি চলে যায় ওই প্রসেসিং কেন্দ্রে (সেন্ট্রালাইজড প্রসেসিং সেন্টার)। সেখানেই আয়করের হিসাব কষা হয়। দেখা হয় আয়করদাতা রিফান্ড পাবেন, না কি তাঁকে আরও কর জমা দিতে হবে। কাজেই ফাইল চালাচালির প্রশ্ন নেই। সময় অপচয়েরও সম্ভাবনাও কম।
আপাতত বেঙ্গালুরুতে এ রকম একটি কেন্দ্র রয়েছে। এখন অনলাইন ব্যবস্থায় জমা পড়া সব রিটার্নের প্রসেসিং হচ্ছে সেখানে। তা ছাড়া, দেশ জুড়ে আরও কয়েকটি প্রসেসিং কেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়কর দফতর। পরিকল্পনা রূপায়িত হলে, আয়কর রিটার্ন জমার গতি আরও বাড়বে।

আদি পর্ব
অনলাইনে রিটার্ন জমার জন্য প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে আপনাকে। কী ভাবে তা করবেন? আসুন সেই পদ্ধতির খোঁজ নিই—

• ঢুকুন www.incometaxindia.gov.in কিংবা www.incometaxindiaefiling.gov.in ওয়েবসাইটে।

• সেখানেই ‘ফাইল্ রিটার্নস অনলাইন’ লিঙ্কে গেলে ‘ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন’ অপশন পাবেন।
• যে পেজটি খুলবে, সেখানে ‘নিউ-টু ই-ফাইলিং’ লিঙ্কে ক্লিক্ করলে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পাবেন।

• ফর্মে পর পর যে ভাবে, যা যা তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা লিখে ফেলুন। নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, প্যান নম্বর, ই-মেল আইডি, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। দিতে হবে ব্যক্তিগত ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ডও।

• এ বার পালা ইনকাম ট্যাক্স অ্যাকাউন্ট সক্রিয় (অ্যাক্টিভেট) করার। নির্দিষ্ট লিঙ্কে ক্লিক্ করে রেজিস্ট্রেশন ফর্মটি পাঠানোর পর আসবে অ্যাক্টিভেশন মেল। তাতে দেওয়া নির্দেশ অনুসরণ করে অ্যাকাউন্ট চালু করুন। সব ঠিকঠাক হল কি না, তা সঙ্গে সঙ্গেই জেনে যাবেন আপনি।

রিটার্ন জমার পদ্ধতি
ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করুন। যাঁরা চাকরি করেন এবং যাঁদের সুদ থেকে আয় হয়, তাঁরা quick e-file ITR-1 লিঙ্ক-এ গিয়ে ক্লিক্ করলে রিটার্ন ফর্ম পাবেন। তা পূরণ করে অনলাইনে পাঠিয়ে দিন।

ফর্মের ফরমায়েশ
তা হলে অ্যাকাউন্ট খোলার পর রিটার্ন জমার জন্য ফের একটি ফর্ম ভর্তি করতে হচ্ছে আপনাকে। সেখানে যে যে তথ্য দিতে হবে, তা হল—

• নাম, ঠিকানা-সহ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য (পার্সোনাল ইনফর্মেশন)।

• আয়ের (বেতন, সুদ) বিবরণ।

• বেতন বা ব্যাঙ্ক আমানতে কী কী টিডিএস (উৎসে যে কর কাটা হয়) কাটা হয়েছে, তার বিবরণ।

• কর বাবদ যা মেটানো হল, তার ভেরিফিকেশন বা প্রমাণ।

• আয়কর আইনের ৮০জি ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ডোনেশন (অনুদান) দিয়ে থাকলে, তাতে কর-ছাড় পেতে পারেন আপনি। তাই সে সম্পর্কে তথ্য জমা দিন।

সঙ্গে ফর্ম-১৬ দিতে হবে কি?
আয়কর দফতরের তথ্যভাণ্ডারেই করদাতার ফর্ম-১৬ রয়েছে। তাই অনলাইনে রিটার্ন জমা পড়লে, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ফর্ম-১৬ সরাসরি ই জুড়ে যাবে। ফলে আলাদা করে আর তা জমা দিতে হবে না।

রিফান্ড পেতে
রিফান্ড পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে রিটার্ন ফাইল করার সময়েই। রিফান্ড-এর লিঙ্কে গিয়ে ক্লিক্ করে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, চেকের এমআইসিআর (ম্যাগনেটিক ইঙ্ক ক্যারেকটার রিকগনিশন) কোড, অ্যাকাউন্টের ধরন (সেভিংস না কারেন্ট) ইত্যাদি জানাতে হবে।

তথ্য যাচাই
ফর্মের প্রতিটি পাতা ঠিকঠাক পূরণ হল কি না, তা দেখে নিতে হবে। পাতার বাঁ দিকে ‘ভ্যালিডেট’ বলে একটি লিঙ্ক পাবেন। ফর্ম পূরণ করার পর ওই লিঙ্কে ক্লিক্ করুন। কোথায় কী ভুল করেছেন, তা দেখা যাবে সঙ্গে সঙ্গে। সব ঠিক থাকলে ‘সাবমিট’ লিঙ্কে গিয়ে ক্লিক্ করে তা জমা দিতে হবে। রিটার্ন জমার স্বীকৃতি হিসেবে পাঠানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটি অ্যাকনলেজমেন্ট পাবেন আয়করদাতা। তার প্রিন্ট আউট অবশ্যই নিয়ে নেবেন।

সই করতে ভুলবেন না
অনলাইনে রিটার্ন জমায় সইয়ের ক্ষেত্রে পুরোদমে ডিজিটাল সিগনেচার চালু করতে চায় আয়কর দফতর। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। তবে আপাতত কলম এবং ডিজিটাল, দুই পদ্ধতিতেই সই করার ব্যবস্থা চালু আছে।

অনলাইনেও কলমে সই
আগেই বলেছি, রিটার্ন জমার পর অ্যাকনলেজমেন্ট আসবে। সেখানে কলমে সই করার নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। ওই সই করা অ্যাকনলেজমেন্টের প্রিন্ট-আউট আয়কর দফতরের নির্দিষ্ট ঠিকানায় ১২০ দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে হবে। তবে তা সাধারণ পোস্ট বা স্পিড পোস্টেই পাঠাতে হবে। রেজিস্টার্ড পোস্ট বা ক্যুরিয়ারে পাঠানো চলবে না।

নেটের সই
ডিজিটাল সইয়ের সফটওয়্যার সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে কিনতে হবে (এ নিয়ে আগের সংখ্যায় আলোচনা করেছি আমরা)। তার পর সেটি ব্যবহার করে নেটেই সই করা যাবে।
ডাক্তার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, আইনজীবী ইত্যাদি পেশাদারদের মধ্যে যাঁদের বছরে আয় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি এবং আয়কর আইনের ৪৪এবি ধারায় অডিট করাতে হয়, তাঁদের জন্য ডিজিটাল সিগনেচার বাধ্যতামূলক। কলমে সই চলবে না। এ ছাড়া, চাকরিজীবী, পেনশনভোগী কিংবা সুদ থেকে আয় করছেন এমন ব্যক্তি ছাড়া বাকি সকলের ক্ষেত্রে করযোগ্য আয় বছরে ১০ লক্ষ টাকার বেশি হলে, অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক।

জমা পড়ল তো?
কর ঠিকঠাক কাটা হয়েছে কি না। এবং তা ঠিকমতো আয়কর দফতরে জমা পড়েছে কি না কী ভাবে তা জানবেন?

www.incometaxindia.gov.in ওয়েবসাইটে যান। সেখানে ই-ফাইলিংয়ের এর পেজ-এ ঢুকলেই দেখবেন ‘ভিউ ফর্ম ২৬ এএস’ রয়েছে। সেটা খুলুন। আপনার কর জমা পড়েছে কি না, দেখতে পাবেন সেখানেই।

• যেতে পারেন ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি লিমিটেড (এনএসডিএল)-এর ওয়েবসাইটেও। www.nsdl.co.in-এ গিয়ে ডাউনলোড-এর মধ্যে পাবেন ‘ফর্মস’। এর মধ্যে রয়েছে ‘ভিউ অ্যানুয়াল ট্যাক্স স্টেটমেন্ট’ (২৬ এএস)। দেখে নিন নথিবদ্ধ অঙ্কের সঙ্গে ফর্ম ১৬-এ উল্লিখিত অঙ্ক মিলছে কি না। সরকার যে-কর কেটে নিচ্ছে, তার খুঁটিনাটি থাকে এনএসডিএল-এর তথ্যভাণ্ডারে।

• না-মিললে, যে কর্তৃপক্ষ কর কেটেছেন (চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা, সুদ থেকে আয়ের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক), তার কাছে গরমিলের বিষয়টি জানান। না হলে পরে তদন্ত করতে পারে আয়কর দফতর। তা বেশ ঝক্কির।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.