|
|
|
|
জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা, মৃত চার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচন সেরে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরবাইক আরোহী চার সিপিএম কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার সরাই এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। মৃতদের মধ্যে স্কুল নির্বাচনে অভিভাবক প্রতিনিধি আসনে নব নির্বাচিত এক বামফ্রন্ট প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়াও মৃতদের মধ্যে দুজন সম্পর্কে দাদা-ভাই। বাকি দু’জন খুড়তুতো ভাই।
পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম দেবেশচন্দ্র বর্মন (৪০), বৈদ্যনাথ বর্মন(৩২), নির্মল বর্মন (৩৮) ও চন্দন বর্মন(৩৪)। ওই দুর্ঘটনায় জখম খগেন্দ্রনাথ বর্মন ও সুখেশ্বর বর্মন নামে দুই ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মৃত ও জখমদের প্রত্যেকেরই বাড়ি স্থানীয় মহাদেবপুর ও সরাই এলাকায়। দেবেশবাবু স্কুল পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি আসনে বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জেতেন। দেবেশবাবু ও বৈদ্যনাথবাবু সম্পর্কে খুড়তুতো দাদা ভাই। নির্মলবাবু ও চন্দনবাবু সম্পর্কে নিজের দাদা ভাই। দুর্ঘটনার পর চালক ও খালাসি ট্রাক ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, কুয়াশার কারণে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলার কারণেই ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে দুর্ঘটনাটি ঘটে। রায়গঞ্জ থানার আইসি দীনেশ প্রামাণিক বলেন, “ট্রাকটিকে আটক করা হয়েছে। চালক ও খালাসির খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রায়গঞ্জের দেবীনগর কৈলাসচন্দ্র রাধারানি বিদ্যাপীঠে স্কুল পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধিদের ছ’টি আসনে নির্বাচন হয়। রাতে ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, প্রতিটি আসনেই বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীরা কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের হারিয়ে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী দেবেশবাবু রায়গঞ্জ পুরসভার ট্রাক্টর চালকের পদে কাজ করতেন। পেশায় নির্মাণকর্মী বৈদ্যনাথবাবু, নির্মলবাবু ও চন্দনবাবু সিপিএম কর্মী হিসেবে নির্বাচন দেখতে স্কুলে গিয়েছিলেন।
রাতে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তিনটি বাইকে চেপে দেবেশবাবু-সহ ছয় সিপিএম কর্মী বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় সরাই এলাকায় মালদহগামী একটি ধানবোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছন থেকে তাঁদের বাইকগুলিকে পর পর ধাক্কা মেরে রাস্তার ধারে নয়ানজুলিতে গিয়ে উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই দেবেশবাবু, বৈদ্যনাথবাবু ও চন্দনবাবুর মৃত্যু হয়। ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে মারা যান নির্মলবাবু। খগেন্দ্রনাথবাবু ও সুখেশ্বরবাবুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুর্ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে উদ্ধার কাজ দেরিতে শুরু করার অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় এক ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে বাসিন্দাদের তাড়া করলে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ী বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। মৃতেরা প্রত্যেকেই গরিব পরিবারের। দলের তরফে মৃতদের পরিবারকে সাধ্যমতো সাহায্য করা হবে।”
ময়নাতদন্তের পর এ দিন বিকালে রায়গঞ্জ পুরসভার তরফে পুরকর্মী দেবেশবাবুর মৃতদেহ পুরসভায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মৃতদেহে শ্রদ্ধা জানান পুরসভার কর্মী আধিকারিকেরা। এই ঘটনায় এ দিন শোক প্রকাশ করে পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগ এক বেলা বন্ধ রাখা হয়। জনস্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক সুদেব দাস বলেন, “দেবেশবাবু অত্যন্ত নিরীহ মানুষ বলে পরিচিত ছিলেন। সরকারি নিয়মেই তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে।” দেবেশবাবুর স্ত্রী ছাড়াও ১২ ও ৫ বছর বয়সী দুই ছেলে রয়েছে। ভাই সনাতন বর্মন বলেন, “সরকারি ক্ষতিপূরণ না পেলে দাদার সংসার ভেসে যাবে।” বৈদ্যনাথবাবুর স্ত্রী রেখাদেবী সাড়ে ৪ বছরের ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
চন্দনবাবুর ১৩ ও ৭ বছরের দুই মেয়ে রয়েছে। নির্মলবাবুর ৯ বছর ও ৭ বছরের দুই মেয়ে ও ৫ বছরের এক ছেলে রয়েছে। চন্দনবাবুর স্ত্রী পূর্ণিমা দেবী ও নির্মলবাবুর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী দুজনেই ভেঙে পড়েছেন। |
|
|
|
|
|