|
|
|
|
মানবাজারেও ফের ধাক্কা |
কাশীপুরের চার স্কুলেই হার তৃণমূলের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কোথাও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙার খেসারত গুনতে হয়েছে তৃণমূলকে। কংগ্রেস ভোট কাটার ফলে জিতেছে বামফ্রন্ট। আবার কোথাও কোথাও ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। অনেক জায়গায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট না করেও ক্ষমতায় ফিরেছে কংগ্রেস।
চুম্বকে রবিবার পুরুলিয়ার স্কুলভোটের ফলাফলের এটাই নির্যাস।
তৃণমূল শোচনীয় ফল করেছে কাশীপুরে। এখানে চারটি স্কুলের মধ্যে একটিতেও তারা জিততে পারেনি। কাশীপুর ব্লকের সোনাথলী হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধির ছ’টি আসনের সব ক’টিতেই জিতেছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীরা। একই ছবি হুড়া গার্লস হাইস্কুলে। আবার হুড়া বয়েজ হাইস্কুলে সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন ৫টি আসনে। তৃণমূল পেয়েছে একটি আসন। হুড়া ব্লকেরই কলাবনী হাইস্কুলের দখল আগে তৃণমূলের দখলে থাকলেও এ বার ছ’টি আসনের মধ্যে তিনটিতে জিতেছেন সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা।
মানবাজারেও ফের ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। দু’দিন আগে মানবাজার টাউন লাইব্রেরির ভোটে তৃণমূল প্রার্থী দিতে না পারায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিপিএমের জেতার পথ সুগম হয়েছে। রবিবার মানবাজার গার্লস স্কুলের পরিচালন সমিতির ভোটে অভিভাবক প্রতিনিধির ৬টি আসনেই জিতেছেন সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা। গত নির্বাচনে তৃণমূল দু’টি আসন পেলেও এ বার তাদের শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। এই বিপর্যয়ের জন্য তৃণমূল কর্মীদের একাংশ দলের কিছু স্থানীয় নেতার সঙ্গে সিপিএমের এক ব্যবসায়ী নেতার ‘ঘনিষ্ঠতা’কে দায়ী করেছেন। মানবাজার ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, “এই হার আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। ফল কেন এমন হল, দলীয় ভাবে আলোচনা করে দেখব।”
মানবাজারে হার হলেও দক্ষিণ পুরুলিয়ার অন্য স্কুলগুলিতে তৃণমূলের জয়জয়কার। যেমন, বান্দোয়ানের কুচিয়া হাইস্কুল প্রায় তিন দশক পরে সিপিএমের হাতছাড়া হয়েছে। বান্দোয়ান ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি জগদীশ মাহাতো বলেন, “সিপিএম এত দিন এই স্কুলে ভোট হতে দেয়নি। আমাদের প্রার্থী পঞ্চানন সিং মনোনয়নপত্র জমা করে ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাও গিয়েছেন। এখানে আমরা ৫-১ আসনে জিতেছি।” বরাবাজারের লটপদা হাইস্কুল ৬-০ এবং শুকুরহুটু হাইস্কুলে ৫-১ আসনে পরিচালন সমিতি দখল করার পথে তৃণমূল এগিয়ে আছে। দলের ব্লক সভাপতি সুদর্শন মাহাতো বলেন, “এই প্রথম লটপদা স্কুলে আমরা জয় পেলাম। শুকুরহুটুতে জয় ধরে রেখেছি।”
পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে সফল হয়েছে তৃণমূল। পুরুলিয়া শহরের এমএম ম্যানেজড হাইস্কুল এবং এবং পুরুলিয়া ১ ব্লকের গোবিন্দপুর হাইস্কুলে জোট সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন। এমএম ম্যানেজড হাইস্কুলে জোট ছ’টি আসনই পেয়েছে। গোবিন্দপুরে তাদের ঝুলিতে ৫টি আসন। নিতুড়িয়া ব্লকের ভামুরিয়া শশীমুখী হাইস্কুলে এসইউসি-র সঙ্গে জোট করে ছ’টি আসনেই জিতেছে তৃণমূল। আবার রঘুনাথপুর থানা এলাকার নিগমনগর আশ্রম হাইস্কুলে তৃণমূল এবং সিপিএম তিনটি করে আসন পেয়েছে। পাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভাঁওরিডি হাইস্কুলে ছ’টি আসনই পেয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। পুরুলিয়া ২ ব্লকের মালথোড় হাইস্কুলে সংযুক্ত মোর্চা গড়েছিল কংগ্রেস, জেএমএম এবং পিডিএস। সব ক’টি আসন পেয়েছে তারা।
অন্য দিকে, জঙ্গলমহল এলাকার বাঘমুণ্ডি ও ঝালদা ব্লকে নিজেদের দখলে থাকা স্কুলগুলিতে ফের জিতেছে কংগ্রেস। সুইসা হাইস্কুলে ছ’টি আসনেই জিতেছেন কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীরা। অযোধ্যা পাহাড় আশ্রমধর্মী উচ্চ বিদ্যালয়ে কংগ্রেস পেয়েছে চারটি আসন। ঝালদার জিলিংলহর হাইস্কুলেও ক্ষমতায় এল কংগ্রেস। আবার জয়পুর ব্লকের পুন্দাগ হাইস্কুলে বামফ্রন্ট পাঁচটি আসনে জিতেছে। এই স্কুলগুলিতে প্রার্থী দিলেও কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি তৃণমূল।
কাশীপুর, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া, বাগমুন্ডি,পাড়া ও জয়পুর বিধানসভা এলাকার যে ১৫টি স্কুলে রবিবার নির্বাচন হয়েছে, তার ফল থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট। বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের জয়ের ধারায় কিছুটা রাশ পড়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙার সৌজন্যে। ঘটনা হল, এই ১৫টি স্কুলের প্রায় প্রতিটিতেই প্রার্থী দিয়েও একক ভাবে কোনও স্কুলেই জিততে পারেনি তৃণমূল। বরং অনেক স্কুলে কংগ্রেস-তৃণমূল ভোট কাটাকুটির কারণে আখেরে সুবিধা পেয়েছে বামফ্রন্ট। ১৫টি স্কুলের মধ্যে ৭টিতে নিজেদের দখলে থাকা পরিচালন সমিতিতে ফের ক্ষমতায় এসেছে ফ্রন্ট। আবার যে স্কুলগুলিতে ‘টাই’ হয়েছে, সেগুলির বেশিরভাগ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বামফ্রন্ট প্রভাবিত সংগঠনের সদস্য হওয়ায় সেখানেও পরিচালন সমিতি তারাই গঠন করতে পারবে বললে দাবি করেছে বামফ্রন্ট।
এই ফলাফলকে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার দাবি, “এই ফল প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনোভাবের পরিচয় নয়। সিপিএমের ইন্ধনেই সংগঠন না থাকা সত্ত্বেও কিছু স্কুলে ভোট কেটে সিপিএমকে জেতাতে প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস।” তৃণমূল নেতা নবেন্দু মহালি বলেন, “সার্বিক ভাবে আমাদের খারাপ ফল হয়নি। কারণ আমাদের দখলে থাকা স্কুলে হেরেছি, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। বরং কিছু স্কুলে জিতেছি।” কাশীপুর ও মানবাজারে ফল প্রত্যাশিত হয়নি বলেও মানছেন জেলা নেতৃত্ব।
জেলা সিপিএম সম্পাদক মণীন্দ্র গোপের বক্তব্য, “সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতিশ্রুতি শুনছেন। অচিরেই তাঁদের মোহভঙ্গ হচ্ছে। স্কুলভোটে তারই প্রভাব পড়ছে।” |
|
|
|
|
|