মাঠের মাঝে শালুক ফুল। জলবিহীন শালুককে ছুঁয়ে দেখার ভিড় যেন কমে না। হঠাৎ বিক্রেতা দুই পড়ুয়া চিৎকার করে উঠল,‘মাঠের মাঝে শালুক ফুল, নিয়ে যান বাড়ি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অবশ্য ভিড় পাতলা হল। কিন্তু বিক্রি কই? কাঁচুমাচু মুখে দুই পড়ুয়ার একে অপরের উদ্দ্যেশে প্রশ্ন,‘হলটা কী?’
|
পথ চলতেই হঠাৎ নজর। কাগজ পেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসা। বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম পেঁচা। লক্ষ্মী পেঁচা, হুতোম পেঁচা, মেঠো পেঁচা আরও কত কী? যেমন রং তেমন গড়ন। শুরু হল দর কষাকষি। দাসকল গ্রামের বিক্রেতা হরিসাধন মণ্ডল দর কমানোর পাত্র নন। ক্রেতা কলকাতা শহরতলির বাসিন্দা সঞ্জূদেবীও নাছোড়বান্দা। হুতোম পেঁচাই চাই তার। শেষে অবশ্য ক্রেতার আর্জি মেনে সঞ্জুদেবীর কোলেই উঠল হুতোম পেঁচা।
|
মেলা প্রাঙ্গণ তখন জনসমুদ্র। যদুভট্ট মঞ্চে গাইতে উঠেছেন প্রখ্যাত সুরকার-গায়ক বাপি লাহিড়ি। সঙ্গী বলিউড অভিনেত্রী রবিনা টন্ডন। মঞ্চে উঠেই মাইক্রোফোন হাতে স্মৃতিতে ডুব দিয়ে গায়ক বললেন, “মল্লরাজধানী এই বিষ্ণুপুরে বাবা-মার হাত ধরে বেড়াতে এসেছিলাম সেই ছেলেবেলায়। পাশেই জয়রামবাটি-কামারপুকুরে গিয়েছি মা সারদা ও রামকৃষ্ণের জন্মভিটে দর্শনে। এই প্রথম গাইতে এলাম বিষ্ণুপুরে।” দর্শকদের প্রশংসায় ভাসালেন দু’জনেই।
|
টেরাকোটায় চিত্রিত মন্দিরময় শহর হিসেবেই বিষ্ণুপুরের পরিচয় পর্যটকদের কাছে। স্থানীয় দোকানগুলি থেকে কেনাকাটার অন্যতম প্রধান সামগ্রীও টেরাকোটার কাজ। আর এই শহরের মেলাতেই সুদূর উত্তর দিনাজপুর জেলার হাটপাড়া টেরাকোটা আদর্শ গ্রাম থেকেও বিক্রির জন্য এসে গিয়েছে টেরাকোটার কাজ। ওই গ্রামের মহিলা শিল্পী মঞ্জুলা রায় বলেন, “এই শহরের টেরাকোটা কাজের খ্যাতি আমরা জানি। তবু গ্রাম থেকে এসেও আমাদের বিক্রি কম নয়, সাড়া পাচ্ছি।”
|
খড়ের চালার নীচে নানা আকৃতির লন্ঠন। ছোট-বড় হিসেবে নানা দাম। ২৫ থেকে ৮০০। হাঁক পাড়ছেন বিক্রেতা‘লোডশেডিং বাড়ছে চলে আসুন, চলে আসুন, হাতে নিন বিষ্ণুপুরী লন্ঠন। অন্ধকারে ভরসা জোগাবে।’ কলকাতা থেকে সস্ত্রীক মেলায় এসেছেন শোভন রায়। দরাদরি করতে-করতে বললেন, “দেখতে দারুণ। ঘর সাজাব।”
|
গোপেশ্বর মঞ্চে যখন লোকগীতির সুর ছড়াচ্ছেন এক শিল্পী, তখন গীতাঞ্জলি মঞ্চে বিষ্ণুপুরী ঘরানার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে মগ্ন কিছু শ্রোতা। তখনই দর্শকাসন থেকে আওয়াজ-‘ভূমি ব্যান্ড উঠেছে রামানন্দ মঞ্চে। ছুটে চল!” নিমেষেই অর্ধেক ওই দুই মঞ্চের আসন।
|