|
|
|
|
বনগাঁয় তৃণমূলের সঙ্গে কাজিয়া |
১০ দিনের জন্য পুরসভা বয়কট করলেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ |
কংগ্রেসের পথসভায় তৃণমূল কর্মীদের হামলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বনগাঁ পুরসভার দুই শরিক দলের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বনগাঁয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিভক্ত কংগ্রেস নিজেদের ঐক্যবদ্ধও করতে চাইছে।
বনগাঁ শহর কংগ্রেস কমিটির তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা অন্তত ১০ দিন পুরসভা বয়কট করবেন। এই সময়ে পুরসভার কোনও কাজে যোগ দেবেন না তাঁরা। দলের এই সিদ্ধান্তের কথা কাউন্সিলরদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন শহর কংগ্রেসের সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ। সোমবার থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে দলের তরফে জানানো হয়েছে। হামলার ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা না হলে পুরসভা থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন শহর কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক দেবী ঘোষাল ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কৃষ্ণপদবাবু বলেন, “প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, স্থানীয় ভাবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, দল তাতে সম্মতি দেবে।”
২০১০ সালের পুরভোটে ২২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বনগাঁ পুরসভায় কংগ্রেস জেতে ৫টি আসনে। তৃণমূলের হাতে আসে ৬টি আসন। সিপিএম পায় ১০টি। পুরভোটের আগে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট না হলেও পরে দুই দল যৌথ ভাবে পুরবোর্ড গঠন করে। চেয়ারম্যান হন তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য। ভাইস চেয়ারম্যান কংগ্রেসের কৃষ্ণা রায়। পরে এক নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। এই পরিস্থিতিতে কোনও কারণে কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করলে পুরবোর্ড ভেঙে যেতে পারে।
তবে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের নির্দেশ আগামী দশ দিন পর্যন্ত সব কাউন্সিলর মেনে চলেন কিনা, তার দিকে লক্ষ্য রাখছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, কংগ্রেস কাউন্সিলরদের সঙ্গে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের নানা বিষয়ে মতপার্থক্য এর আগেও দেখা গিয়েছে বনগাঁয়। দলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্পা মোহন্ত জানান, নির্দেশ পেয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “পুরসভার কংগ্রেস সভানেত্রী তথা ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণা রায় যা নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করব।” এ বিষয়ে কৃষ্ণাদেবী বলেন, “দলের চিঠি পেয়েছি। আমরা ৫ জন কাউন্সিলর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। তারপর আমাদের সিদ্ধান্তের কথা সভাপতিকে জানিয়ে দেব।”
অন্য দিকে, বনগাঁ শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর আঢ্য বলেন, “মানুষের রায়ে ওঁরা কাউন্সিলর হয়েছেন মানুষকেই পুর পরিষেবা দেবেন বলে। কোনও কাউন্সিলরের উচিত নয় পুরসভা বয়কট করা। তবে কাউন্সিলরেরা কী করবেন, তা ওঁদের বিষয়।”
প্রসঙ্গত, ২১ ডিসেম্বর বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকায় কংগ্রেসের পথসভার উপরে চড়াও হয় কিছু লোক। ভাঙচুর চলে। প্রহৃত হন শহর কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সাধন দাস-সহ কয়েক জন নেতা-কর্মী। কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীরা পরিকল্পনামাফিক ওই হামলা চালিয়েছে। শঙ্করবাবু বলেন, “রাজনৈতিক পথসভার উপরে হামলা চালানো দুঃখজনক ঘটনা। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নামে যে ভাবে ক্রমাগত ব্যক্তিগত কুৎসা ওই সভা থেকে করা হচ্ছিল, তা-ও ঠিক হয়নি। মনে রাখতে হবে, মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলাও বটে।” শঙ্করবাবুর দাবি, “সাধারণ মানুষই ওই কুৎসার প্রতিবাদ করেছেন। তৃণমূলের কেউ এই ঘটনায় যুক্ত নন।” ওই দিনের ঘটনায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা আবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন থানায়। পুরো বিষয়টির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওই ঘটনার প্রতিবাদেই সরব হয়েছে কংগ্রেস। ২২ ডিসেম্বর বৈঠক ডাকা হয়। দলীয় সূত্রের খবর, এই প্রথম বার ৫ জন কাউন্সিলর এক সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন। তবে হামলার ঘটনার পরে কৃষ্ণাদেবী ছাড়া অন্য কোনও কংগ্রেস কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে যাননি। বাকিরা ঘটনাটিকে কেবলমাত্র ‘দুঃখজনক’ বলেই দায়িত্ব সেরেছিলেন। কৃষ্ণপদবাবু জানিয়েছেন, ১০ দিনের জন্য পুরসভা বয়কট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে পুরসভা থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা হতে পারে। আপাতত পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করবেন তাঁরা। জানুয়ারি মাস থেকে কৃষ্ণাদেবী কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রতি মাসে বৈঠকে বসবেন। সেখানে পুরসভার কাজকর্ম ও দলীয় অবস্থান আলোচনা করা হবে। নির্দেশ না মানলে দলীয় স্তরে একতরফা ভাবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলেও ২২ তারিখের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। |
|
|
|
|
|