জাঁকালো শীতে কাঠের আভেনের ধার ঘেঁষে এক প্রবীণ। যে আভেনের রাক্ষুসে হাঁ-এ দফায় দফায় কেকের খামির চালান হচ্ছে।
তস্য গলি নবাব আব্দুর রহমান স্ট্রিটের আদ্যিকালের বাড়িটায় ঢুকতে গেলে সাবধান! পাথুরে মেঝে, দেওয়ালের গায়ে কেক সৃষ্টির ছোপ-ছোপ দাগ। দোতলায় উঠলেই স্ল্যাপস্টিক-কমেডির দৃশ্যের মতো একদলা মাখন বা ফেটানো ডিম হয়তো সোজা মুখে এসে পড়বে। শহরের কেক-রসিকদের তাতে কিচ্ছু যায় আসে না! ক্রিসমাসের ধ্রুপদী ফ্রুট কেক বা নিউ ইয়ার স্পেশাল ওয়ালনাট কেকের টানে এ সব ছোটখাটো অসুবিধের কে কবে পরোয়া করেছে। বড়দিনের মরসুমে মধ্য কলকাতায় সালদানহাদের ঠিকানায় তাই সারাক্ষণ গমগমে ভিড় লেগেই আছে।
ট্যাংরার শীল লেনে ভেরনিকা ওরফে আহ্লাদি রোজারিওদের বিশাল বাড়িতেও ব্যস্ততার শেষ নেই। সত্তর পেরোনো বৃদ্ধা ক’দিন আগেই পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও তাঁকে ঠেকানো যায়নি। রাশি-রাশি কেকের পাহাড় নিজে তৈরি করছেন। আত্মীয়-বন্ধু, কাছে-দূরের গির্জা থেকে শুরু করে পাশেই সেন্ট সেবাস্তিয়ান ডে স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষকদের জন্য সব উজাড় হয়ে যাবে। |
গোয়ার সালিগাঁও থেকে সালদানহারা এ শহরে এসেছিলেন ৮০ বছর আগে। ৭৮ বছরের ডেনজিল সালদানহার বাবা ইগনেশিয়াস ও মা উবেলিনা। ইগনেশিয়াস তুখোড় বেহালাবাদক। সে-কালে পার্ক স্ট্রিটের ব্যান্ড কিংবা ধর্মতলার গির্জার কয়্যারের চেনা মুখ। এই পরিবারের কেকের নাম-ডাকও তখন থেকেই। তখন বক্সম্যানদের মারফত বাড়ি-বাড়ি কেক ফিরি করা হত। এখন বহু নামজাদা স্কুল, অফিস থেকে শুরু করে চেনা-অচেনা লোকজন তাঁদের বাড়িতেই হত্যে দেয়।
ডেনজিল ও মোনার মেয়ে ডেব্রা সদ্য ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এখন কেক-কুকিজে নিবেদিত প্রাণ। তাঁর মেয়ে, লোরেটো কলেজের ছাত্রী আলিশাও মাকে সঙ্গত করছেন। সালদানহাদের ভক্তের তালিকায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনদের বাড়িও রয়েছে। বৌবাজারের বো ব্যারাকের বহু পরিবারের ঘরোয়া কেকেরও যথেষ্ট নাম-ডাক। সালদানহাদের রিচ ফ্রুট কেক, বাঙালি ক্রিশ্চান ভেরনিকাদেবীর নির্ভার ভ্যানিলাগন্ধী টি-কেক ছাড়াও এ সময়ে কলকাতার সম্পদ অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ঘরের ছানার কেক। বো ব্যারাকের ক্লারা চাও-সুইটি নীলদের মতো কেউ কেউ এই শিল্পে সিদ্ধহস্ত। নিতান্তই জলের দরে ফলে ঠাসা ছানার কেক চাখতে বো স্ট্রিটে মন্টু বড়ুয়ার চিলতে দোকানেও যাওয়া যায়! শহরে নামজাদা দোকানের অভাব নেই। কিন্তু রসনা তৃপ্তিতে এ সব ঘরোয়া কেকেরও কোনও জুড়ি নেই। |