ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর কাছে সোমবার নিজেদের পরিকল্পনা জমা দিল কিংফিশার। গত ২০ অক্টোবর এই বিমান সংস্থার লাইসেন্স সাসপেন্ড করার পরে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল, এই আর্থিক অবস্থার মধ্যে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে সংস্থা, তা নির্দিষ্ট করে না-জানানো পর্যন্ত ওই সাসপেনশন তোলা হবে না।
সোমবার দিল্লি থেকে ফোনে ডিজিসিএ-এর প্রধান অরুণ মিশ্র বলেন, “সবে পরিকল্পনাটি জমা পড়েছে। তার ভিতরে কী রয়েছে তা বিস্তারিত ভাবে আমরা জানি না।” তবে কিংফিশার যে ভারতের আকাশে আবার উড়ান শুরু করতে চায়, তা এই পদক্ষেপ থেকেই বোঝা যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
বহু দিন ধরে চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটে জেরবার কিংফিশার। দেনার পরিমান প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকারও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। তেল সংস্থা, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, অন্য ঠিকাদার সংস্থার কাছে বিশাল অঙ্কের দেনা নিয়েই সংস্থার মালিক বিজয় মাল্য বিলাসবহুল ভাবেই বিমান পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দেশ ছেড়ে বিদেশেও উড়তে শুরু করেছিল তাঁর বিমান।
কিন্তু, আর্থিক টানাটানির জন্য মাঝে বেশ কয়েক মাস ধরে কর্মীদের বেতন দিতে পারছিল না কিংফিশার। বেশ কয়েক মাস অপেক্ষা করার পরে শুরু হয় কর্মী অসন্তোষ। শেষে পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ারেরা কাজ বন্ধ করে দেন। এত দিন পর্যন্ত দূর থেকে সংস্থার উপরে নজর রাখছিল ডিজিসিএ। কিন্তু, কর্মী অসন্তোষে পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার কড়া অবস্থান নেয়। |
তার আগেই অবশ্য ভারতের বিমান সংস্থায় বিদেশি লগ্নিতে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দেয় কেন্দ্র। বিমান পরিবহণ শিল্পমহলের ধারণা, কিংফিশারের পুনরুজ্জীবনের পথ প্রশস্ত করতেই কেন্দ্র এই সবুজ সঙ্কেত দেয়। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত বিদেশি কোনও সংস্থা কিংফিশারে বিনিয়োগ করার কথা ঘোষণা করেনি। বিজয় মাল্যকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি শুধু জানান, আলোচনা চলছে। এর মাঝে মদ প্রস্তুতকারক সংস্থায় নিজের শেয়ার বিক্রি করে দেন মাল্য। সম্প্রতি তিনি ঘোষণা করেছেন, তিনি আলাদা করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঢালবেন বিমান সংস্থায়। কিন্তু, দেনা যেখানে ৭৫০০ কোটি টাকা, সেখানে ওই টাকায় কী হবে তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ারদের বিক্ষোভে ১ অক্টোবর থেকে কিংফিশারের উড়ান বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থা লক-আউট ঘোষণা করে। ৫ অক্টোবর ডিজিসিএ তাদের শো-কজ করে। তখনই জানতে চাওয়া হয়েছিল, পুনরুজ্জীবনের জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা নিচ্ছে কিংফিশার। শো-কজের জবাব দেওয়ার জন্য কিংফিশারকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সেই সময়সীমা পেরিয়ে যায়। কিংফিশারের তরফে আরও সময় চাওয়া হয়। শেষে শো-কজ করার প্রায় দু’মাস পরে ২৪ ডিসেম্বর সোমবার সেই পরিকল্পনা জমা দিল বিজয় মাল্যের সংস্থা। মাল্য নিজে এখন বিদেশে বলেই সংস্থা সূত্রের খবর।
৩১ ডিসেম্বর কিংফিশারের লাইসেন্স নবীকরণ করার কথা। অরুণ মিশ্র আগেই জানিয়েছিলেন, ৩১ ডিসেম্বরের আগে কিংফিশার যদি সন্তোষজনক জবাব দিয়ে গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা পেশ করতে পারে, তা হলে সাসপেনশনের নির্দেশ তুলেও নেওয়া হতে পারে। আর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ডিজিসিএ-কে সন্তুষ্ট করতে যদি কিংফিশার ব্যর্থ হয়, তা হলে লাইসেন্স পাকাপাকি ভাবে বাতিলের কথা বিবেচনা করে দেখবে কেন্দ্র। তাই, ৩১ ডিসেম্বরের আগে এই পরিকল্পনা জমা দেওয়াকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে।
৩১ ডিসেম্বরের পরে যাতে তাদের লাইসেন্স নবীকরণ হয়, তার জন্য কয়েক সপ্তাহ আগে আবেদন জানিয়েছিল কিংফিশার। তখনও বলা হয়েছিল, পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা জমা না-দেওয়া পর্যন্ত তাদের লাইসেন্স সংক্রান্ত কোনও বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। সম্প্রতি বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহও কলকাতায় এসে বলেছিলেন, “কিংফিশার যত খুশি সময় নিতে পারে। ওদের বিমান তো মাটিতেই বসে রয়েছে। ফলে, ধীরে-সুস্থে পরিকল্পনা জমা দিক।”
ইতিমধ্যে সংস্থা ছেড়েছেন বহু কর্মী। অনেকে অবশ্য এখনও দাঁতে-দাঁত চেপে পড়ে রয়েছেন। তাঁরা মে মাস পর্যন্ত বেতন পেয়েছেন। বিজয় মাল্য সম্প্রতি কলকাতায় এসে বলে গিয়েছেন, “আমরা সবাই প্রচুর পরিশ্রম করছি সংস্থাকে আবার দাঁড় করানোর জন্য। এত পরিশ্রম তো ব্যর্থ হতে পারে না।” |